মৃণাল সেনের ৯১তম জন্মদিনে প্রকাশিত এক অনবদ্য ইন্টারভিউ নিয়ে দেখছি ঝড় উঠেছে। অনেকের মতামত নিয়ে আবার প্রকাশ করতে হয়েছে ‘মৃণাল ভুবন ২’। অনেক কথা নিয়ে বিতর্ক চলছে কিন্তু ঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু মনে হল, মৃণালবাবুর উত্তমকুমারকে নিয়ে মন্তব্য। উত্তমকুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কের তুলনা। মৃণালবাবু তাঁর জীবনের প্রথম ছবি করেছিলেন উত্তমকুমার ও সাবিত্রীদেবীকে নিয়ে। সে ছবির কথা তিনি আজ আর মনে রাখতে চান না। আর কালের গর্ভে সে ছবি হারিয়েও গেছে। কিন্তু আর এক মহীরুহ সত্যজিৎ রায় এই মহানায়ককে নিয়ে দু-দু’টি ছবি করেছেন। ‘নায়ক’ ও ‘চিড়িয়াখানা’। দ্বিতীয়টি শ্রীরায়ের মতে, এক রকম বাধ্য হয়ে করা। কিন্তু প্রথমটি নিশ্চয়ই তাঁর একটি স্মরণীয় কাজ। আমাদের দেশে সত্যজিৎ-পুজো অনেক হলেও সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে ভাল বইয়ের খুব অভাব। যে দু’টি বই সত্যজিৎ গবেষকদের পড়তেই হয়, সেগুলির লেখক অ্যান্ড্রু রবিনসন ও মারি সিটন। রবিনসনের ‘দ্য ইনার আই’ গ্রন্থটি থেকে তাঁর ‘নায়ক’ ছবি করার অভিজ্ঞতার বর্ণনার একটা অংশ তুলে দিচ্ছি।
I never bothered to explain the character to him (Uttamkumar). So I never discovered whether he really understood the implications of the part. And it doesnt really matter whether he did or did not. There were a lot of things he did understand because they probably corresponded to his own life and his own experience. He was not very articulate as a person, actually. Perhaps he was conscious of the fact that he would not be able to talk at the same level as us, so he kept quiet. Some people who are stupid would come out with all sorts of stupid things. So I didnt discuss the psychology of of the part at all. I merely told him that this is what you have to do. Trust me and it should be all right.
Chapter 16, ‘The Hero (Nayak), 1966’: The Inner Eye |
মৃণালবাবু যে কথা বলেছেন, তার থেকে খুব বেশি তফাত পাওয়া গেল কি? আমার তো মনে হয় মৃণালবাবু তবু অনেক মোলায়েম করে বলেছেন। আর এটাও ভুললে চলবে না মৃণাল সেন বলেছেন একটি সংবাদপত্রে, বহুলপ্রচলিত হলেও যা আঞ্চলিক আর মানিকবাবু বলেছেন এক গ্রন্থকারকে, তা ছড়িয়ে গেছে সারা বিশ্বে।
খুব মজা লাগল এই দেখে যে, পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত অভিযোগ করেছেন যে, মৃণাল সেন সমালোচনা নিতে পারেন না। নিজের কাজকে সকলেই ভালবাসেন এবং কোনও স্রষ্টা সমালোচনা নিতে পেরেছেন, এমনটা আমার জানা নেই। ছোট মাপের শিল্পীরা বড়দের সমালোচনা নেন না, বাধ্য হয়ে সহ্য করেন। বড় মাপের শিল্পীদের সেই সহ্য করার দায় নেই। একে যদি অসহিষ্ণুতা দোষ বলা হয় তাতে মৃণালবাবুর মতোই দুষ্ট সত্যজিৎ রায় এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
প্রসঙ্গত, এই সমালোচনা করতে গিয়ে বুদ্ধদেববাবু একটি তথ্য দিয়েছেন যা ঠিক নয়। ‘উত্তরা’ ভেনিসে শ্রেষ্ঠ পরিচালকের সম্মান পায়নি। শ্রেষ্ঠ পরিচালনার খেতাবটির নাম ‘সিলভার লায়ন’। আর ‘উত্তরা’ পেয়েছিল ‘স্পেশাল ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড’।
