কপালে ভাঁজ গোয়েন্দাদের সে দিন প্রথম সারিতে
ছিলেন অনেক মহিলা

ংগ্রেসের ‘পরিবর্তন যাত্রা’য় নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার সময় মাওবাদীদের মধ্যে বহু মহিলা ক্যাডারের উপস্থিতি কপালে ভাঁজ ফেলেছে গোয়েন্দাকর্তাদের!
গোয়েন্দাদের সব থেকে বড় চিন্তার কারণ, মহিলাদের উপর চট করে কারও সন্দেহ হয় না। অস্ত্র ও ক্যামোফ্লেজ পোশাক ছেড়ে ভিড়ে মিশে গেলে তাদের চিনবে কে? দ্বিতীয়ত, মাওবাদীদের পুরুষ সদস্যদের তুলনায় এই মহিলা সদস্যরা সহজে শহর এলাকাতেও গা ঢাকা দিয়ে থাকতে পারে। এমনকী, আদিবাসী গ্রামগুলিতেও বাসিন্দাদের আত্মীয় সেজেও দীর্ঘদিন থেকে যেতে পারে। আর নতুন ‘রিক্রুট’ হওয়ায় তাদের ছবিও গোয়েন্দাদের কাছে নেই।
বস্তারের দরভায় গত ২৫ মে মাওবাদী হামলায় কংগ্রেস নেতা মহেন্দ্র কর্মা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নন্দকুমার পটেল, তাঁর ছেলে দীনেশ-সহ মোট ২৪ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যাচরণ শুক্ল-সহ ৩৩ জন। ওই হামলার সময় মাওবাদীদের প্রায় দেড় হাজার জনের দলে কমবয়সী অনেক তরুণ-তরুণীও ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের গোয়েন্দারা। বেশ কয়েক জন মহিলা ওই দিন স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মাওবাদীদের একেবারে প্রথম সারিতে ছিল। এই প্রথম সারির কাজ ছিল রাস্তার ঠিক ধারে জিরোম পাহাড়ের ঘন জঙ্গলের আড়াল নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের গাড়ির কনভয়ের উপরে সরাসরি গুলিবৃষ্টি করা।
এই পাহাড়ি রাস্তার এক দিকে উঠে গিয়েছে গভীর জঙ্গল। আর এক দিকে নেমে গিয়েছে জঙ্গলে ঢাকা গভীর খাদ। সকাল ১১টা নাগাদ ‘পরিবর্তন যাত্রা’র কনভয় এই রাস্তা ধরে সুকমা-র দিকে চলে যাওয়ার পরেই জঙ্গলের গভীরে থাকা মাওবাদীরা এগিয়ে আসতে থাকে রাস্তার দিকে। এই রাস্তায় লরি সমেত অনেক গাড়িই চলে। ফলে পুলিশ বা বাইরের লোকের নজর এড়াতে খুব দ্রুত ‘পজিশন’ নেয় তারা। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও তাদের হাতে ছিল গ্রেনেড।
কিন্তু, মাত্র ক’দিনের প্রস্তুতিতে তো এত বড় অভিযান চালানো যায় না? সেটা কী ভাবে সম্ভব হল?
