বইপোকা (বিশেষ করে পাঠ্যবই) যাকে বলে, তা সে নয়। ক্রিকেট খেলতে খুবই ভালবাসে। দিনে ছ’ঘণ্টা পড়েই এ বার মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় ঠাঁই করে নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে বাঁকুড়ার ছাতনার বাসিন্দা অয়ন কর্মকার। ছাতনার চণ্ডীদাস বিদ্যামন্দিরের এই ছাত্র পেয়েছে ৬৭৫ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকার উপরের দিকেই রয়েছে। বাবা উত্তমকুমার কর্মকারের কাছেই সে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলি পড়েছে। উত্তমবাবু নিজে পুরুলিয়ার কাশীপুরের তালাজুড়ি হাইস্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক। ইংরেজি ও ভূগোলের জন্য আলাদা করে গৃহশিক্ষক ছিল অয়নের। অয়ন জানায়, অঙ্ক তার প্রিয় বিষয়। তার কথায়, “পড়ার নির্দিষ্ট সময় বলে কিছু ছিল না। তবে দিনে ঘণ্টা ছয়েক করে পড়েছি।” বিজ্ঞান নিয়েই উচ্চ শিক্ষা লাভ করে ভবিষ্যতে আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখে বাঁকুড়া জেলার এই কৃতী পড়ুয়া। |
অয়নের চেয়ে মাত্র এক নম্বর কম পেয়ে মেধা তালিকায় রয়েছে ইন্দাসের শাসপুর বিএনএস হাইস্কুলের ছাত্র শৌভিক দানাম। তার বাবা সৌমিত্র দানা বর্ধমানের একটি পলিটেকনিক কলেজে চাকরি করেন। গ্রামের বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে স্কুল। এত দিন সাইকেলে আসা যাওয়া করত। উচ্চ মাধ্যমিকে ছেলেকে বর্ধমানে ভর্তি করানোর ইচ্ছে তাঁর। এত ভাল ফল করায় গোটা গ্রামেই খুশির হাওয়া। স্কুলের শিক্ষক দীপক রায় বলেন, “এত ভাল রেজাল্ট আমাদের স্কুলে হয়নি। ও আমাদের সবাইকেই গর্বিত করেছে।” পঞ্চম শ্রেণি থেকে প্রতিটি ক্লাসে সেরা ছাত্র হওয়া শৌভিকের ভাল ফলের আশাবাদী ছিলেন শিক্ষকেরা। শৌভিকের কথায়, “ভবিষ্যতে কী হব এখনও ভাবিনি। উচ্চ মাধ্যমিকের পরে ঠিক করব। কোন দিকে যাব। তবে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে।” শুধু পড়া নয়, খেলাধুলোতেও সমান আগ্রহ এই কৃতীর।
জেলার কৃতী মেয়েদের মধ্যে একেবারের উপরের দিকে নাম রয়েছে বাঁকুড়া শহরের চাঁদমারিডাঙার বাসিন্দা সোনালি ধবল। পুয়াবাগানের বিবেকানন্দ শিক্ষা নিকেতনের এই ছাত্রীর প্রাপ্ত নম্বর ৬৭২। সোনালির বাবা প্রণবকুমার ধবল রেলে চাকরি করেন। পরীক্ষায় বরাবরই ভাল ফল করত সোনালি। প্রায় প্রত্যেক বিষয়ের জন্যই আলাদা করে শিক্ষক ছিল। অয়নের মতোই তারও প্রিয় বিষয় অঙ্ক। সোনালির লক্ষ্য, ডাক্তার হওয়া।
প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা মাধ্যমে ভর্তি হয়েও মাধ্যমিকে ৬৭১ নম্বর পেয়েছে বিষ্ণুপুরের অলকানন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মধুমিতা কুণ্ডু বলেন, “ইংরেজি মাধ্যম থেকে আসায় প্রথমে রেজাল্ট খুব ভাল ছিল না ওর। নবম শ্রেণি থেকে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে থাকে অলকানন্দা। টেস্টে তৃতীয় হয়। আর মাধ্যমিকের ফল তো সবাইকেই চমকে দিয়েছে!” বাবা অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় স্থানীয় রামানন্দ কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান। সাহিত্য চর্চা করেন মা অপর্ণাদেবীও। বাড়িতে ষোলো আনাই শিক্ষার পরিবেশ। অঞ্জনবাবু বলেন, “অলকা আমাদের একমাত্র মেয়ে। পড়াশোনার বিষয়ে কখনও চাপাচাপি করিনি।” অলকানন্দা ভবিষ্যতে পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে শিক্ষকতা করতে চায়।
|