মৃণাল সেন ও সত্যজিৎ রায়ের বিরোধ এবং লড়াই কারও অজানা নয়। ‘আকাশকুসুম’ নিয়ে একটি ইংরেজি সংবাদপত্রে দু’জনের সেই চাপানউতোর তো আজ ইতিহাসে পরিণত। সেই কাগজের সম্পাদককে একটা সময় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সে লড়াই বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সে লড়াই শুরু হয়েছিল সত্যজিৎবাবুর ভয়ঙ্কর আক্রমণাত্মক একটি চিঠি দিয়ে। সত্যজিৎ রায়কে ও রকম ভাবে আক্রমণ কিন্তু কোনও দিন মৃণাল সেন করেননি। বরঞ্চ এক বার সত্যজিৎবাবুর আক্রমণের বিনম্র জবাব দিয়েছিলেন তিনি এবং সত্যজিৎবাবুকে বলতে হয়েছিল, ‘আপনি তো আমাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন’। কাজেই বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর অসূয়া তত্ত্বটি বোধহয় খাটল না।
আর ঋত্বিক ঘটকের ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যকে মেলোড্রামাটিক বলাতে এত হইচই কেন? তাঁর বিপুল প্রতিভার প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, মেলোড্রামা ছিল ঋত্বিকের সবখানে। যখন নবান্ন নাটকে অভিনয় করেছেন তখনও বিজন ভট্টাচার্যের মতো পরিচালক তাঁর কাজকে অতি অভিনয় বলে সমালোচনা করেছেন। যে দৃশ্যটি নিয়ে কথা হচ্ছে, সেখানেও যদি ঋত্বিক আরও সংযম দেখাতে পারতেন চলচ্চিত্র শিল্পের বিচারে তা আরও উন্নত মানের হত। বস্তুত ওই রকম অসাধারণ সব ট্রিটমেন্টে পরিপূর্ণ একটি ছবি ওই শেষ দৃশ্যে এসে মার খায়। তাঁর এই মেলোড্রামা-প্রীতির জন্যই পশ্চিমে ঋত্বিক বারবার সমালোচিত। ‘সীমাবদ্ধ’-খ্যাত বরুণ চন্দের মুখে শুনেছি, সত্যজিৎবাবু নাকি বলেছিলেন, ‘ঋত্বিক ইজ অ্যান আনকাট ডায়মন্ড’। এ রকম অল্পকথায় একটা মানুষকে বর্ণনা করা সত্যজিৎ রায়ের পক্ষেই সম্ভব।
সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায়। সোনারপুর, কলকাতা-১৫০
|
ব্যাঙ্ক কাছেই আছে, মানুষ সচেতন নয়’ (২৯-৪) লেখাটিতে দুটি ছোট ভুল চোখে পড়ল। পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলাতেই এক মাইল অন্তর রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কের শাখা নেই। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় দশ-পনেরো মাইল দূরত্বে শাখা আছে। ব্যাঙ্কে জিরো ব্যালান্সে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা যায় না, একটা নির্দিষ্ট টাকা জমা দিতেই হয়। সরকারি কর্মীদের মাইনের অ্যাকাউন্ট, কিছু সরকারি প্রকল্পের জন্য মানুষকে অনুদান দেওয়া হয়, সেই অ্যাকাউন্টই জিরো ব্যালান্সে খোলা যায়।
তবু, পালস পোলিয়োর মতো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রচার করলে, সভা করলে, স্কুল-কলেজে গিয়ে পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট করলে, গ্রামে স্পট অ্যাকাউন্ট করলে, লোন স্যাংশন করলে মানুষ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্যোগী হবেন।
বীরেন সরকার। জেলা সম্পাদক, স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া পেনশনার্স অ্যাসোসিয়েশন
অরবিন্দনগর, বাঁকুড়া |