|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়োনা |
|
এক সপ্তাহে সিক্স প্যাকস হয় না
চটজলদি সুঠাম শরীর পেতে বেশি বেশি সাপ্লিমেন্ট বা
স্টেরয়েড মানেই
কিন্তু সাঙঘাতিক বিপর্যয়। কী করবেন?
জানাচ্ছেন ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় |
|
ওয়ার্ক আউট রাতারাতি চেহারার ভোল পালটে দিচ্ছে— ঘটনাটাই তো অবাস্তব। তবে এখনকার জেনারেশন বোধহয় কিছুটা সে রকমই ভাবে। জিমের ট্রেনাররাও ঠিক বুঝে যান উনিশ কুড়ির জেনারেশন বড়ই ছটফটে। ওরা চায় কুইক মাসল গেন। আর ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট নেওয়াটাই এ ক্ষেত্রে সব চেয়ে সোজা রাস্তা।
ট্রেনারের কারিকুরি
সপ্তাহে কত দিন কোন বডি পার্ট ওয়েট ট্রেনিংয়ের কোন সিস্টেম-এ করতে হবে ট্রেনার সাহেব তা জানেন না। তবু বুঝিয়ে দেন ওয়ার্ক আউট জিমে এসে করতে পারলেই ভাল। নইলে দিনে এত বার প্রোটিন পাউডারটা খাওয়া চাইই চাই। আর রেডিমেড পাউডারের ডিব্বাটাও তিনিই সাপ্লাই দেন।
জন্মসূত্রে পাওয়া জিন, দীর্ঘ দিনের শরীর চর্চার সাধনা, ট্রেনারের ওয়েট ট্রেনিং প্রোগ্রাম লেখার দক্ষতা, পর্যাপ্ত খাবার— এতেই পেতে পারেন ম্যাজিক ফিগার। ফিটনেস গুরু পল চেক অন্তত তাই মনে করেন। এর বাইরে আউট অব দ্য বক্স ভাবা মানেই সাপ্লিমেন্ট বা স্টেরয়েডের অপব্যবহার।
পেশির বিল্ডিং ব্লকই প্রোটিন। হোয়ে প্রোটিন, ব্রাঞ্চড অ্যামিনো অ্যাসিড, এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্রিয়েটিন, গ্লুটামাইন ইত্যাদি নানান প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট এখন বাজারে বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়।
কাদের কতটা নেওয়া উচিত প্রোটিন পাউডার
মাস গেনার প্রোডাক্টস-এর এখন রমরমা বাজার। তবে জেনে নেওয়া ভাল যারা ব্যবহার করছেন, তাদের এটা ব্যবহার করা আদৌ উচিত কিনা।
একেবারে প্রফেশনাল বডি বিল্ডার হলে শরীরের প্রতি কেজি ওজনে ১.৯০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। লম্বা দৌড়ের অ্যাথলিট হলে ১.৩৪ গ্রাম আর সাধারণ মানুষদের .৮৯ গ্রাম হলেই যথেষ্ট। যারা প্রাকৃতিক উপাদান থেকে এই প্রোটিন নিতে পারছেন না তারা এক্সারসাইজ শেষ করার আধ ঘণ্টার মধ্যে প্রোটিন পাউডার নিতে পারেন শরীরের ওজন অনুযায়ী। দিনে এক বার ১-২ স্কুপ যথেষ্ট। পেশির বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে। সব থেকে ঝুঁকিহীন হল হোয়ে প্রোটিন। ক্রিয়েটিন, গ্লুটামাইন নিতে নিতে শেষমেশ স্টেরয়েডের দ্বারস্থ হয়েছেন, খুঁজলে এমন লোকজনও কম পাবেন না।
কেমন হতে পারে সাইড এফেক্ট
প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করলে হতে পারে কিডনির সমস্যা, পেটে ক্র্যাম্প। গ্লুটামাইন, মাস গেনার বা ব্রাঞ্চড অ্যামিনো অ্যাসিডের অতিরিক্ত ব্যবহার থেকে হতে পারে ডায়েরিয়া, খিদে না পাওয়া, কিডনি-লিভার সমস্যা, মুড স্যুইংও। |
