আর পাঁচটা পড়ুয়ার মতো প্রতি বছর নতুন ক্লাসে উঠে নতুন বইয়ের গন্ধ শোঁকেনি সে। কিন্তু তাতে কী? আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশীর দেওয়া পুরনো বইয়ের ছাপার অক্ষরেই সাফল্যের গন্ধ পেত আসানসোলের ইস্টার্ন রেল স্কুলের অভিজিৎ দে। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় ৬১৭ নম্বর পেয়ে এখন সে পাড়াপড়শির চোখের মণি। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষায় আরও বেশি সফল হওয়াটাই এখন তার লক্ষ্য। যদিও সাধ আর সাধ্যের তফাৎটা এত বেশি যে আনন্দের মুহূর্তেও বিষাদ ঝরে পড়ে তার কথায়, “পড়াশোনার খরচ যে অনেক বেশি। পারব কি?” উদ্বিগ্ন দেখায় বাবা অরূপ দে আর মা সীমা দে-কে।
|
অভিজিৎ দে। —নিজস্ব চিত্র। |
আসানসোল বাজারে ফুটপাথে একটি জেনেরেটর আছে অরূপবাবুর। বিদ্যুৎ চলে গেলে আশপাশের দোকানে সেই জেনেরেটর চালিয়ে অস্থায়ী ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন তিনি। মাসে রোজগার মেরেকেটে চার হাজার টাকা। অরূপবাবুর আক্ষেপ, “সব সময়ে ছেলেকে বই কিনে দিতে পারিনি। খাতা পেন থেকে অন্যান্য জিনিসপত্র, তাও না। একটু ভাল খাবারও না।” সংসারের নূন্যতম প্রয়োজন মিটিয়ে যেটুকু অবশিষ্ট থাকে, তাই দিয়েই কোনওরকমে চালিয়েছেন ছেলের পড়াশোনা।” কিন্তু এত ‘না থাকা’তেও হেরে যায়নি সে। অভিজিৎ বলে, “দরকার নেই নতুন বই। আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পুরনো বই ধার চেয়ে এনে পড়াশোনা করেছি।” সে জানায়, তাঁর আগ্রহ দেখে গৃহশিক্ষকেরাও কেউ কম টাকায় কেউ বা আবার একেবারেই টাকা না নিয়ে পড়িয়েছেন তাঁকে। শিক্ষকেরা যখন যেভাবে তাঁকে ডেকেছেন, পড়াশোনার জন্য তাঁদের কাছে ছুটে গিয়েছে সে।
বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছা অভিজিতের। বড় হয়ে বিমানবাহিনীর পাইলট হতে চায় সে। তাঁর কথায়, “দেশের জন্য কিছু করার খুব ইচ্ছে আমার। ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির পরীক্ষায় বসার ইচ্ছে রয়েছে।” অরূপবাবুর চিন্তা, টাকার জোগাড় হবে কী ভাবে। তিনি বলেন, “সরকার সাহায্য করলেই একমাত্র ছেলের স্বপ্নপূরণ হবে। আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব।” |