|
|
|
|
তারাবাজি |
মগজাস্ত্রের কারবারি
তবে তাঁরা কেউ চারমিনার বা চুরুট খান না। রজনী সেন রোডে বা
হ্যারিসন রোডের
মেসবাড়িতেও থাকেন না।
থাকেন না বেকার স্ট্রিটেও। তা হলে
বাস্তবের
ফেলুদা-ব্যোমকেশদের জীবনটা ঠিক কেমন? খোঁজ নিলেন সংযুক্তা বসু |
ভূত নিয়ে বাংলা ছবির পাশাপাশি এ বার শুরু হয়েছে গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ছবির হুজুগ।
ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে একই সঙ্গে ছবি করছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ ও অঞ্জন দত্ত। অন্য দিকে বছর বছর ফেলুদা যেমন আছে তেমনই সম্প্রতি মুক্তি পেল সমরেশ মজুমদারের অর্জুন গোয়েন্দাকে নিয়ে সিনেমা। সমরেশ বসুর গোগোল থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু, কেউ আর বাদ নেই বড় পর্দায়।
এমনকী বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালকও গোয়েন্দার জীবনের রোজনামচা নিয়ে একটি ছবি তৈরি করছেন। নাম ‘আনোয়ার কা আজব কিসসা।’
এখানে একটা প্রশ্ন। গল্পের গোয়েন্দারা যেমন হন, বাস্তবের গোয়েন্দারাও কি সেই রকমই চমকপ্রদ? বুদ্ধদেব বললেন, “গোয়েন্দার জীবন আমাদের সাধারণ মানুষের মতোই। আমাদের মতোই গৃহস্থ তাঁরা। কোথাও লার্জার দ্যান লাইফ নয়। আমি অনেক গোয়েন্দাকে দেশে বিদেশে মিট করেছি, সকলেই আদতে আমজনতার ভিড়ে মিশে থাকা মানুষ।’
তা হলে গোয়েন্দা গল্প নিয়ে এত ছবি হয় কেন? ব্যোমকেশ নিয়ে তৃতীয় ছবির পরিচালনা চলাকালে পরিচালক অঞ্জন দত্ত জানালেন, “আমি কলকাতার গ্লোব ডিটেকটিভ এজেন্সিকে নিয়ে একবার একটা তথ্যচিত্র করেছিলাম। বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। এই সব গোয়েন্দা সাধারণ তদন্ত করতে গিয়ে বড় রহস্যের কিনারা করে ফেলেন অনেক সময়। সেটাই তাঁদের মহিমা। সাধারণ হয়েও তাঁদের জীবন রোমাঞ্চকর। তবে উপন্যাসের গোয়েন্দাদের গল্প আর বাস্তবের বাঙালি গোয়েন্দাদের চালচলনের মধ্যে অনেক তফাত। বাস্তবের গোয়েন্দার সেই ক্যারিশমা নেই, যা ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কিরীটী রায় থেকে শার্লক হোমসের আছে। তাঁদের জীবনের পরতে পরতে যে হাড়হিম করা ঘটনা, এমনটা সচরাচর বাস্তবের গোয়েন্দাদের জীবনে হয় না। লেখকের কল্পনার রঙে-রসে জারিয়ে তাঁরা অসাধারণ বলেই তাদের নিয়ে ছবি হয়। বাস্তবের গোয়েন্দাদের তৈরি হতে হয় নিজেদের সাধারণ জ্ঞান খাটিয়ে। তাঁদের চেহারা অনেক সময় নায়কসুলভ না হলেও, পদে পদে দুঃসাহসের পরিচয় দিতে হয়। আর কথায় কথায় তাঁরা সিগারেট বা চুরুট খান, এমনটাও নয়।”
কেন তাঁরা গল্পের চরিত্র থেকে আলাদা? সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের অফিসে বসে ডিটেকটিভ ব্যুরো সংস্থার কর্ণধার সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “বইয়ের গোয়েন্দাদের সাধারণত পুলিশরা খুব সমীহ করে চলে। কিন্তু বাস্তবে সেই সম্মান আমরা পাই না। অনেক সময় পুলিশের সাহায্য না পাওয়ার দরুন কিছু কিছু কেসের সম্পূর্ণ তদন্ত হয় না।” |
