|
|
|
|
বিপথগামী
ক্রীড়া থেকে বিনোদন। প্রতিভার জোরে সাফল্যের চুড়োয় পৌঁছে গিয়েছেন অনেকেই।
তা সে শ্রীসন্তই হোন, পরভিন বাবি বা ম্যাকালে কালকিন। কিন্তু এঁদের শৃঙ্গে থাকা হয়নি বেশি দিন।
ধপাস করে পড়ে যেতে হয়েছে অস্বীকৃতির খাদে। কেন? উত্তর খুঁজলেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
যে দিন প্রথম শ্রীসন্তের বিরুদ্ধে স্পট- ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠে, সে দিন সকাল থেকেই টেলিভিশনের পর্দায় একটা ‘টিকার লাইন’ দেখে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সীমা হিঙ্গোরানির চক্ষু চড়কগাছ। শ্রীসন্তের বাবা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে তাঁর ছেলে নির্দোষ। স্পট ফিক্সিং নিয়ে যা রটনা হচ্ছে, তার পুরোটাই সাজানো। ধোনি আর হরভজনের কারসাজি।
সাক্ষাৎকারটার সঙ্গে কোথাও যেন সীমা মিল খুঁজে পেয়েছেন তাঁর পরিচিত কিছু স্কুল শিক্ষকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে। অনেক ক্ষেত্রেই গল্প করতে করতে তাঁরা বলেছেন যে, পেরেন্ট-টিচার মিটিংয়ে বাচ্চাদের সম্পর্কে কিছু বিরূপ মন্তব্য করলেই বেশ কিছু অভিভাবকই একেবারে রে-রে করে আসেন। কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা এমনও অভিযোগ করেন যে, টিচাররা যা বলছেন, তা আসলে বাচ্চাকে ‘ফ্রেম’ করার চেষ্টা! প্রতিভা যে বিপথগামী হতে পারে, সেটা নিয়ে সতর্ক করে দেওয়াটাও যে শিক্ষকদের কতর্ব্যের মধ্যে পড়ে, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা ভুলে যান। “শ্রীসন্তের বাবার সাক্ষাৎকার দেখে আমার সে কথা মনে হল। সব সত্যি তো বেরিয়ে আসবে। আপনজনকে সমর্থন করতে গিয়ে অন্যের নাম বলা মানে তো নিজের ছেলের আরও সর্বনাশ করা,” বলছেন সীমা।
সেই একই বিষয়ের উদাহরণ হিসেবে মনস্তত্ত্ববিদ ডা. জয়রঞ্জন রাম তুলে ধরছেন অজিত চান্ডিলার স্ত্রী’র কথা। “কাগজে পড়লাম যে চান্ডিলার স্ত্রী ওঁকে ওঁর হঠাৎ রোজগার করা টাকাপয়সা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। কিন্তু চান্ডিলা পত্রপাঠ ওকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ওঁর স্ত্রী যেন এই নিয়ে কোনও কথা না বলেন। এই ধরনের ব্যবহার করা মানেই সেখানে কিছু গণ্ডগোল থাকার সম্ভাবনা রয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে এমনটাই দেখেছি যে, যখন কোনও প্রতিভাবান ব্যক্তি হঠাৎ জনপ্রিয় হয়ে যান, তখন আর ভারসাম্য রাখতে পারেন না। সব সময় নিজের চাটুকারদের সঙ্গে থাকতেই ভালবাসেন তাঁরা। সমালোচনা নিতে পারেন না। আর তখনই সমস্যা দেখা দেয়,” জয়রঞ্জন বলছেন।
কত তারকা এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তা সে পারভিন বাবিই হোন বা ‘ব্রিটেন’স গট ট্যালেন্ট’য়ের সুজান বয়েল। কেউ ড্রাগস, অ্যালকোহল আর ঔদ্ধত্যের নেশায় তলিয়ে যেতে সময় লাগেনি। আবার কেউ স্বীকার করেছেন যে হঠাৎ পাওয়া সাফল্যটা তাঁদের নিজস্ব সত্বাকে ধাক্কা মেরেছে একটা বৃহদাকার ‘ডিমোলিশন বল’ হয়ে। ফ্যাশনের দুনিয়ায় অনেক মডেলই হারিয়ে গিয়েছেন শুধুমাত্র অ্যটিটিউডের জন্য। সিরিয়ালের জগৎ থেকে হারিয়ে গিয়েছেন বেশ কিছু প্রতিভাবান অভিনেতা। তাঁদের নাক উঁচু স্বভাবের কারণে। কেউ আবার পরিচালককে শেখাতে গিয়েছেন স্ক্রিপ্ট কী ভাবে লিখলে ভাল হয়! আর তার পরে সিরিয়াল থেকেই ছুটি। পরে ডিপ্রেশনের কারণে মনস্তত্ত্ববিদের দারস্থ হতেই হয়েছে।
|
স্পট-ফিক্সিংয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর শ্রীসন্তের বিরুদ্ধে জনরোষ |
