মোড়ে মোড়ে পাহারা
মঙ্গলকোট শাসন করছে দুষ্কৃতীদের চোখরাঙানিই
সিপিএমের জমানায় ডাবলু আনসারি, এখন তৃণমূলের আজাদ মুন্সী। মঙ্গলকোট আছে মঙ্গলকোটেই।
যেখানে যে কোনও ভোটেই আসল নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে দুষ্কৃতীরা। পরিবর্তনের বাংলাতেও সেই নিয়মের পরিবর্তন হয়নি।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন যতই নিরাপত্তার আশ্বাস দিক, বর্ধমানের অন্যতম ‘সন্ত্রস্ত’ এলাকা মঙ্গলকোটে শনিবারও যা অবস্থা চোখে পড়েছে, তাতে বামেদের পক্ষে মনোনয়ন দেওয়া যথেষ্ট কঠিন। এমনকী স্থানীয় পুলিশকর্তারাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’। শুধু মঙ্গলকোটের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতেই মনোনয়ন জমার শেষ দিন পর্যন্ত এগ্জিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছে বর্ধমান জেলা প্রশাসন।
কিন্তু তাতে কী? এ দিন পশ্চিম মঙ্গলকোটের নিগন থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার পথে এগোতেই চোখে পড়ল, ব্লক অফিসের পাশে পুলিশ কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। সেই জায়গাটুকু এড়িয়ে মঙ্গলকোট মোড়, স্কুল মোড়, পিড়তলা মোড়ে, আটঘরা গ্রামের মুখে তৃণমূলের লোকজন দাঁড়িয়ে। গোটা এলাকায় একটাও লালপতাকা চোখে পড়েনি। প্রকাশ্যে নিজেকে ‘সিপিএম কর্মী’ বলার মতোও কাউকে পাওয়া যায়নি। দিনভর তৃণমূলের প্রার্থীরাই প্রায় একতরফা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। সিপিএমের লোকাল বা জোনাল সদস্যও বলেছেন, ‘দল আমায় প্রার্থী করতে চাইছে। কিন্তু দয়া করে আমার নাম লিখবেন না।’
আগাগোড়া কংগ্রেসের প্রভাবে থাকা পূর্ব মঙ্গলকোটে পরিস্থিতি এতটা খারাপ না হলেও, পশ্চিমে সন্ত্রাসের এই আবহ মোটেই নতুন নয়। যার অন্যতম কারণ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থান। উত্তরে অজয় পেরোলেই সন্ত্রাসের আর এক আঁতুড় কেতুগ্রাম। তার পশ্চিমে বীরভূমের নানুর, উত্তর-পূর্বে মুর্শিদাবাদের পাঁচুন্দি। পুলিশের ভাষায় এই গোটা এলাকাটাই ‘শ্যাডো জোন’ বা ধূসর এলাকা। যেখানে থানা বা জেলার সীমানা অস্পষ্ট হয়ে যায়, অর্থাৎ দুষ্কৃতীরা অপরাধ করে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ঢুকে স্বচ্ছন্দে গা ঢাকা দিতে পারে।

কড়া নিরাপত্তায় চলছে পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নপত্র
জমা দেওয়ার কাজ। শনিবার মঙ্গলকোটে। —নিজস্ব চিত্র
অতএব রাজ্যে শাসক পাল্টানোয় মঙ্গলকোটে পাল্টেছে শুধু ‘দাদা’র নাম। কয়েক বছর আগেও এলাকা শাসন করতেন সিপিএমের লোকাল কমিটির নেতা ডাবলু আনসারি। তাঁরই ‘কৃতিত্বে’ ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে মঙ্গলকোট সদর-সহ একাধিক পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করে সিপিএম। খুন-জখমের নানা অভিযোগে গত বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে বেঙ্গালুরু থেকে ডাবলুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন জামিনে ছাড়া থাকলেও তিনি এলাকায় ঢুকতে পারছেন না। সেই সুযোগে ডাবলুরই একদা ছায়াসঙ্গী আজাদ মুন্সী এখন এলাকায় ঘাসফুল ফোটাচ্ছেন। খুন-সহ একাধিক মামলার জেরে ডাবলুর মতো আজাদও এখন গ্রামছাড়া। কিন্তু ‘রিমোট’ তারই হাতে, তার বাহিনীই এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন মোড়ে শিবির করে থাকছে।
সিপিএমের নেতা-কর্মীরা এতটাই আতঙ্কিত যে কাশেমনগরে মঙ্গলকোট পশ্চিম লোকাল অফিসে ভোট নিয়ে বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা হাজির হতে পারছেন না। এক লোকাল সদস্য তথা লাখুরিয়া পঞ্চায়েতের সম্ভাব্য প্রার্থীর অভিযোগ, “প্রতিটি আসনে দু’তিন জন করে প্রার্থী ঠিক করা আছে। কিন্তু বাড়ি থেকে বেরোনোর উপায় নেই। তৃণমূলের দু’তিন জন বাড়ির সামনে অনবরত টহল দিচ্ছে। বেরোলেই খবর চলে যাচ্ছে।” এক জোনাল সদস্যের কথায়, “আমায় পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী করেছে দল। কিন্তু ব্লক অফিসে বা কাটোয়ায় মহকুমাশাসকের অফিসে যাব কী করে? ফোনও করা যাচ্ছে না। সব সময় আতঙ্কে রয়েছি।”
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য সৈয়দ বদরুদ্দোজার অভিযোগ, “তৃণমূলের লোকেরা বাস আটকে ভিতরে ঢুকে সিপিএমের সমর্থকদের খুঁজছে। বেশ কয়েক জনকে বাস থেকে নামিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।” মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের জেলা নেতা অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য দাবি করেন, “কোথাও কোনও গোলমাল নেই। সিপিএম প্রার্থী পাচ্ছে না বলেই সন্ত্রাসের গল্প বলে বাজার গরম করতে চাইছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার অমলবাবু দাবি করেন, “ঠিক ভোট হলে হারবে জেনেই তৃণমূল গুন্ডা নামিয়েছে। প্রশাসনের সাহায্য পেলে আমরা সব আসনেই মনোনয়ন দেব।”
প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে পারছে কোথায়? মঙ্গলকোটের ওসি দীপঙ্কর সরকার বলেন, “আমরা সব দলকেই পথ নির্দেশিকা-সহ মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ জানাতে বলেছি। সমস্ত রকম নিরাপত্তা দেব।”
নির্বাচন কমিশন মঙ্গলকোটকে পাল্টে দিতে পারে কি না, তা পরিষ্কার হয়ে যাবে কয়েক দিনের মধ্যেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.