তীক্ষ্ণ নজরদারি। ‘আবার ব্যোমকেশ’ |
বিভিন্ন ডিটেকটিভ সংস্থায় ঢুঁ মেরে জানা গেল সাধারণত বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর গুণাগুণ ও পরিচয় যাচাই, বিয়ের পর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া স্বামী-স্ত্রীর গতিপ্রকৃতি লক্ষ করে সত্য উদ্ঘাটন করা, বিভিন্ন কোম্পানির আইনগত তদন্ত, জাল চেক সইয়ের তদন্ত, নিরুদ্দেশ ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা। এই সবই এখন ডিটেকটিভদের কাজ। ইদানীং কালে সব চেয়ে বেশি চলছে পরকীয়া প্রেমের তদন্ত। মেয়েরাই এখন গোয়েন্দা অফিসের সব চেয়ে বড় ক্লায়েন্ট। ‘সোনার কেল্লা’র বা ‘পথের কাঁটা’র মতো রোমহর্ষক কেস এই সব গোয়েন্দার হাতে আসে না বললেই চলে।
“তবু যে কাজ আমরা করি, তাতেও প্রাণের ভয় আছে, ঝুঁকি আছে। সেই উত্তেজনাকে আমরা ভালবাসি বলেই তো কাজটা করছি’’ বললেন ‘আইউইটনেস’’ গোয়েন্দা সংস্থার কর্ণধার গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, “আমি পঁচিশ বছর আর্মিতে কাজ করার পর এখন পেশাদার গোয়েন্দা। আমার কর্মীর সংখ্যা আট জন।”
প্রাকবিবাহ তদন্ত কেমন হয়? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি একটা গল্প শোনালেন। গল্পটা এই রকম— একদিন এক মেয়ের বাবা ইন্টারনেট থেকে বাছাই করা এক পাত্রের নাম, ঠিকানা ও পরিচয়পত্র, গাড়ির নম্বর নিয়ে এসে গোয়েন্দাকে দিলেন। পাত্রটিকে যাচাই করে দেখার পরই বিয়ের কথা পাড়বেন। ঠিকানাটা ছিল মুম্বইয়ের। মুম্বইতে লোক পাঠিয়ে তদন্ত করে জানা গেল সেই আবাসনে ওই নামে কেউ থাকে না। পর পর ফলো করতে করতে হঠাৎ এক সন্ধেবেলা অ্যাপার্টমেন্টের পোর্টিকোতে রহস্যময় ভাবে দেখা গেল সেই নম্বরের একটা গাড়ি। চরেদের হকচকিয়ে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে এল সেই ছেলেটি (পাত্র)। সঙ্গে এক মহিলা। দরোয়ানকে জিজ্ঞাসা করাতে জানা গেল ওই নারী-পুরুষ পাঁচতলার একটা ফ্ল্যাটে যাওয়া আসা করে। পর দিন সকালে ক্যুরিয়র সার্ভিসের লোক সেজে গোয়েন্দারা দারোয়ানকে ঘুষ দিয়ে পাঁচতলায় উঠলেন। সঙ্গে একটা ভুয়ো ক্যুরিয়র প্যাকেট। বেল বাজাতে ছেলেটি দরজা খুলে দিল। একজন মহিলা গোয়েন্দার কামিজে লুকোনো ক্যামেরায় ধরা পড়ল মেয়েটি আর ছেলেটির একসঙ্গে একটা ছবি। খুব ঘনিষ্ঠ অবস্থায় তারা চিঠির প্যাকেটটা হাতে নিল। সেই ছবি নিয়ে তৎক্ষণাৎ সেখানে থেকে চম্পট দিলেন গোয়েন্দারা। ছবি এনে মেয়ের বাবার হাতে ধরানো হল। সে বারের মতো একটি মেয়ের জীবন বাঁচল।
