একশো দিনের কাজে বেনিয়মের অভিযোগে পঞ্চায়েত প্রধান, নির্বাহী সহায়ক ও ব্লকের এক আধিকারিককে শো-কজ করলেন বিডিও। ঘটনাটি কাশীপুর ব্লকের সোনাথলি পঞ্চায়েতের। ওই অভিযোগের তদন্তে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে গরমিলের খোঁজ পেয়ে শো-কজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক প্রণব বিশ্বাস।
প্রশাসন সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজে খরচ করা নিয়ে সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতে বেনিয়ম হয়েছে বলে নজরে আসে। একশো দিনের কাজের দায়িত্বে থাকা ডেপুটি ম্যজিস্ট্রেট,সহকারি বাস্তুকারকে নিয়ে সোনাথলিতে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক। এক আধিকারিক জানান, লাড়া থেকে কুলতোড়া যাওয়ার রাস্তা নির্মাণে বরাদ্দ অর্থের থেকে বেশি খরচ করা হয়েছে। আবার পাবড়া গ্রামে সেচ কুয়ো তৈরি করা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। মহকুমাশাসক বলেন, “সোনাথলি পঞ্চায়েতের কিছু কাজে যে বিধি মানা দরকার ছিল, তা লঙ্ঘিত হয়েছে। তাই তাঁদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। সেচ কুয়ো যে উপভোক্তার জন্য নির্মান করা হয়েছে তিনি তা পেতে পারেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।” একই সঙ্গে ওই পঞ্চায়েত একশো দিনের প্রকল্পে টাকা খরচের ক্ষেত্রে মজুরী বাবদ খরচ ও নির্মাণ সামগ্রী বাবদ খরচের নির্ধারিত পরিমাণও লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মজুরী বাবদ মোট বরাদ্দের ৬০ ভাগ টাকা ও নির্মাণ সামগ্রী বাবদ ৪০ ভাগ টাকা খরচ করা যায়। প্রশাসন জানাচ্ছে, ওই পঞ্চায়েতের ২০১২-’১৩ অর্থবর্ষের ফিজিক্যাল পারফরম্যান্স রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, মোট টাকার মধ্যে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে মজুরী বাবদ, আর নির্মাণ সামগ্রী বাবদ খরচ হয়েছে ১ কোটি ৪১ লক্ষ। অর্থাত্, নির্মাণ সামগ্রীর জন্য বরাদ্দের প্রায় অর্ধেক টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ ওই ক্ষেত্রে মহকুমার গড় খরচ হয়েছে ২০-২৫ শতাংশ।
এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা, নির্মাণ সামগ্রীর ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলি বেশি খরচ করলে ওই প্রকল্পে ম্যাচিং গ্রান্ট দিতে আর্থিক সমস্যায় পড়ে যাবে রাজ্য সরকার। সে জন্য পঞ্চায়েতগুলি যাতে ওই খাতে খরচ ৪০ শতাংশের বেশি না করে সে ব্যাপারে বাড়তি নজর দেওয়া হয়। এ ছাড়াও নির্মাণ সামগ্রী খরচের ক্ষেত্রে দুর্নীতির সম্ভবনাও বেশি থাকে। মহকুমাশাসক বলেন, “কাশীপুরের অন্য পঞ্চায়েতগুলির ক্ষেত্রেও ওই খাতে খরচের অবস্থা ভালো নয়। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার ছিল ব্লক প্রশাসনের।” সোনাথলি পঞ্চায়েতের প্রধান গুরুপদ সিং সর্দারের দাবি, “এ ব্যাপারে যা বলার প্রশাসনকে জানাব।” তবে ব্লক ও পঞ্চায়েত সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কাজ করার সময়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনে অনেক সময় পরিকল্পনার বাইরেও কিছু কাজ করতে হয়েছে। সে জন্য খরচ কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া টাকার অভাবে জানুয়ারি থেকে সে ভাবে ওই ব্লক এলাকায় একশো দিনের কাজ কম হয়েছে। ফলে সামগ্রিক ভাবে নির্মাণ সামগ্রীর খরচ বেড়ে গিয়েছে। কাশীপুরের বিডিও তপন ঘোষাল বলেন, “মহকুমাশাসকের নির্দেশে ওই তিন জনকে শো-কজ করা হয়েছে। উত্তর পাওয়ার পরে মহকুমাশাসকের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, এ ক্ষেত্রে সন্তোষজনক জবাব না পাওয়া গেলে পরবর্তী কালে ওই পঞ্চায়েতের টাকা পাওয়ার সমস্যা হতে পারে। এমনকী বরাদ্দ টাকার সমস্তটাই মজুরী বাবদ খরচের নির্দেশও ওই পঞ্চায়েতকে দেওয়া যেতে পারে। |