জঙ্গলের আড়ালে থাকা আদিবাসী গ্রামগুলির লোকজন গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন, মাসখানেক ধরে তাঁরা এলাকায় বেশ কিছু নতুন মুখ দেখেছিলেন। তাদের মধ্যে মহিলারাও ছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসীরা তা নিয়ে মাথা ঘামাননি। বস্তারের প্রত্যন্তে যাঁদের সামান্য হলেও গতায়াত আছে, তাঁরা জানেন, আদিবাসী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের কাছে মাওবাদী স্কোয়াডের আনাগোনা আলোচনার কোনও বিষয়ই নয়। কারণ তাঁরা দীর্ঘকাল ধরেই মাওবাদীদের সেখানে দেখছেন। মনে করা হচ্ছে, নতুন ‘রিক্রুট’দের গোটা এলাকার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন মাওবাদী নেতৃত্ব। শুধু বড় অভিযান চালানোই নয়, সেখান থেকে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার রুটগুলি চেনানোও এই প্রশিক্ষণের একটা বড় অঙ্গ।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অভিযান যৌথ ভাবে চালিয়েছে মাওবাদীদের কেরলাপাল এরিয়া কমিটি এবং দরভা ডিভিশনাল কমিটি। কেরলাপাল এরিয়া কমিটির কাজে গত বছর এপ্রিল থেকেই মাওবাদী শীর্ষ নেতৃত্ব খুশি। কারণ, সুকমা-র তৎকালীন জেলাশাসক অ্যালেক্স পল মেননকে ‘সাফল্যের সঙ্গে’ অপহরণের দায়িত্বে ছিল এই কমিটি। আর সে সময় গোটা অভিযানের নেতৃত্ব ছিল দরভা ডিভিশনাল কমিটির সম্পাদক বিনোদের হাতে। এই বিনোদ আগে ছিল মালাঙ্গির এরিয়া কমিটির কম্যান্ডার। মালাঙ্গির এরিয়া কমিটির আওতাধীনে এক দিকে রয়েছে কিরণডুল, অন্য দিকে, বচেলি থেকে দন্তেওয়াড়া ও বস্তার জেলার মধ্যবর্তী কাটেকল্যাণ এলাকা।
প্রাথমিক তদন্তের পর গোয়েন্দাদের অনুমান, কংগ্রেস নেতাদের উপরে হামলার ছক তৈরি হয়েছে ওড়িশায়। কারণ, বস্তার জেলার লাগোয়া ওড়িশা সীমানা। তাঁদের ধারণা, এই অভিযানে ওড়িশার মালকানগিরি জেলা থেকেও লোকজন এনেছিল মাওবাদীরা। গোটা অভিযানের ছক কষেন মাওবাদীদের সাউথ রিজিওনাল এরিয়া কমিটির সম্পাদক গণেশ উইকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য রমান্না এবং গোপান্না ওরফে পঙ্কজ। রমান্না ও পঙ্কজ দু’জনেই অন্ধ্রপ্রদেশের লোক। কিষেণজির সঙ্গেও তাঁরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মাসখানেক ধরে দরভার কয়েকটি আদিবাসী গ্রামে মাওবাদীরা মিটিং করে। ওই সব মিটিংয়ে নতুন মুখরাও ছিল।
জিরোম ঘাঁটির ওই জায়গা বাছার পিছনেও ছিল মাওবাদীদের নিখুঁত পরিকল্পনা। সুকমা-জগদলপুর রাস্তার এই জিরোম পাহাড় ঘন বাঁশের জঙ্গলে ঢাকা। সঙ্গে প্রচুর শাল গাছও রয়েছে। আর গোটা জঙ্গলের মাটি ঘন ঝোপে ভরা। প্রায় দেড় থেকে দু’কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকায় কোনও মোবাইল টাওয়ারও নেই। যে জায়গায় হামলা হয়েছে, তার থেকে দু’দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে দরভা ও টোংপাল থানা। মোবাইল টাওয়ার না থাকায় কেউই ওই দু’টি থানায় ঠিক সময়ে যোগাযোগ করতে পারবেন না বলে ধারণা ছিল মাওবাদীদের।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মাওবাদীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রেখেছিল ম্যান প্যাক ওয়াকটকিতে। এই ওয়াকিটকির ফ্রিকোয়েন্সি পুলিশের ওয়াকিটকির ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। ফলে, পুলিশের আনাগোনার খবরও তাদের কাছে সহজেই পৌঁছে যায়। তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, এই দরভা এলাকাতেই গত ১১ মে দূরদর্শনের রিলে সেন্টার ওড়ানোর চেষ্টা করে মাওবাদীরা। ওই ঘটনায় তিন নিরাপত্তারক্ষীর মৃত্যু হয়। জখম হন এক জন। সেই ঘটনা থেকে যে পুলিশ প্রশাসন কোনও শিক্ষাই নেয়নি, ২৫ মে-র হামলাই তার সব থেকে বড় প্রমাণ।
ওই ঘটনার পরেও হুঁশ ফিরল না পুলিশের?
মাওবাদী দমন অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছত্তীসগঢ় পুলিশের এক কর্তার অসহায় মন্তব্য: “ইন্টেলিজেন্স যেমন আছে, কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্সও আছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো দ্বিতীয়টাই বেশি শক্তিশালী ছিল!”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.