আরও একটা তাক লাগানো গল্প শোনা গেল এই রকমই এক গোয়েন্দার কাছে। এক ভদ্রমহিলার মেলে একবার পঞ্চাশ হাজার টাকা লটারি জেতার খবর এল। শর্ত একটাই, পঞ্চাশ লাখ টাকা পেতে হলে নিরানব্বই হাজার টাকা ব্যাঙ্কে জমা করতে হবে। পত্রপ্রেরকের দেওয়া অ্যাকাউন্ট নম্বরে মহিলা টাকা ফেলে অপেক্ষা করতে লাগলেন পঞ্চাশ লাখের জন্য। দিন যায়, মাস যায় কিন্তু টাকা বা চেক কিছুই আসে না। শেষ পর্যন্ত মহিলা ছুটে এলেন গোয়েন্দার কাছে। গোয়েন্দারা নির্দিষ্ট ব্যাঙ্কে গিয়ে অ্যাকাউন্ট নম্বরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানল সেখানে নামমাত্র টাকা পড়ে আছে। ভদ্রমহিলাকে জানাতে তাঁর তো মাথায় হাত। গোয়েন্দা গোপালবাবু বললেন, “আমাদের কাছে না এলে হয়তো মহিলার আরও টাকা লোকসান হত। আরও বড় জালিয়াতির শিকার হতে হত তাঁকে।” |
প্রথম থেকেই চাই পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’ |
এই সব কেসে ঝুঁকি কেমন? মধ্য কলকাতার শটর্র্ স্ট্রিটে অবস্থিত ভারতের সব চেয়ে পুরনো গোয়েন্দা সংস্থাটির নাম ‘গ্লোব ডিটেকটিভ এজেন্সি’। সারা ভারতে এদের মোট ২২টা অফিস। কলকাতার অফিসের আঞ্চলিক ম্যানেজার টি কে দাস বললেন, “গল্পের গোয়েন্দারা যে কোনও প্রকারে রহস্যের কিনারা করে ফেলে। কিন্তু বাস্তবের গোয়েন্দাদের অনেক লিমিটেশন। সব জায়গায় সব সময় ঝুঁকি নিয়ে তদন্ত করা আমাদের পক্ষে অসম্ভব। কেনই বা অচেনা লোককে কোনও বাড়ির সামনে বা পাড়ায় ঘুরঘুর করতে দেখলে লোকে মেনে নেবে? সব সময় অস্ত্র সঙ্গে নেওয়া সম্ভব হয় না। কেউ মারধোর করতে এলে মুষ্টি বাগিয়ে যুদ্ধ করা ছাড়া কিছু করার থাকে না।”
কেন বন্দুক বা রিভলভার থাকে না সঙ্গে?
উত্তরে তিনি বললেন, “গেরস্ত পাড়ায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করাটা কি সব সময় শোভন দেখায়? কখনও বা উত্তেজনায় অস্ত্রের অপব্যবহারও হতে পারে।”
গ্লোব সংস্থা আশ্চর্য ভাবে কিনারা করেছিল এক ডাক্তারের জালিয়াতি রহস্যের। ইংল্যান্ডের এক হাসপাতালে রুগিকে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলার অভিযোগে থানায় ধরা না দিয়ে ডাক্তার পালিয়ে আসে কলকাতায়। নাম পরিচয় বদল করে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করতে আরম্ভ করে। ইংল্যান্ডের তদন্তকারী সংস্থা ফোনে একাধিক বার ডাক্তারের গলা শুনলেও সেই হাসপাতালে লোক পাঠিয়ে ডাক্তারকে খুঁজে পায় না। তত দিনে সে অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়েছে। শেষমেশ গ্লোব ডিটেকটিভ এজেন্সির উপর যখন কিনারার দায়িত্ব এল, তারা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের মারফত হাসপাতালে হাসপাতালে খোঁজ চালাতে লাগল। এক রিপ্রেজেন্টেটিভ এসে খবর দিলেন ওই ডাক্তার বাড়ির চেম্বারে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছে। ইংল্যান্ড থেকে সলিসিটর ফার্মটি এ সব জেনে গ্লোবের হাতে ডাক্তারকে গ্রেপ্তারের সমন পাঠাল। “আমরা সেই সমন বাড়িতে গিয়ে অপরাধী ডাক্তারের হাতে তুলে দিয়ে রিসিভিং লেটারে সই করিয়ে আনলাম। সেটা পাঠিয়ে দিলাম ইংল্যান্ডে,” বললেন টি কে দাস।
তার পর কী হল ডাক্তারের?
