|
|
|
|
কেলেঙ্কারি নিয়ে ধোনি নাকি ঠিক সময়ে মুখ খুলবেন
নিজস্ব প্রতিবেদন |
দেশে নীরব ছিলেন। বিলেতেও স্পট ফিক্সিং কাণ্ড নিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মুখ থেকে বিশেষ কিছু শোনা গেল না!
গুরুনাথ মইয়াপ্পনকে ঘিরে সর্বভারতীয় নাটকে বোর্ডে এন শ্রীনিবাসনের অবস্থা রীতিমতো সঙ্গীন। শুক্ল-পওয়ার-জেটলি জোটের বোর্ড প্রেসিডেন্ট নিয়ে প্রকাশ্য অসূয়ার পর এ দিন নতুন করে আরও দু’টো রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা থেকে শ্রীনির অপসারণের ডাক উঠে পড়ল। গভীর রাতে একটি চ্যানেলে বোর্ড কোষাধ্যক্ষ অজয় শিরকে পরিষ্কার বলে রাখলেন যে, ইস্তফা দেওয়া নিয়ে তিনি ভাবনাচিন্তা চালু করে দিয়েছেন। “আমি ইস্তফা দেওয়া নিয়ে ভাবতে শুরু করেছি। যা চলছে, যে ভাবে দেশের মানুষের কাছে বোর্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে পড়ছে, সেটা আমার সহ্য হচ্ছে না। কয়েক দিন ভেবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” সঙ্গে শিরকে আরও যোগ করেছেন, “এমন নয় যে সমস্যাটার সমাধান আমাদের হাতে নেই। সমাধান আছে। বোর্ডের চার দেওয়ালের মধ্যেই আছে। কিন্তু সেটা নিয়ে যে ভাবে এগোনো উচিত, এগোনো হচ্ছে না। আমার সঙ্গে বাকিদের ভাবনাচিন্তা না-ও মিলতে পারে। সে দিক থেকে আমি তো বলতে গেলে এখন অড ম্যান আউট।” |
|
কিন্তু তিনি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি তবু মনে করেন, টালমাটাল পরিস্থিতি নিয়ে এখনও মুখ খোলার সময় আসেনি! সময় এলে নাকি নিশ্চয়ই মুখ খুলবেন ভারত অধিনায়ক।
বৃহস্পতিবার বার্মিংহামে ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান প্রথাগত সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু করতে বসেছিলেন ধোনি। এবং শুরুতেই ভারত অধিনায়ক মনে করিয়ে দিলেন, মুম্বইয়ে যা করেননি তা এখানেও করবেন না। অর্থাৎ, স্পট ফিক্সিং কাণ্ড নিয়ে কোনও কথা বলবেন না। স্পষ্ট বলে দিলেন, “যদি আমি ভারতীয় সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে কিছু না বলি, তা হলে এখানে ওই সব ব্যাপার নিয়ে মুখ খোলারও কারণ নেই।”
কিন্তু তবু ছাড় মিলল কোথায়? কয়েকটা মামুলি প্রশ্নের পরপরই গুঁজে দেওয়া হয়েছে গড়াপেটা সংক্রান্ত এক-একটা তীক্ষ্ম তির। কখনও সরাসরি। কখনও পরোক্ষ ভাবে। এবং বিদেশি মিডিয়াকুল আর এমএসডি-র প্রশ্নোত্তরের পর্ব মোটামুটি এ রকম:
প্রশ্ন: ধরুন আপনি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতে নিলেন। সেক্ষেত্রে দেশবাসীর বিশ্বাস ফিরে পাওয়া যাবে বলে মনে করেন? চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ই কি বিশ্বাস ফিরে পাওয়ার একটা সুযোগ হতে চলেছে?
ধোনি: আমি বর্তমানে থাকতে ভালবাসি। কাল্পনিক কোনও পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ ভাবনাচিন্তা করা আমার পছন্দ নয়। বরং নিজের কাজটা ঠিক করে করতে চাই।
আর ভারতীয় ক্রিকেটের গর্ব, সম্মানটা চলে গিয়েছে বলে আমি মনে করি না। সেটা ধরে রাখার সুযোগ এখনও যথেষ্ট আছে। দেখুন, সমস্ত খেলাধুলোতেই কিছু নরম ধাঁচের লোক থাকে। ব্যাপারটা সবিস্তারে বলতে পারলে ভালই হত, কিন্তু এখন সঠিক সময় নয়। |
|
প্রশ্ন: একটু খুলে বলুন। আপনি কি আগের মতোই ঠান্ডা, রিল্যাক্সড আছেন?
ধোনি: আপনারা কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে আমার মুখ খোলানোর চেষ্টা করছেন। সময় এলে নিশ্চয়ই কথা বলব এটা নিয়ে। আর আমি, আমার টিম এখন এ সব থেকে দূরে থাকছি।
প্রশ্ন: ভারত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতলে কি দেশবাসীর বিশ্বাস ফিরবে?
ধোনি: কাল্পনিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে পছন্দ করি না
প্রশ্ন: আপনি কি সেই আগের মতোই কুল আছেন?
