চিকিত্সা পরিষেবা সংক্রান্ত নানা অভাব-অভিযোগ ঘিরে কিছু দিন আগেও নাজেহাল হতে হচ্ছিল বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। সেই সব সমস্যা দূর করতে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ঢেলে সাজা হচ্ছে চিকিত্সা পরিকাঠামো। রবিবারই হাসপাতালে ৭০ শয্যার নতুন প্রসূতি বিভাগের উদ্বোধন করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। গত কয়েক মাসে হাসপাতালে চালু হয়েছে ব্লাডব্যাঙ্কের রাত্রিকালীন ‘অন-কল’ ব্যবস্থা, রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা এবং অবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুত্ সরবরাহ ব্যবস্থা (ডেডিকেটেড পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম)। নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের ইচ্ছামতো ভাড়া নেওয়া। |
বনগাঁ হাসপাতালের নয়া প্রসূতি বিভাগ।—নিজস্ব চিত্র। |
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই হাসপাতালের পরিকাঠামোর আরও উন্নতি করা হবে। সিটি স্ক্যান যন্ত্র বসানো, আইসিসিইউ-ও তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের সর্বত্র ৫০ কিলোমিটার অন্তর সরকারি হাসপাতালে শিশুদের জন্য একটি করে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) তৈরি করা হবে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর এবং বিধায়ক তহবিল থেকে পাওয়া ৭১ লক্ষ টাকায় নতুন ভবনে প্রসূতি বিভাগটি চালু করা হয়েছে। আগে ওই বিভাগে মাত্র ২৫টি শয্যা ছিল। প্রসূতিদের চাপ বেশি হলে তাঁদের ভর্তি রেখে চিকিত্সায় সমস্যা হত। অনেক সময়ে দু’টি শয্যা জোড়া দিয়ে ৩-৪ জন মা-শিশুকে রাখা হত। এ বার সেই সমস্যা কমবে।
গোটা বনগাঁ মহকুমার কয়েক লক্ষ মানুষ এই হাসপাতালটির উপরে নির্ভরশীল। কিছু দিন আগেও রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং চিকিত্সা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভের শেষ ছিল না। প্রায়ই বিক্ষোভ, ভাঙচুর লেগে থাকত। চিকিত্সক নিগ্রহের ঘটনাও ঘটেছে। মানুষের সেই ক্ষোভ এখন অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। অসুস্থ নবজাতকদের জন্য ‘সিক-নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) তৈরির কাজও শেষ।
এ দিন প্রসূতি বিভাগের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসএনসিইউ-তে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসিয়ে ১৫-২০ দিনের মধ্যে তা চালুর ব্যবস্থা করার জন্য বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের দলীয় বিধায় বিশ্বজিত্ দাসকে অনুরোধ করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। বিশ্বজিত্বাবু বিধায়ক তহবিলের টাকায় একটি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা চাল ও সিটি স্ক্যান যন্ত্র বসানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিকাঠামো উন্নয়নে বহির্বিভাগে রোগীদের নাম নথিভুক্ত হচ্ছে কম্পিউটারের মাধ্যমে। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ শীঘ্রই করা হবে।
মোটের উপরে এই সব ব্যবস্থায় খুশি রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনেরা। কেউ কেউ অবশ্য প্রেসক্রিপশনে চিকিত্সকদের ওষুধের ‘জেনেরিক’ নাম না লেখা বা হাসপাতাল চত্বরে নেশাগ্রস্তদের দৌরাত্ম্য নিয়ে ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে হাসপাতালের সুপার গয়ারাম নস্কর জানিয়েছেন, হাসপাতালে ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান চালু হলে ওষুধ কেনা নিয়ে সমস্যা মিটে যাবে। বাকি অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
|
হাসপাতালের কাছে ভিডিও চাইল পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কাটোয়া |
হাসপাতাল থেকে ওষুধ পাচারের অভিযোগের ব্যাপারে সিসিটিভি ফুটেজ চাইল কাটোয়া থানা। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, শীঘ্রই ওই ফুটেজ পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। দিন কয়েক আগে একটি বেনামি চিঠি মারফত অভিযোগ পেয়ে স্টোররুম থেকে ওষুধ পাচার হয়েছে কি না, তার তদন্তে নামে কাটোয়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগে দুই ওষুধ সরবরাহকারী ও হাসপাতালের এক কর্মীর নাম ছিল। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়া হয়। তদন্ত কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ দেখে কর্তৃপক্ষকে পুলিশে অভিযোগ দায়েরের সুপারিশ করে। তবে প্রথমে দায়ের করা অভিযোগ নিয়ে চাপান-উতোর তৈরি হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে জানালেও পুলিশ দাবি করে, বিষয়টি শুধু লিখিত আকারে জানানো হয়েছে, অভিযোগ করা হয়নি। শনিবার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার থানায় নতুন করে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হচ্ছে।
|