সম্পাদকীয় ১...
ডুরান্ড লাইন ও ভারত
ফগানিস্তান হইতে আগামী বছর মার্কিন সেনাবাহিনীর স্বদেশে ফিরিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্তটি যে কেবল কাবুল-কেন্দ্রিক নয়, বৃহত্তর মার্কিন রণনীতিরই অঙ্গ, ওয়াশিংটনে জাতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট বারাক হুসেন ওবামা তাহা স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন। বস্তুত, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কোনও আন্তর্জাতিক যুদ্ধের যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং সেই ফ্রন্টের নেতৃত্বে মার্কিন অবস্থিতি লইয়াই প্রশ্ন তুলিয়াছেন তিনি। জর্জ ডব্লিউ বুশের রণনৈতিক বীক্ষা হইতে সরিয়া আসিয়া তিনি সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইকে মার্কিন নাগরিকদের নিরাপত্তা বিঘ্নকারী তৎপরতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীভূত করিয়াছেন। এ জন্য দূরনিয়ন্ত্রিত, স্বয়ংক্রিয় ড্রোন বিমান হানা অব্যাহত রাখার উপরেও জোর দিয়াছেন, যদিও তাহার সংখ্যা হ্রাস করার পক্ষপাতী মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হামিদ কারজাই ও তাঁহার কাবুলস্থিত সরকারের পক্ষে এগুলি সুসমাচার নয়। কারজাই সম্ভবত এ জন্যই ২০১৪ সালের আফগানিস্তানে নিজের অস্তিত্বরক্ষায় ভারত কতটা সাহায্য করিবে, তাহা বুঝিতে নয়াদিল্লি ছুটিয়া আসিয়াছিলেন। মার্কিন সেনারা চলিয়া গেলে পাক-সমর্থিত তালিবানরা যে তাঁহাকে ছিঁড়িয়া খাইবে, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তবে নয়াদিল্লি সঙ্গত কারণেই তাঁহাকে কোনও প্রতিশ্রুতি দেয় নাই।
অধিকাংশ মার্কিন ও বহুজাতিক নেটো বাহিনী ফিরিয়া যাইবার পরেও চৌদ্দো-পনেরো হাজার মার্কিন নৌসেনা কাবুলে থাকিয়া যাইবে। কিন্তু ইহা যে কাবুলের সরকারকে নিরাপত্তা দিতে পর্যাপ্ত নয়, তাহা কারজাই জানেন। জানে নয়াদিল্লিও। বিশেষত পুশ্তু, উজবেক, তাজিক প্রভৃতি জনজাতির মিশ্র ভূখণ্ড আফগানিস্তান যে কোনও একটি গোষ্ঠী ও তাহার নেতার দ্বারা শাসিত হইবার নয়, তাহাও সুবিদিত। গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, রসিদ দোস্তাম কিংবা মোল্লা ওমরের পাশাপাশি হাক্কানি গোষ্ঠীর জেহাদি জঙ্গি নেতারাও কাবুলের সিংহাসনের দাবিদার হইয়া উঠিতে পারে। শেষোক্ত এই গোষ্ঠীর মারফতই পাকিস্তান ও তাহার গোয়েন্দা সংগঠন আই এস আই আফগানিস্তানের নিয়ামক হইয়া উঠিতে চাহিবে। উপরন্তু মোল্লা ওমরও এই মুহূর্তে আই এস আইয়ের হেফাজতে। ভারত যে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করিয়া আফগানিস্তানের রাস্তাঘাট, রেলপথ, হাসপাতাল ও অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মাণ করিতেছে, এ জন্য নয়াদিল্লির প্রতি সাধারণ আফগান জনসাধারণের প্রভূত কৃতজ্ঞতা আছে। কিন্তু অতীতে সোভিয়েত ক্রীড়নক নাজিবুল্লার কট্টর সমর্থক থাকায় এবং দীর্ঘ কাল তালিবানের মৌলবাদী ইসলামি জমানার বিরুদ্ধাচরণ করায় ভারতের প্রতি তালিবানদের অবিশ্বাসও কম নয়। বিশেষত মোল্লা ওমরের মতো তালিবান নেতার প্রভাবশালী ‘কোয়েটা সুরা’ এখনও নয়াদিল্লিকে সন্দেহের চোখেই দেখিয়া থাকে। ইহার সমর্থন আদায় করিতে হইলে নয়াদিল্লিকে আফগানিস্তান সম্পর্কে পুরানো ধ্যানধারণার বাহিরে আসিতে হইবে।
মার্কিন ও নেটো বাহিনীর প্রত্যাবর্তন উপমহাদেশের উপর রণনৈতিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ভারত ও পাকিস্তানকে আরও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বীই করিয়া তুলিতে বাধ্য। এই প্রতিযোগিতায় ওয়াশিংটনের সমর্থন নয়াদিল্লি পাইবে। পাক দেওবন্দি মাদ্রাসা হইতে জন্মানো তালিবানকে উৎখাতের যুদ্ধে পরাস্ত হইয়াও ইসলামাবাদকেই তোষণ করিয়া চলা ওয়াশিংটনের পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের দুরধিগম্য তালিবান ঘাঁটিতে আল-কায়দা ও জেহাদি যোদ্ধাদের উপর মার্কিন ড্রোন হামলাও তো চলিতেই থাকিবে। উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণ মারফত যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের নবনির্মাণে নয়াদিল্লির ভূমিকাকে ওয়াশিংটন প্রথমাবধি সমর্থন করিয়া আসিয়াছে। ভারতের সামনে তাই এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ উপস্থিত। ডুরান্ড লাইনের পশ্চিমেও তাহার প্রভাবের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করার সুযোগ। এ জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন পরস্পর বিবদমান আফগান গোষ্ঠীগুলির নির্ভরযোগ্য ভরসাস্থল হইয়া ওঠা, তাহাদের বিশ্বাস অর্জন করা। এ জন্য অবিলম্বে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা চাই, স্বতঃস্ফূর্ততার উপর ছাড়িয়া দিলে হইবে না। পাকিস্তান হাক্কানি গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করিতেছে, অন্যরা কিন্তু এখনও পাকিস্তানকে বিশ্বাস করে না। নয়াদিল্লির সামনে সেটাই সুযোগ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.