তাকে ধর্ষণ করেছিল ছ’জন। এর পরে নাগাড়ে তাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল ওই যুবকেরা। মেয়েটি সাহস হারায়নি। থানায় অভিযোগ করেছে। ধরাও পড়েছে দোষীরা। সাজা অনিবার্য বুঝে দুই দোষী মঙ্গলবার বিচারকের এজলাসে দাঁড়িয়ে ধর্ষিতাকে বিয়ে করার ইচ্ছার কথাও জানায়। কিন্তু, পুরুলিয়া জেলা আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক-২ কোর্টের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সুতপা সাহা দোষী ছ’জনকেই গণধর্ষণের দায়ে দশ বছর কারাদণ্ডের সাজা দেন।
মামলার সরকারি আইনজীবী তপন মাহাতো জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাঘমুণ্ডি থানার বাড়েডি গ্রামে। ওই দিন গ্রামের এক কিশোরী তার বান্ধবীর সঙ্গে পাশের গ্রাম চড়িদায় যাচ্ছিল বাউল গান শুনতে। যাওয়ার পথে বান্ধবীকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ওই কিশোরীকে বাড়েডি গ্রামেরই ছয় জন যুবক রাস্তার পাশে একটি পুকুরের দিকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। শুধু তাই নয়, ঘটনা যাতে জানাজানি না হয়, তার জন্য কিশোরীকে ভয় দেখায়। ঘটনার কিছু দিন পরে বিজয়া দশমীর সময় ওই কিশোরী চড়িদা গ্রাম থেকে তার এক আত্মীয়ের সঙ্গে রাবণপোড়ার অনুষ্ঠান দেখে ফিরছিল। অভিযোগ, পথে ফের ওই যুবকেরা কিশোরীটিকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
তাতেও অবশ্য মেয়েটি দমেনি। তপনবাবু বলেন, “লোকলজ্জার জন্যই হোক বা ভয়েই হোক, প্রথম দিকে ওই কিশোরী মুখ খোলেনি। কিন্তু, পরে মনে সাহস সঞ্চয় করে ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর বাঘমুণ্ডি থানায় ওই ছয় যুবকের নামে সে অভিযোগ দায়ের করে।” অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গোরাচাঁদ মাহাতো, ফাল্গুনী মাহাতো, ভজন মাহাতো, নিমাই মাহালি, দুসু মাহালি এবং গুরনা লোহার ওরফে সোনুকে গ্রেফতার করে। এই ছ’জন বাড়েডি গ্রামের বাসিন্দা। বয়স ২১-২৪ বছরের মধ্যে। তদন্তের পরে পুলিশ ২০১১ সালের মার্চ মাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়।
মামলার বিচার শুরু হয় গত বছর অগস্টে। গণধর্ষণের ঘটনার পরে ওই কিশোরীকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়। তাকে মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে গিয়েও অভিযুক্তেরা কিশোরীর পিছু নিয়েছিল। হুমকিও দেয়। তা ওই কিশোরী বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিতে জানিয়েছে। এ দিন রায় ঘোষণার আগে বিচারক দোষীদের কাছে তাদের কিছু বক্তব্য আছে কি না, তা জানতে চান। ভজন ও গুরনা জানায়, তারা ওই কিশোরীকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। বিচারক প্রশ্ন করেন, দু’জনে কী করে বিয়ে করবেন? ওই দু’জন বলে, তাদের মধ্যে যাকে বেশি পছন্দ হবে, কিশোরী তাকেই বিয়ে করতে পারে। বিচারক কিছু না বলে রায় ঘোষণা করেন। সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে দোষীদের দশ বছর জেল ও প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন। অনাদায়ে আরও এক বছর জেল।
রাতে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া প্রত্যন্ত বাড়েডি গ্রামের বাড়ি থেকে মোবাইলে ধর্ষিতার কাকা বললেন, “আদালতের রায়ে আমরা খুশি। ভাইঝি এত দিন যে লড়াই চালিয়েছে, এটা তারই স্বীকৃতি।” আর বিয়ের প্রস্তাবের কথা জেনে সেই ভাইঝির প্রতিক্রিয়া, “প্রশ্নই নেই!” |