সম্পাদক সমীপেষু...
নান্দীকার ও নাচনি
নাচনিদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য ‘নান্দীকার’ নাট্যসংস্থাকে সাধুবাদ জানাই। (কলকাতার কড়চা, ২০-৫) এঁদের দুর্ভাগ্যের ইতিহাস জনসমক্ষে বেশি করে উপস্থাপিত করার প্রয়োজন আছে। পুরুলিয়া ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের এক শ্রেণির অভাগিনি ও অসহায় মেয়ে ঝুমুর নাচের সঙ্গে নৃত্যকলা প্রদর্শন করে ‘নাচনি’ নামে অভিহিত হন। যাঁদের বাবা-মায়েরা অর্থের প্রয়োজনে ও বিয়ে দেওয়ার অক্ষমতা হেতু তাঁদের অল্পবয়সি কন্যাদের বিক্রি করে দিতেন নাচনি দলের প্রধানদের কাছে। যাকে বলা হয় ‘রসিক’। কন্যাটিকে উপপত্নী ও রক্ষিতার মতো গ্রহণ করে তাঁকে নাচে-গানে শিক্ষিত করে বিভিন্ন আসরে অনুষ্ঠান করিয়ে এবং যা টাকা আয় হয় সমস্তটাই রসিকের কাছে জমা হয়। বৈধ স্ত্রী হিসাবে এঁরা সামাজিক মর্যাদা পাওয়া দূরে থাক—বরং সকলের ঘৃণার পাত্রী। মারা গেলে নাচনিদের পায়ে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে গভীর জঙ্গলে ফেলে আসা হয়। এঁদের এই নিদারুণ বীভৎস জীবনের কথা প্রথম জানা যায় ২০০১ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত শ্রদ্ধেয় নিশীথ চক্রবর্তী মহাশয়ের সমীক্ষাভিত্তিক ‘নাচনি’ নামে এক ইংরেজি বই থেকে। উত্তর চব্বিশ পরগনার ইছাপুরের একটি ছোট্ট নাট্যদল ‘রবিবাসরীয়’ গত ৫০ বছর ধরে কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় অনেক নাটক প্রদর্শন করে প্রশংসা অর্জন করেছে। দলের প্রাণপুরুষ এবং নট ও পরিচালক শিশির সাহা নাচনিদের করুণ ও অসহায় জীবনের কথা নানা নাটকের মাধ্যমে মানুষের কাছে উপস্থাপিত করার দায়বদ্ধতা অনুভব করে নিশীথবাবুকে অনুরোধ জানান, বইটির নাট্যরূপ করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি অক্ষমতা প্রকাশ করায় শিশিরবাবু শেষ পর্যন্ত ইছাপুরেরই এক কৃতী নাট্যকার ও কবি প্রয়াত সত্যেন ভদ্র— যিনি নিজেও বহু পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেনতাঁকেই বইটির নাট্যরূপ দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ। সবে ভেলোর হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। তাই অক্ষমতা জানিয়ে তিনিও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এই ভাবে তিন-তিন বার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেও শিশিরবাবুর নাছোড়বান্দা মনোভাবে অবশেষে অতি কষ্টে নাট্যরূপ দিলেন। সেই নাটক ‘ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টার’-এর সহযোগিতায় পল্লব সেনগুপ্ত, দিব্যজ্যোতি মজুমদার, পশুপতি মাহাতো, অলোককুমার মাহাতো, বরুণকুমার চক্রবর্তী, দুলাল চৌধুরী-সহ বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে (৮-৯-২০০২) ‘নাচনি কথা’ নামে কলকাতার মধুসূদন মঞ্চে প্রথম অভিনীত হয়ে এত সাড়া ফেলে দেয় যে, তার পর ১৪-১-২০০৩ তারিখে কলকাতার শিশির মঞ্চে দ্বিতীয় বার মঞ্চস্থ হয়। দু’মাস পরে অর্থাৎ, ১৪-৩-২০০৩-এ তৃতীয় বার মঞ্চস্থ হয় ইছাপুরের রাইফেল ফ্যাকটরির অডিটোরিয়ামে। ১২-৫-২০০৩-এ পুরুলিয়ার তৎকালীন জেলাশাসক দেবপ্রসাদ জানা পুরুলিয়ার কেন্দা থানার ভরতডি গ্রামে ‘মানভূম সাংস্কৃতিক নাচনি সমিতি’ আয়োজিত নাচনিদের দ্বাদশ বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান করেন, ৬০ বছর বয়সি বিমলা বাঈয়ের নৃত্যরত ছবি-সহ তার সংবাদ পরের দিন প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে প্রভাবিত হয়ে নাচনিদের সম্বন্ধে আরও বিশদ তথ্য জানবার জন্য ১৯-৫-২০০৩ শিশিরবাবু পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নাচনিদের পাড়ায় গিয়ে তাঁদের দুরবস্থা সরেজমিন দেখে এবং বিমলা বাঈয়ের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ নানা প্রসঙ্গ আলোচনার পর জেলাশাসক দেবপ্রসাদ জানার সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠকের পর ফিরে এসে ওই নাটকের কিছু পরিমার্জন, পরিবর্তন করে নাটকটিকে আরও সমৃদ্ধ ও বাস্তবানুগ করে তোলেন। এর কয়েক দিন পর ২৪-৫-২০০৩ বাণী নিকেতন হাওড়ায়—২৬-১০-২০০৩ কলকাতার শিশির মঞ্চে—এবং ৫-৮-২০০৬ ইছাপুরের রাইফেল ফ্যাক্টরির অডিটোরিামে ষষ্ঠ বারের জন্য মঞ্চস্থ হয়। ‘রবিবাসরীয়’ সংস্থা অনেক সমস্যার মধ্যে ‘নাচনি কথা’ নাটকের মোট ছ’টি অনুষ্ঠান করতে পেরেছে। এখন সেই দায়িত্ব নান্দীকারের মতো ভারতবিখ্যাত নাট্যসংস্থা নিয়েছে, তাঁদের অভিনন্দন জানাই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.