সম্পাদকীয় ১...
আমাদের সংগ্রাম
জীবন দ্বান্দ্বিক। রাজনীতি দ্বন্দ্বমূলক। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বাস্তবতাকে অস্বীকার করিয়া কোনও লাভ নাই। কিন্তু শুধু দ্বন্দ্বই থাকিবে, আর কিছু থাকিবে না, জনজীবনের প্রত্যেকটি কর্মকাণ্ডে অহোরাত্র কেবল সংঘাত চলিবে, আর কিছু চলিবে না— ইহা সুস্থতা ও স্বাভাবিকতার লক্ষণ নয়। পশ্চিমবঙ্গের জনজীবন দীর্ঘকাল যাবৎ রাজনীতির বশীভূত। বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনীতি নয়, ক্ষুদ্র দলতান্ত্রিক রাজনীতি। সেই রাজনীতির মূল মন্ত্রটি বহু দিন আগে বামপন্থীরা বাঁধিয়া দিয়াছিলেন, তাঁহাদের স্লোগান ছিল: লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই। তাঁহাদের কেতাবে এই আহ্বানের গভীর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা ছিল, আজও আছে। বাস্তব কেতাব নহে। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরা বাস্তবে দেখিয়াছেন, রাজনীতি এক নিরন্তর লড়াইয়ে পর্যবসিত হইয়াছে লড়াইয়ের জন্যই লড়াই করিতে হইবে। প্রবীণ বামপন্থী নায়করা আন্তরিক খেদ জানাইয়া থাকেন, তাঁহাদের দলের তরুণরা তাঁহাদের মতো লড়াইয়ের মধ্য দিয়া উঠিয়া আসেন নাই।
এই আক্ষেপ সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের কুলপতিগণ নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন, যে লড়াই-খ্যাপা মানসিকতাটি তাঁহারা পরম যত্নে বাংলার বুকে বপন করিয়াছিলেন, তাহা এই সমাজ এবং তাহার আশ্রিত রাজনীতির পরম ধর্ম হইয়া উঠিয়াছে এবং সেই ধর্মের যোগ্য উত্তরসাধক হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁহার অনুগামীরা। নিরন্তর লড়াইয়ের মাধ্যমে তাঁহারা ক্ষমতায় আসিয়াছেন। ক্ষমতায় আসিবার পরে দীর্ঘ দুই বৎসর অতিক্রান্ত হইয়াছে, তাঁহারা নিরন্তর লড়াই করিয়া চলিয়াছেন। এক হাতে সি পি আই এম, অন্য হাতে কংগ্রেস, তাহার পরেও ‘দুটি বই হাত মোর নাই রে’ বলিয়া দুঃখ করিবার পাত্র তাঁহারা নহেন, তাঁহারা অসীম তৎপরতায় ও অসামান্য দক্ষতায় নূতন নূতন প্রতিপক্ষ খুঁজিয়া লইতেছেন। আপাতত শাসক দল তথা সরকারের মহাযুদ্ধের প্রতিপক্ষ: নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের বন্দোবস্ত লইয়া কমিশনের সহিত তাঁহাদের লড়াই চলিতেছে। দীর্ঘ, নিরবচ্ছিন্ন, অনলস লড়াই। বামপন্থীদের ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী বলিতেই পারেন: আমাদের সংগ্রাম চলছে চলবে।
আপাতত লড়াইয়ের মূলে রহিয়াছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থা। ইহা নূতন বিতর্ক নহে। বস্তুত, যে প্রশ্নগুলিতে রাজ্য সরকার বনাম নির্বাচন কমিশনের দ্বৈরথ শুরু হয়, ইহা তাহাদের অন্যতম ছিল। কমিশন চাহিয়াছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া হউক, রাজ্য সরকার বলিয়াছিল, প্রয়োজন নাই, রাজ্যের বাহিনীই যথেষ্ট। ক্রমে অন্য রাজ্যের নিকট সাহায্য চাহিবার উদ্যোগ করা হয়। কিন্তু সংশয় দেখা দেয়, সেই উদ্যোগ এত দেরিতে হইয়াছে যে, অন্য রাজ্য হইতে যথেষ্ট নিরাপত্তা রক্ষী পাওয়া সম্ভব না হইতে পারে। অবশেষে রাজ্য সরকার অগত্যা কেন্দ্রের দ্বারস্থ হইয়াছে। ইহাতে বিস্ময়ের কিছু নাই, বিশেষত নির্বাচন সম্পন্ন করিবার বিষয়ে আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশের পরে। শেষ পর্যন্ত সেই চাহিদাও পূর্ণ হইবে কি না, তাহাই বরং বড় প্রশ্ন। ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী সন্ত্রাস এই সংশয় আরও বাড়াইয়া তুলিয়াছে। এই সমগ্র পরিস্থিতিটি স্পষ্টতই রাজ্য সরকারের নিজস্ব সৃষ্টি। এই প্রশ্নটি লইয়া, যেমন কমিশনের সহিত বিবাদের অন্য প্রশ্নগুলি লইয়াও, লড়াইয়ের কোনও প্রয়োজনই ছিল না। পঞ্চায়েত নির্বাচন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং একটি গণতান্ত্রিক কর্মসূচি। রাজ্য সরকারের দায়িত্ব সেই কাজটির সুষ্ঠু সম্পাদন নিশ্চিত করা। নির্বাচন কমিশন এই কাজে তাহার প্রধান সহায়। বস্তুত, এ ক্ষেত্রে কমিশনেরই চালকের আসনে থাকা উচিত, রাজ্য সরকারের সহায়কের ভূমিকা গ্রহণ করা বিধেয়। সমগ্র আয়োজনটিতে প্রথম হইতে শেষ অবধি কমিশনের সহিত সম্পূর্ণ সহযোগিতা করাই রাজ্য সরকারের পক্ষে স্বাভাবিক ও সঙ্গত। নিরাপত্তার জন্য কত রক্ষীর প্রয়োজন, রাজ্য তাহার কতটা দিতে পারিবে, বাকি অংশ কোথা হইতে আনা হইবে, তাহা অনেক আগেই আলোচনার ভিত্তিতে স্থির করা জরুরি ছিল। কমিশন বা কেন্দ্রীয় সরকার, কেহই এ ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের প্রতিপক্ষ নহে। কিন্তু— লড়াই লড়াই লড়াই চাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.