মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যাঁরা ভারতীয় অধিনায়কের সাংবাদিক বৈঠকের লাইভ টেলিকাস্ট দেখেছেন, তাঁদের আর বুঝতে কি অসুবিধা আছে যে, ভারতীয় ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় পুতুলটার নাম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি?
যে ভাবে স্পট ফিক্সিং নিয়ে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গোটা দেশের মিডিয়ার সামনে বসে রইল আমাদের ক্যাপ্টেন, সেই শরীরী ভাষা আর অভিব্যক্তিই বলে দিচ্ছিল, তাকে এই নিয়ে টুঁ শব্দটি করতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। কে বারণ করেছেন? আপনার পাশের বাড়ির বাচ্চা ছেলেটাকেও জিজ্ঞাসা করে দেখুন, সে-ও জানে এর উত্তর। আমি আর তা-ই সেই লোকটার নাম লিখছি না।
কয়েক দিন মাত্র আগেই নিজের গদি টলমল হওয়া সত্ত্বেও যে ভাবে তা সামলালেন। ভারতীয় বোর্ডের সদস্যদের মুখে কুলুপ এঁটে দিলেন একেবারে নিজস্ব ‘ক্যারিশমা’-য়। তাতে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন নিজের দলে অনেককে জুটিয়ে নিয়েছেন। নিজের টিম তৈরি করতে তিনি ওস্তাদ।
|
সারা দেশ যখন গড়াপেটা কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড়, তখন সুনীল গাওস্কর, কপিল দেবরা স্টুডিওয় নাচ-গান করছে। ক্রিকেটের টেকনিক নিয়ে জ্ঞান বিতরণ করছে। যেন কিছুই হয়নি, সব জলের মতো স্বচ্ছ, পরিষ্কার। নভজ্যোৎ সিধু স্টুডিওয় বসে বিশাল বিশাল প্রবাদ আওড়ায়, শের-শায়েরি করে, জীবন দর্শন নিয়ে কথা বলে। শ্রীসন্তরা গ্রেফতার হওয়ার পর ফিক্সিং নিয়ে এদের একটা কথাও বলতে শুনেছেন? বলবে কী করে? বোর্ডের টাকায় যে এদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভর্তি হচ্ছে। সানি-কপিল দেবরাই যখন চুপচাপ, তখন ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন যে, ভাল ছেলেটি হয়ে পুতুলের মতো বসে-বসে হাসবে, এটাই তো স্বাভাবিক। শ্রীনিবাসন তার ‘ইমিডিয়েট বস’। বস-এর নির্দেশ অমান্য করবে কে? ধোনির ঘাড়ে তো একটাই মাথা...
তা ছাড়া এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে নজরদারির জন্য রাখা হয়েছিল তামিলনাড়ু ক্রিকেট সংস্থারই মিডিয়া ম্যানেজার আর এন বাবা-কে। সে-ও তো চেন্নাই-কানেকশন। ভারতীয় ক্রিকেট যে এখন আপাদমস্তক চেন্নাই-কেন্দ্রীক, তার এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর কী হতে পারে?
কীর্তি আজাদের পর দেখলাম জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াও বোর্ড সভাপতির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। কিন্তু ফারুখ আবদুল্লা আবার বলছেন, কেন পদত্যাগ করবেন শ্রীনিবাসন? তিনি নিজে তো কিছু করেননি। কারও জামাই দোষ করলে সে কেন পদত্যাগ করতে যাবে? তাঁর কাছে অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে, ভাগ্নের অপরাধের জন্য তা হলে মামা পবনকুমার বনশলকে রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হল কেন? আসলে ভারতীয় ক্রিকেটে এখন শ্রীনি-কানুন চলে। সেই কানুনে নীতির কোনও স্থান নেই। পুরোটাই সুবিধাবাদের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে।
|
ক্রিকেট বিতর্ক... দিনভর |
• শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে কোনও বোর্ড সদস্যের প্রথম প্রকাশ্য জেহাদ। বিসিসিআই শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সদস্য জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলেন, “ক্রিকেটের স্পিরিটের স্বার্থে শ্রীনিবাসনের উচিত ইস্তফা দেওয়া।”
• শ্রীসন্তকে পাঠানো হল তিহাড় জেলে।
• বিন্দু দারা সিংহের পুলিশি হেফাজতে থাকার মেয়াদ বাড়ল ৩১ মে পর্যন্ত। বিন্দুর স্ত্রীর ক্ষোভ, “সবাই মিলে আমার স্বামীকে ফাঁসিয়েছে।”
• উত্তরপ্রদেশের কয়েক জন নামী ক্রিকেটারের নাম স্পট ফিক্সিং সন্দেহভাজনদের তালিকায়। পুলিশ নাম না জানালেও অদূর ভবিষ্যতে আরও কয়েক জনকে যে গ্রেফতার করা হবে, জানিয়েছে।
• সাংবাদিক সম্মেলনে ধোনিকে স্পট ফিক্সিং নিয়ে তিন প্রশ্ন। জবাবে ভারত অধিনায়ক নিরুত্তর। কেন এই পরিস্থিতিতেও আপনি মুখ খুলছেন না? স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারির প্রভাব কতটা পড়বে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে? ওই টুর্নামেন্টে বিশ্বাস ফেরানো যাবে দেশবাসীর? উত্তরে ভারত অধিনায়ক কখনও নির্বিকার। কখনও মুখে স্মিত হাসি। ধোনির মুখ না খোলা নিয়ে ক্রিকেটমহল উত্তাল।
• বোর্ডের পক্ষ থেকে গুরুনাথ-কাণ্ডের তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিশনের নাম ঘোষণা। রবি শাস্ত্রী নেই। আছেন দুই বিচারপতি এবং বোর্ড সচিব সঞ্জয় জাগদালে।
• রাতে টিভি চ্যানেলে বোর্ড কোষাধ্যক্ষ অজয় শিরকে-র বোর্ডেরই তদন্ত কমিশনের কার্যক্ষমতা নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ। বলেন, “ফৌজদারি ব্যাপারে এই কমিটি কিছু করতে পারবে না।” |
|