বিকালে হরিণ শিকার করে লুকিয়ে রাখা হয়। শুরু হয় অপেক্ষা। সন্ধের পর জঙ্গল লাগোয়া চা বাগানের শ্রমিক বস্তি নিঝুম হয়ে আসে। লুকিয়ে রাখা মৃত হরিণটি সর্ন্তপণে নিয়ে আসা হয় শ্রমিক বস্তির এক বাড়িতে। মাঝরাতে শুরু হয় মাংস ভোজের তোড়জোর। রান্নার জন্য বিকেলে তেল, মশলাপাতি জোগাড় করে রাখা ছিল। মাঝরাতে পাশের একটি ঠেক থেকে আনা হল কয়েক বোতল চোলাইও। আর তাতেই ভণ্ড হল আসর। চোলাই খেয়ে উচু স্বরের কথায় এলাকার কিছু ব্যক্তি খবর পাঠায় বন দফতরের কাছে। রাত ১২টা নাগাদ উনুন থেকে ভাত নামানোর পরেই পরেই হঠাৎই হানা বনকর্মীদের। তাদের দেখে কয়েকজন পালালেও, কাটা মাংস-সহ গ্রেফতার তিন ব্যক্তি।
শনিবার রাতে ডুয়ার্সের বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গল লাগোয়া কোহিনূর চা বাগানে ঘটনাটি ঘটেছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন চা শ্রমিককে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৭ কেজি হরিণের মাংস এবং পাঁচটি চোলাইয়ের বোতল। মিনু ওঁরাও, বীরসা ওঁরাও, এন্থোনি লাকড়া গ্রেফতার হয়েছেন বলে বন দফতর জানিয়েছে। ধৃতদের সকলেরই বাড়ি কোহিনুর চা বাগানের গদ্দি লাইনে। |
কোহিনূর বাগানে।—নিজস্ব চিত্র। |
শনিবার রাতে মিনু ওঁরাওয়ের বাড়ির উঠোনে ভোজের আসর বসেছিল বলে জানা গিয়েছে। সে সময়ে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দক্ষিণ রায়ডাক রেঞ্জের বনকর্মীরা অভিযান চালায়। দক্ষিণ রায়ডাক রেঞ্জ অফিসার উৎপল দত্ত বলেন, “একটি পূর্ণ বয়স্ক বার্কিং ডিয়ার শিকার করা হয়। কোহিনূর চা বাগানের শ্রমিক লাইনে সেই হরিণটির মাংস রান্নার জন্য তোড়জোড় শুরুর খবর বন কর্মীদের কাছে পৌঁছয়। তার পরেই দফতরের তরফে অভিযান চালানো হয়। আরও কয়েকজন জড়িত রয়েছে জানতে পেরেছি। তাদের খোঁজ চলছে।”
ধৃতদের জেরা করে বন দফতরের কর্মীরা জানতে পেরেছেন, শনিবার বিকালে বক্সা ব্যঘ্র প্রকল্পের পূর্ব বিভাগের জঙ্গলে শিকারে গিয়েছিলেন পাঁচ জন চা শ্রমিক। তির ছুড়ে একটি হরিণকে মেরে লুকিয়ে চা বাগানের শ্রমিকে লাইনে নিয়ে আসেন তাঁরা। পরে রাত বেশি হলে শুরু হয় মাংস-ভাত-মদের ভোজের জন্য তোড়জোড়। রান্নার সময়ে তাঁরা উঁচু স্বরে কথাবার্তা বলতে থাকায় ওই এলাকার একাংশ বাসিন্দা ঘটনাটি টের পেয়ে যান। খবর দেওয়া হয় বন দফতরে। খবর পেয়ে বনকর্মীরা পৌঁছতেই কয়েক জন চা শ্রমিক উঠোন ঘেরার বেড়া ডিঙিয়ে পালিয়ে যায়। ঘরের ভেতরে মাংস রান্নায় ব্যস্ত থাকায় তিন চা শ্রমিক পালাতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে। তাদেরই আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন বন দফতরের কর্মীরা। |