চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় কর্মরত অবস্থায় তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হল দুই ঠিকা শ্রমিকের। গুরুতর জখম হয়েছেন আরও তিন জন। রবিবার সকালের এই ঘটনায় কারখানা চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম হাসান আনসারি (২২) ও এক্রাম আনসারি (২৩)। মৃত ও আহতেরা ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। এ দিনের ঘটনার জেরে কারখানার আধিকারিকদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান কয়েক’শো শ্রমিক। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ও আরপিএফ নামানো হয়। ঘটনাস্থলে যান আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস। কারখানার তরফে মৃত ও আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা হল, তা জানতে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার কারখানার সাধারণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। সংস্থার পাঁচ নম্বর মেন শপের ‘ওভারহেড ক্রেন ও গার্ডার’ রঙ করার কাজ করছিলেন ১৩ জন ঠিকাশ্রমিক। হঠাৎই গার্ডারের উপর দিয়ে চলে যাওয়া ৩৩ হাজার ভল্টের বিদ্যুৎ পরিবাহী তারে তড়িদাহত হন ওই পাঁচ জন। |
ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। বাকিদের তড়িঘড়ি উদ্ধার করে চিত্তরঞ্জন রেলের কস্তুরবা গাঁধী হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তিনজনকে হাসপাতালের ‘আইসিইউ’ বিভাগে ভর্তি করা হয়।
কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, ওভারহেড ক্রেন ও গার্ডার রঙ করার সময় অবশ্যই উপরে ৩৩ হাজার ভোল্টের তারের বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করতে হয়। রবিবার উৎপাদন বন্ধ থাকে। তাই এই দিনটিই রঙ করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তের শেষে মনে হয়েছে, বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন না করেই রঙ করার কাজ চলছিল। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
দুর্ঘটনার খবর ছড়াতেই কারখানা চত্বরে কয়েকশো শ্রমিকের ভিড় জমে যায়। যে দফতরে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার আধিকারিক পিএন ত্রিপাঠীকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। |
শ্রমিকদের দাবি, এ দিন শ্রমিকেরা বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন করেই রঙের কাজ করছিলেন। কিন্তু মাঝপথে কেউ বা কারা বিদ্যুতের সংযোগ কোনও ভাবে জুড়ে দিয়েছেন। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। রেলওয়ে ওয়াকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শিশির মিত্রের বক্তব্য, দুর্ঘটনার পিছনে কারখানা কর্তৃপক্ষের গাফিলতিই দায়ী। লেবার ইউনিয়নের সম্পাদক অলোক ঘোষ ঘটনায় জড়িত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। কস্তুরবা গাঁধী হাসপাতালেও বিক্ষোভ ছড়ায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে কর্তৃপক্ষের তরফে কারখানা ও হাসপাতাল চত্বরে প্রচুর আরপিএফ ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আসানসোল থেকে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস। তিনি কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ বলেন, “এই দুর্ঘটনায় কর্মরত দুই ঠিকাশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।” তিনি জানান, দুর্ঘটনার কারণ জানতে কর্তৃপক্ষের তরফে বিস্তারিত খোঁজখবর শুরু হয়েছে।
|