জাপানি কাকা-ভাইঝির হাত ধরেই টোকিও পাড়ি দিতে চলেছে মণিপুরি সিনেমা। স্থানীয় বাজার নির্ভর মেইতেই চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে এ এক বৈপ্লবিক ঘটনা। কেবল জাপানই নয়, মোহেন নাওরেমের ছবি ‘মাই জাপানিজ নিস’-এর অনেকটা অংশের শ্যুটিং হবে তাইল্যান্ডে। ছবির শু্যটিং ও অ্যাকশন পর্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রাক্তন অস্ত্র ও বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ অ্যালফ্রেড জনসনের হাতে। গোটা উত্তর-পূর্বের ক্ষেত্রেই বিদেশে শুটিং হওয়া এটি প্রথম ছবি। বাজেটের নিরিখেও ‘মাই জাপানিজ নিস’ উত্তর-পূর্বে নজির গড়তে চলেছে।
এ বছর তিনটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র, একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ও একটি তথ্যচিত্রের হাত ধরে সাতটি রজতকমল ঘরে এনেছে উত্তর-পূর্ব। এর মধ্যে মণিপুরি ভাষায় সেরা চলচ্চিত্রের শিরোপা পায় অরিবামের ছবি ‘লেইপাকলেই’। পোলো খেলার উৎস ও ইতিহাসের ধারাকে পর্দায় ফিরিয়ে এনে অরিবামেরই ‘মণিপুরি পনি’ সেরা তথ্যচিত্র হিসাবে রজতকমল পেয়েছে। সত্যজিৎ রায়, অরিবাম, ভূপেন হাজরিকার ভক্ত মোহেন অবশ্য বলছেন, তিনি পুরস্কারের দৌড়ে নেই। কেবল মণিপুর ও উত্তর-পূর্বকে আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যেতে পারলেই তিনি খুশি।
ইম্ফল, লোকটাক, উখরুলকে কেন্দ্র করেই মণিপুরি ছবির ‘আউটডোর’-এ আনাগোনা। কিন্তু মোহেন নাওরেম ঠিক করেন তাঁর স্বপ্নের ছবি ‘মাই জাপানিজ নিস’-এর শু্যটিংয়ে মণিপুরকে জাপান সাজানো চলবে না। জাপানেই পাড়ি দেবে গোটা দল। ছবির গল্পের প্রেক্ষাপটে থাকছে উত্তর-পূর্বে মিত্রবাহিনী বনাম জাপানি সেনার যুদ্ধ। মোহেন জানান, মণিপুর, নাগাল্যান্ডের জমিতে হওয়া এই যুদ্ধের পিছনে লুকিয়ে থাকা বেদনার এক খণ্ডচিত্র সেলুলয়েডে আঁকার চেষ্টা করেছেন তিনি। যুদ্ধে যোগ দিয়ে আর ফিরে না আসা এক কাকার সন্ধানে তাঁর জাপানি ভাইঝির অনুসন্ধান-পর্বকে ঘিরেই ছবির গল্প এগোয়। প্রধান চরিত্রে জন্য তিনি লন্ডন নিবাসী জাপানি মডেল ইউ আসাদার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। প্রধান পুরুষ চরিত্রে থাকছেন লন্ডনেরই জুনিচি কাজিওকা। তাঁর মণিপুরি প্রেমিকার ভূমিকায় থাকছেন মণিপুরী অভিনেত্রী আবেনাও। বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা চালানো ছাত্রীর ভূমিকায় থাকছেন বালা। কাকার খোঁজে ভাইঝি আসাদা শেষ অবধি মণিপুরে হাজির হবেন। জানতে পারবেন, ভারতে জাপ সেনাদের বিচার ও দুর্দশার কাহিনী।
হঠাৎ এমন কাহিনী ভাবলেন কেন? মোহেন জানান, ২০১১ সালে জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামির পরে মণিপুরিরা যে ভাবে চাঁদা তোলেন এবং গত বছর পূর্বপুরুষদের কবরের সন্ধানে যে ভাবে জাপ-প্রতিনিধিরা গুয়াহাটির কবরখানায় খনন চালান-এই দু’টি ঘটনা থেকেই এই প্লট মাথায় আসে। পরিচালকের কথায়, “অনেকেই জানেন না, নেতাজির ডাকে মইরাং অবধি আসা ‘জাপানি আর্মি’-কে মণিপুরের গ্রামবাসীরা কতটা সাহায্য করেছিলেন। যুদ্ধশেষে জাপ সেনাদের চোখের জলে বিদায় দেন মণিপুরবাসী। |