এক তৃণমূল কর্মীর দেহ উদ্ধার হল কোচবিহারের ডাউয়াগিরির একটি জল ভর্তি নয়ানজুলি থেকে। তাঁর নাম নরেন্দ্রনাথ কার্জি (৫৮)। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নরেন্দ্রনাথবাবুর মুখে তৃণমূলের দলীয় পতাকা জড়ানো ছিল। তৃণমূলের অভিযোগ, রীতিমতো পরিকল্পনা করেই নরেন্দ্রনাথবাবুর মুখে দলীয় পতাকা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে।
|
নিহত তৃণমূলকর্মী নরেন্দ্রনাথ কার্জি। |
শনিবার দিনহাটায় তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের গাড়িতে হামলা হয়। তারই প্রতিবাদে ওই দিন রাতে ডাউয়াগুড়ি ও কলেরপাড় এলাকায় তৃণমূলের মিছিল আয়োজন করা হয়েছিল। সেই মিছিলেই যোগ দিতে গিয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথবাবু। মিছিল শেষে রাত ৯টা নাগাদ সাইকেলে করে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। রবিবার সকালে বাড়ির কাছেই ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া ওই নয়ানজুলি থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক পরীক্ষার পরে তাঁর নাক ও মুখে রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে। তদন্ত শুরু হয়েছে।” |
রবীন্দ্রনাথবাবুর দাবি, “কয়েক বছর আগেও নরেন্দ্রনাথবাবুকে সিপিএম মারধর করেছিল। তাই সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না।” সিপিএম অবশ্য ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমসের আলি বলেন, “উত্তেজনা ছড়াতে সিপিএমের নাম জড়ানো হচ্ছে। তা ছাড়া, ওই এলাকায় যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে, তা সকলেই জানেন। তাই তাঁদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই এই ঘটনা হয়েছে, এমন আশঙ্কা আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এলাকায় তৃণমূলের যে কোনও মিছিলের পরিচিত মুখ ছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি নরেন্দ্রনাথবাবু। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারও সন্ধ্যে নাগাদ মিছিলের কথা বলে তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। নরেন্দ্রনাথবাবু মোবাইল ব্যবহার করতেন না। তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে এদিন সকাল ৯টা থেকে প্রায় ১ ঘন্টা অসমগামী ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এলাকার তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। রবীন্দ্রনাথবাবু ডাউয়াগুড়িতে পৌঁছে কর্মী সমর্থকদের শান্ত করে সড়ক অবরোধমুক্ত করেন। নরেন্দ্রনাথবাবুর ছেলে সুভাষ কার্জি বলেন, “তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতেই হবে।”
রবীন্দ্রনাথবাবুর গাড়িতে হামলা ও গুলি ছোড়ার ঘটনায় যুক্ত অভিযোগে দেশি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ১ রাউন্ড গুলি সহ দুই ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, ধৃতেরা সক্রিয় বাম সমর্থক।
যদিও বামফ্রন্ট সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওই দিন রাতেই জেলায় বামেদের একাধিক পার্টি অফিস ও জিরানপুর এলাকায় কংগ্রেসের কয়েকজন সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুরের পাল্টা অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে তৃণমূল। |