ধোনি: মনে হচ্ছে, আমার মুখ খোলানোর চেষ্টা করছেন আপনারা।
প্রশ্ন: আমরা বুঝতে পারছি না ফিক্সিং বিতর্কের পরেও কী করে আপনি এতটা রিল্যাক্সড?
ধোনি: সময় এলে আমি কথা বলব এটা নিয়ে।
প্রশ্ন: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় কি স্পট ফিক্সিং বিতর্ক চাপা দেবে?
ধোনি: আমি, আমার টিম এ সব থেকে অনেক দূরে আছি।
|
যার পরপরই বিভিন্ন সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলে দেখানো চালু হয়ে যায়, ভারত অধিনায়কের ‘সঠিক সময়’ কবে আসবে? কাছাকাছি সময়ে শ্রীনি-র বিদায় নিয়ে আলোচনা বৃহৎ থেকে বৃহত্তর হয়েছে। অসম ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট এবং গোয়া ক্রিকেট সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখর সালকর দু’জনেই পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের স্বার্থে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শ্রীনিবাসনের সরে দাঁড়ানো উচিত। গৌতম রায়ের কথায়, “বোর্ডের ভাবমূর্তির কথা মাথায় রেখে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত শ্রীনিবাসন নিজেকে সরিয়ে নিন। ব্যক্তিগত ভাবে এটাই আমার অভিমত।” আর শেখরের প্রশ্ন, “শ্রীনিবাসনের সরে দাঁড়ানো ছাড়া আর উপায় আছে? তোমার জামাই বেটিংয়ে জড়িয়েছে, তুমি নিজে সিএসকে-র সঙ্গে জড়িত, এই অবস্থায় কোন যুক্তিতে বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকতে পার তুমি?”
শুধু দুই ক্রিকেট সংস্থা নয়, বোর্ড প্রেসিডেন্ট-বিদায়ের ডাক এ দিনও বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এসেছে। ইডেনের সামনে বৃহস্পতিবার শ্রীনির কুশপুতুল পোড়ানো হয়েছে। প্রাক্তন বোর্ড সচিব জয়বন্ত লেলে বলে দিয়েছেন, “শ্রীনিবাসনের বোর্ড প্রেসিডেন্ট থাকার কোনও অধিকারই নেই। ওকে বাধ্য করা হবে সরে যেতে।” কলম্বো থেকে প্রাক্তন বিশ্বজয়ী শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক অর্জুন রণতুঙ্গা বলে দিয়েছেন, “আইপিএলে স্পট ফিক্সিং আর বেটিং কেলেঙ্কারি নিয়ে যা চলছে, তাতে আমি মোটেও আশ্চর্য নই। প্রথম আইপিএল থেকেই তো কিছু না কিছু ঘটতে দেখছি। কখনও বেটিং, কখনও স্পট ফিক্সিং, কখনও মাদক। আমার মনে হয় আইপিএল ভারতীয় ক্রিকেটকে কখনওই কিছু দেয়নি। আর ভারতীয় ক্রিকেটকে বিশ্বের সামনে এত কলঙ্কের মুখে পড়তেও কোনও দিন দেখিনি।” অন্য দিকে, দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে বলা হয়েছে, সিবিআই তদন্তের কোনও অনুরোধ বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আসেনি। দেশের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী সচিন পাইলট দাবি তুলেছেন যে, তদন্ত এমন ভাবে হওয়া উচিত যাতে ক্রিকেটের প্রতি দেশবাসীর বিশ্বাস ফেরে।
চ্যানেলে-চ্যানেলে এ দিনও চলেছে যে, শ্রীনিকে হঠানোর জন্য বোর্ডে ৩১টি ভোটের মধ্যে যে ২৪ ভোটের দরকার, তার মধ্যে ১৮টা ভোট নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। শ্রীনির পক্ষে নাকি পড়ে মোট ৭ ভোট। কিন্তু বাকি ছ’টা নিয়ে নাকি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তাই জরুরি সভা ডাকার (যার জন্য দশটা ভোট লাগে) মতো অবস্থা থাকলেও সভা ডাকা যাচ্ছে না ভবিষ্যৎ নিয়ে নিশ্চয়তা না পাওয়ায়।
আর সিএবি? শ্রীনি-র পক্ষে বা বিপক্ষে এখনও কোনও দিকে নেই। কিন্তু বাংলা ক্রিকেট সংস্থার কোনও কোনও উচ্চপদস্থ কর্তা একটা কথা বলে রাখলেন। শরদ পওয়ার শ্রীনিবাসন-বিরোধী জোটের নেতৃত্বে থাকলে, সে দিকে সিএবি সম্ভবত না-ও থাকতে পারে। কারণ ২০১১ বিশ্বকাপে ইডেনের ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ হারানো। সে সময় যে পওয়ার আইসিসি প্রেসিডেন্ট ছিলেন, এবং সিএবি-র উচ্চপদস্থ কর্তাদের কথায় পওয়ারের সে সময়ের নিশ্চেষ্টতাকে এখনও ভোলা যায়নি!
|
পুরনো খবর: টালমাটাল সময়ে কিছু বলুন, অধিনায়কের মুখে নীরব হাসি |
|
|
|
|
|