“আমাদের কাজ ছিল অভিযুক্তের হাতে সমন তুলে দেওয়া। আমরা সেটা করেছিলাম খুব সূক্ষ্ম বুদ্ধি ব্যবহার করে। তার পর আর জানি না,” উত্তর গ্লোব অধিকর্তার।
বাস্তব গোয়েন্দাদের রকম-সকম জানার জন্য ঘোরাঘুরি করতে করতেই আলাপ হয়েছিল সৌমেন মিত্রের সঙ্গে। পেটানো শরীর। উচ্চতা ছ’ফুটের কাছাকাছি। উজ্জ্বল চোখ। তাঁর ভাবমূর্তির মধ্যে সাহিত্যের গোয়েন্দার মতো একটা পুরুষালি রোম্যান্টিকতাও আছে। কিছু দিন আগেই তিনি আসানসোলে একটি জটিল চুরির রহস্য সমাধান করেছেন। সম্প্রতি এক বিবাহিতা মহিলা অন্য এক পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নিজের মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। তাকে ফলো করে ধরতে বেরিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল। বাগুইআটির একটি আবাসনের সামনে দিনের পর দিন বসে থেকে সেই মহিলাকে প্রেমিকসহ ধরে ফেলেন সৌমেন। “কিন্তু একটাই দুঃখ রয়ে গেল। মহিলাকে যখন তার শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ঘরে ফিরে যেতে বলল, সে ফিরল না। একটা ঘর ভেঙে গেল,” দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলেন সৌমেন।
কী ভাবে গোয়েন্দা হয়েছেন সৌমেন? জিজ্ঞাসা করাতে বললেন, “একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে কিছু দিন ট্রেনিং নেওয়ার পর স্বাধীন ভাবে কাজ করতে আরম্ভ করি। যাঁরা ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে না শিখেই এই লাইনে আসতে চান, তাদের উচিত যে কোনও ভাল এবং স্বীকৃত গোয়েন্দা সংস্থায় বেশ কিছু দিন কাজ করা। তা হলেই দক্ষতা বাড়বে। চোখ-কান খুলে যাবে।”
|
ফেলুদা-ব্যোমকেশ হতে গেলে |
• অত্যন্ত ধারালো বুদ্ধি চাই। রপ্ত করতে হবে তুখোড় ভাবে জেরা করার কৌশল
• শিক্ষাগত যোগ্যতা: ন্যূনতম গ্র্যাজুয়েট
• গোয়েন্দাগিরির তালিম নিতে হবে স্বীকৃত গোয়েন্দা সংস্থায় প্রাক্তন আইবি বা সিআইডি অফিসারের অধীনে
• তালিম নেওয়ার সময় শিক্ষকদের কাছে তাঁদের গোয়েন্দা জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো শুনতে হবে। তাতে শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তি বাড়বে
• কাজের কোনও নির্দিষ্ট সময় থাকা চলবে না। যে কোনও সময় তদন্তে নামতে হতে পারে। মাঝরাত হোক কী ভরদুপুর
• সব সময় মোবাইল খোলা রাখতে হবে। যে কোনও সময় ফোন এলে ধরতে হবে। নিয়মিত খবরের কাগজের অপরাধমূলক ঘটনা এবং সেগুলোর তদন্ত প্রক্রিয়া পড়তে হবে
• প্রয়োজন নিয়মিত যোগব্যায়াম ও শরীরচর্চা। স্বাস্থ্য ভাল রাখা খুব জরুরি
• থাকবে নিজস্ব দুই চাকার গাড়ি। মেয়ে গোয়েন্দাদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য
• সেলস বা মার্কেটিংয়ে যাঁরা কাজ করে অভিজ্ঞ, তাঁরা সফল গোয়েন্দা হতে পারেন
• অপরাধী-মনস্তত্ত্ব নিয়ে অনেক বই আছে। সেগুলো পড়তে হবে |
পরামর্শ: গোয়েন্দা গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় |
গোয়েন্দা দক্ষিণা |
• পাত্রপাত্রীর পরিচয় অনুসন্ধান: ৮-১০ হাজার টাকা।
• পরকীয়া প্রেমের অনুসন্ধান: ২০-৩০ হাজার টাকা।
• নকল দ্রব্যের তদন্ত: ১ লক্ষ টাকা।