|
একটা সত্যি ঘটনা
পেশিবহুল চেহারা বানাতে গিয়ে কেরলে দুই যুবকের মৃত্যু হয়। কারণ মাত্রাতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট আর স্টেরয়েডের ব্যবহার। এক টিভি চ্যানেলের সঞ্চালক এই প্রসঙ্গে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত সেলিব্রিটি ট্রেনারকে জিজ্ঞেস করেন জিমের ট্রেনারদের কি ক্লায়েন্টদের সাবধান করা উচিত নয় সাপ্লিমেন্ট-এর ব্যবহার থেকে? সেলিব্রিটি ট্রেনার-এর উত্তর ছিল, সাপ্লিমেন্ট তো বিপজ্জনক নয়! আর স্টেরয়েড তো ডাক্তাররাও ব্যবহার করেন। উপস্থিত ডাক্তার বলেন সে তো জীবনদায়ী ওষুধ হিসেবে বা আঘাতের জন্য। সুস্থ মানুষের কোন কাজে লাগে এটা? সেলিব্রিটি ট্রেনারের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, ওঁরা প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট আর স্টেরয়েডের ওপর কতটা নির্ভর করেন।
কাজেই সাপ্লিমেন্ট বেচে ট্রেনার মশাই কমিশন পান, মুনাফা লাভ করে কোম্পানি আর ঠিকঠাক মাসল গেন হয় ক্লায়েন্টদের।
প্রাকৃতিক উপাদানের বিকল্প নেই
একশো বছর আগে কোনও সাপ্লিমেন্ট ছিল না। ফিটনেস গুরু পল চেক বলছেন ডিমের সাদা অংশ, চিকেন, দুগ্ধজাত খাবার, ওটস, কাজু, রাজমা, ছোলা, সয়াবিন, ভুট্টা, ডালিয়ার মতো খাবার থেকে পেশির জন্য জোগান দিন। সাপ্লিমেন্ট নিলে টারজান হওয়া যায় এটা হল আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর রমরমা হবার প্রচার।
স্টেরয়েড ব্যবহার করে অকালে বন্ধ্যত্ব, টাক পড়া, ভারী গলা, কিডনি লিভারের সমস্যা, মেয়েদের পুরুষালি ভাব ইত্যাদি ডেকে আনার চেয়ে বরং প্রাকৃতিক উপাদানে ভরসা রাখাই ভাল।
ওয়েট লস-এর ফাঁদে
শুধু পেশিই নয়, ওজন কমাতে স্লিমিং পিল, ফ্যাট বার্নারের মতো বাজার চলতি জিনিস ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দিতে পারে অসহ্য মাথা যন্ত্রণা, রাতে ঘুম কমে যাওয়া, অ্যাসিডিটি বা গা-বমির মতো সমস্যা।
যেখানে বারে বারে অল্প অল্প করে খেয়ে আপনি বিপাকের হারকে বাড়িয়ে আর ওয়ার্ক আউট করে ওজন দীর্ঘমেয়াদি ভাবে কমাতে পারেন, সেখানে ফ্যাট বার্নার খেয়ে সারা দিন উপোস করে থাকার কী মানে? বেশির ভাগ ওজন কমানোর পিলই নাকি দারুণ কাজ করে! গবেষণা যদিও তা প্রমাণ করে না। তাই ভুলের ফাঁদে পা দেবেন না।
ভাল দেখা নয়, ভাল থাকা
বাইরে সাইজ জিরো আর ভেতরে হরমোন-এনজাইম পাকিয়ে দফারফা। মাথা ধরা আর গা-বমিতে জীবন অতিষ্ঠ। নিয়ম করে সপ্তাহে ৫-৬ দিন ওয়ার্ক আউট করুন, বিশেষ করে ওজন নিয়ে ব্যায়াম। সারা দিনের খাওয়াকে সাত-আট ভাগে ভেঙে নিন। ব্রেকফাস্ট ভারী হলেও ডিনার হোক একদম হালকা। খাওয়ার তালিকায় থাক ফ্রেশ-ফ্রুট, শাকসব্জি, বয়েলড চিকেন। |
|
|
|
|
|