হার না মানা মানসিকতাতেই তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে হরিপালের বন্দিপুর পঞ্চায়েতের জামাইবাটি গ্রামের মহুয়া কোলে।
হরিপালের জামাইবাটি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক দিয়ে ৫৩৩ নম্বর পেয়েছে মহুয়া। সে চায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে। তার স্বপ্ন শিক্ষিকা হওয়ার। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে ফারাকটা মেয়েটি বিলক্ষণ বোঝে। ছেলেবেলায় বাবা মারা যান। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় দশা।
|
স্বপ্নসন্ধানী মহুয়া।
নিজস্ব চিত্র। |
মা যুথিকা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেন দারিদ্র্যের সঙ্গে। মেয়ের স্কুলেই মিড-ডে-মিলের রান্না করেন তিনি। কিন্তু তাতে কতই বা আয় হয়! বাকি সময়ে বাড়িতে সেলাই করেন। মহুয়া বলে, “মা কত কষ্ট করে পড়াচ্ছে, বুঝতে পারি। বড় হয়ে শিক্ষিকা হয়ে মা-কে দেখতে চাই। আমার মতো আরও যারা টাকার অভাবে পড়া চালাতে হিমশিম খায়, তাদের পাশেও দাঁড়াতে চাই।”
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্দীপ সিংহ বলেন, “মেয়েটির মধ্যে বড় হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা বইপত্র দিয়ে ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। তবে, বাকি খরচ চালানোর ওর মায়ের পক্ষে কঠিন।” তিনি বলেন, “আমাদের স্কুল থেকে সোনালি ঘোষাল নামে হতদরিদ্র পরিবারের আরও একটি মেয়ে ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। ওর জন্যও আমরা ভাবিত।”
যুথিকাদেবী অবশ্য মেয়েকে বলে দিয়েছেন, “যত কষ্টই হোক, পড়াশোনা চালিয়ে যা। প্রয়োজনে আরও পরিশ্রম করব।” যদিও, টাকার সঙ্কুলানের প্রশ্নে চুপ করে যান তিনি। জানান, এত দিন স্কুলের শিক্ষকেরা বইপত্র দিয়ে সাহায্য করেছেন। গৃহশিক্ষকেরা কম টাকায় পড়িয়েছেন। নিজে ঋণ নিয়েছেন মেয়েকে পড়ানোর জন্য।
কিন্তু এ বার কি হবে? এ বার যে আরও অনেক খরচ! এই প্রশ্নে মুখটা ছোট হয়ে আসে মহুয়ার। নুয়ে পড়া বাড়ির দাওয়ায় অপলক তাকিয়ে থাকে। |