• নিরুদ্দেশের খোঁজ: স্থান কাল পাত্র অনুসারে পারিশ্রমিক। ৩০ হাজার টাকা থেকে শুরু।
• জাল সইয়ের মামলা: ৮ হাজার টাকা। ( হস্তলিপি বিশারদের সাহায্য লাগে)
• প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি বা ব্যবসায়ীর খোঁজ খবর: ১ লক্ষ টাকা।
• চোরাকারবার ধরা: ২ লক্ষ টাকা। |
(গোয়েন্দা সংস্থা ভেদে পারিশ্রমিকের তারতম্য ঘটতে পারে)
তথ্য: গোয়েন্দা সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় |
|
|
ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে কী শেখানো হয়? সৌমেন বললেন, “ফরেনসিক বিজ্ঞান, হাতের ছাপ, হাতের লেখা দেখে অপরাধী ধরা, বিভিন্ন সময় লোকজনকে অনুসরণ করার কায়দা, অপরাধীর মুখোমুখি হলে কী ভাবে লড়বে, কী ভাবে তাদের জেরা করা হবে সবই শেখানো হয়। গোয়েন্দা সংস্থাতেই এই সব ট্রেনিং হয়। ট্রেনিংয়ের সময় পারিশ্রমিক শুরু হয় ছ’ হাজার টাকা থেকে।”
চোখ-কান খোলা রাখার সহজাত শক্তিটি নিয়েই পনেরো বছর পুলিশের চাকরি করার পর নিজের মতো কাজ করার জন্য ‘অ্যানাপোল’ নামে গোয়েন্দা সংস্থা খোলেন সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। ৩৬ বছর ধরে গোয়েন্দাগিরির অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বইও লিখে ফেলেছেন। তাঁর ঝুলিতেও গোয়েন্দাগিরির অনেক চমকদার গল্প। এক বার একটি জালিয়াত ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল কোম্পানিকে কী সাঙ্ঘাতিক বুদ্ধি দিয়ে ধরেছিলেন, সেই গল্পই শোনালেন। তাঁর কাছে শোনা গেল একটি ভুয়ো প্রেম আর প্রতারণার গল্প। ম্যাট্রিমনিয়াল ওয়েবসাইট দেখে একটি মেয়ে একটি ছেলেকে পছন্দ করে। শুরু হয় অবাধ মেলামেশা। মেয়েটির বাবা-মা’ও এ নিয়ে কোনও আপত্তি তোলেননি। কারণ বায়োডেটা বলছে ছেলেটি শিক্ষিত, ভাল রোজগেরে। হঠাৎ এক দিন ছেলেটি অফিসের কাজে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। কিছু মাস বাদে ছেলেটির বন্ধু একটি ই-মেল পাঠিয়ে জানায় ছেলেটি অসুস্থ। মৃতপ্রায়। তাই টাকা দরকার। মেয়েটি আবেগের বশে পরপর দু’তিন বার টাকা পাঠিয়ে দেয়।
তার পর কী হল?
সত্যরঞ্জন বললেন, “তার পর ওই ভদ্রলোক মেয়েকে নিয়ে হাজির। তখনও টাকা চেয়ে একের পর এক মেল আসছে। আমি তখন লোক লাগিয়ে ছেলেটির পুরনো মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করে ফোনের অফিসে গিয়ে কলকাতার ঠিকানা খুঁজে বের করি। সেখানে ওই ছেলে বিয়ে-থা করে বউ-বাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করছে। মেয়ের বাবার কাছে সত্য ঘটনা তুলে ধরলাম। তাঁরা ভেঙে পড়লেন। কিন্তু ভরসা একটাই, ওঁরা ক্রমাগত প্রতারণা থেকে রক্ষা পেলেন।”
সত্যরঞ্জন জানালেন, বাস্তবের গোয়েন্দাদের পেশার অনুপ্রেরণা ফেলুদা কিংবা ব্যোমকেশের মতো গোয়েন্দারাই। যদিও তাঁদের জীবন অনেক বেশি সংঘাতময় চ্যালেঞ্জিং। সত্যরঞ্জন এখনও কিরীটী রায় পড়েন। বললেন, “আমার রহস্য কাহিনিগুলো নিয়ে ভাবছি কাউকে দিয়ে সিরিয়াল করাব।”
সিনেমায় গোয়েন্দা গল্পের রমরমার যুগে সিরিয়ালে সত্যিকারের গোয়েন্দা গপ্পো দেখে দর্শকের রোমহর্ষক রোমাঞ্চের আশ কি মিটবে? |
|
|
|
|
|