জাতীয় সড়ক মেরামতের দাবিতে আজ, বুধবার পশ্চিম দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্স ও জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রায়গঞ্জ-শিলিগুড়ি রুটে বেসরকারি পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় নিত্যযাত্রীরা দুর্ভোগে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগের কথা আশঙ্কা করে দুটি সংগঠনের নেতাদের পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে সড়ক মেরামত করার অনুরোধ করা হয়েছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মালদহ ডিভিশনের প্রকল্প আধিকারিক মহম্মদ সইফুল্লা বলেন, “জমি অধিগ্রহণে সমস্যার কারণে জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ দীর্ঘদিন আটকে থাকায় স্থায়ীভাবে সড়ক মেরামত করা সম্ভব হয়নি। তবে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
মাধ্যমিকের ফল সবে বেরিয়েছে। এ সময়ে পরিবহণ ধর্মঘঠের ডাকে উদ্বিগ্ন ইসলামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, “যাত্রীদের দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে এভাবে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়াটা ঠিক নয়। এতে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়াদেরও দূর এলাকার কোনও স্কুলে ভর্তি হতে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |
গত বছরের জুন মাসে প্রবল বৃষ্টির কারণে ইটাহার থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৭৫ কিলোমিটার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহাল হয়ে পড়ে। অগস্ট মাসে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সড়ক মেরামতের কাজ হয়। অভিযোগ, এ বছর বৃষ্টি শুরু হতেই জাতীয় সড়কে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। করণদিঘি, রায়গঞ্জ, ইটাহার ও ডালখোলার বিভিন্ন এলাকার জাতীয় সড়কে পিচের চাদর উঠে গিয়ে একাধিক খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় প্রতিদিনই ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটের জেরে দুর্ভোগে পড়ছেন নিত্যযাত্রীরা। বেহাল জাতীয় সড়কে চলাচল করতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গত এক সপ্তাহে করণদিঘি, ডালখোলা ও রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ১৩টি ট্রাক ও দুটি বাস উল্টে জখম হয়েছেন ৭০ জন যাত্রী। এ ছাড়াও ৮টি বেসরকারি বাস বিকল হয়ে পড়েছে।
জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক চন্দ বলেন, “নিম্নমানের মেরামতের কাজ হয়েছে বলে ফের জাতীয় সড়ক বেহাল। বাস বিকল হচ্ছে। চরম লোকসানের মুখে পড়েছি। জেলা প্রশাসন ও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে গত দুমাস ধরে একাধিকবার স্থায়ীভাবে জাতীয় সড়ক মেরামতের দাবি জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই বুধবার ২৪ ঘন্টা রায়গঞ্জ-শিলিগুড়ি রুটে বেসরকারি পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আমরা জাতীয় সড়কে জোর করে কোনও গাড়ি আটকাব না!” চেম্বার অফ কমার্সের জেলা সম্পাদক জয়ন্ত সোম জানান, জাতীয় সড়কে দিনভর যানজট ও দুর্ঘটনা লেগে থাকায় ব্যবসায়ীরা পণ্য সামগ্রী আমদানি রফতানি করতে না পেরে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাই তাঁরাও আজ, পৃথকভাবে জেলায় বেসরকারি পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিতে বাধ্য হয়েছেন।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত পরিবহণ ধর্মঘটকে সমর্থন জানানোর কথা ঘোষণা করেছেন। জেলা বামফ্রন্টের সচিব অপূর্ব পালের অভিযোগ, “উন্নয়নের স্বার্থে আমরা পরিবহণ ধর্মঘটের বিরোধিতা করছি না।” জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য পরিবহণ ধর্মঘটের ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের গাফিলতির জেরেই জাতীয় সড়কের বেহাল দশা। এনবিএসটিসির রায়গঞ্জের ডিভিশনাল ম্যানেজার সুবীর সাহা বলেন, “রায়গঞ্জ ডিপো থেকে শিলিগুড়ি রুটে পাঁচটি সরকারি বাস যাতায়াত করে। বুধবার ওই রুটে অতিরিক্ত বাস চালানো হতে পারে।” |