কিছু বছর আগে জয়রঞ্জনের কাছে টলিউডের এক অভিনেতা পরামর্শ নিতে আসেন। একটা-দু’টো ছবি করার পরই তাঁকে বোঝানো হয়েছিল যে তিনি অত্যন্ত প্রতিভাবান। সারা ক্ষণ তাঁর চারদিকে ঘুরত স্তাবক। তারা এমন ভাবে তাঁকে পরিবেষ্টিত করে রাখত যে, তিনি বুঝতেই পারেননি কখন আসল দুনিয়া থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছেন। ধীরে ধীরে তিনি একটা গন্ডির মধ্যে চলে যান। যাকে বলা হয় ‘কোকুন অব অ্যারোগ্যান্স’। কিন্তু এই ‘বাবল’টা তো এক দিন না এক দিন ফেটেই যেত। আর সেটাই হল। “কাউন্সেলিং করার সময় উনি স্বীকারও করে নেন যে নিজেকে খুব বিশাল কেউ ভাবতে শুরু করেছিলেন,” জানান জয়রঞ্জন। আরও বলেন ঠিক একই রকম ঘটেছিল বিনোদ কাম্বলির ক্ষেত্রে। “অনেকে তো বলেন যে বিনোদ সচিনের থেকেও বেশি প্রতিভা ছিল। কিন্তু ধরে রাখতে পারলেন কই? অস্থির চিত্ত। প্রতিভা থাকলেই তো আর চলে না। তার সঙ্গে দরকার বিনয়,” জানান জয়রঞ্জন।
আশির দশকে গৌতম ঘোষের গান খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। একটা সময় ছিল, যখন অনেকেই মনে করতেন যে বলিউডে হয়তো কুমার শানুকেও ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন গৌতম। তা কিন্তু হয়নি। বলিউডে তেমন ব্রেক পেলেন না তিনি। যে’কটা বাংলা ছবিতে গেয়েছিলেন, সেগুলোও তেমন হিট করেনি। কানাঘুসোয় অনেকে বলেন যে রোজ মদ্যপান করে গৌতমের গলাটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিন্তু গৌতম তা মানতে রাজি নন। বলেন, তাঁর বিষয়ে অপপ্রচার চলেছে। “আমি নাকি সকাল থেকে সন্ধে অবধি মদ খেয়ে থাকি। এটা একেবারে ডাহা মিথ্যে কথা। গত দেড় বছর আমি মদ ছুঁইনি। পশ্চিমবঙ্গে এমন একজন শিল্পী দেখান তো, যে কি না রাত দশটার পর একটু মদ্যপান করেন না? কিন্তু ওঁদের এই অভ্যেস সম্পর্কে তো সাধারণ মানুষ জানেন না। আরে, মদ খেয়ে কি কারও গলা নষ্ট হয় নাকি? লিভার নষ্ট হয়,” যুক্তি গৌতমের।
নিজের জীবন থেকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, গলাটা নষ্ট হওয়ার কারণ হল অতিরিক্ত শো করা। “আমাদের ভোকাল কর্ডের একটা লিমিটেশন থাকে। ধরুন কোনও শিল্পীর ক্ষমতা হল দশটা গান গাইতে পারা। “আমাদের ভোকাল কর্ডের একটা লিমিটেশন থাকে। ধরুন কোনও শিল্পীর ক্ষমতা হল দশটা গান গাইতে পারা। কিন্তু টাকার প্রয়োজনে তিনি হয়তো পঁচিশটা গান গাইছেন শো-তে। রোজ রোজ এটা করলে গলাটা খারাপ হবেই। আমি অল্পবয়সে এটা বুঝিনি,” স্বীকার করে নেন শিল্পী।
মুম্বইতে ছিলেন ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত। দু’টো ছবিতে গান করেছিলেন। কিন্তু ছবিগুলো মুক্তির পর জানতে পারেন একটার থেকে তাঁর গানটা বাতিল। আর অন্যটার থেকে তাঁর নাম। অগত্যা কলকাতা ফিরে এসে আবার চেষ্টা। কিন্তু তখন এখানে মুম্বই ছাপ ছাড়া কাউকে দিয়ে গাওয়ানো হয় না।
“সংসার টানতে শো করা। তবে আমি যে ভাবে সঙ্গীতচর্চা করে এসেছি, সেখানে তো ‘খোকাবাবু যায় লাল জুতো পায়ে’ বা ‘ও টুনির মা’ গাইতে পারব না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে দলবাজি রয়েছে প্রচুর। বিশিষ্ট মানুষের কাছে আমার নামে অপপ্রচার চালিয়ে একদল ফায়দা লুটেছে,” জানান গৌতম।
গৌতমের মতে তাঁর হারিয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে সঙ্গীত জগতের রাজনীতি। কিন্তু মেধাকে সঠিক দিকে চালনা করা সহজ কাজ নয়। প্রয়োজন হল সুপরামর্শদাতার। যাঁরা আয়নাটা ধরে দেবে। যাতে লোভ আর চটজলদি সাফল্যের নেশা প্রতিভাকে অন্ধকূপে ঠেলে না দেয়। ঠিক যেমন হয়েছিল সুজানের ক্ষেত্রে। বহু সাক্ষাৎকারের আগে বলেছেন যে একটা ভাল টিম থাকার দরুণ পাল্টে যাওয়া পরিস্থিতিতে নির্লিপ্ত থাকতে পেরেছেন।
মুম্বইয়ের পিআর বিশেষজ্ঞদের মতে আমাদের দেশে নামেই ‘ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ টার্মটা ব্যবহৃত হয়। আদপে এঁরা কিন্তু ট্যালেন্টকে কাউন্সেলিং করেন না। যাতে তাঁরা বুঝতে পারেন যে কী ভাবে চলা উচিত। মুম্বইয়ের পিআর কনসালট্যান্ট, ডেল ভগওয়াগার পনেরো বছর ধরে কাজ করছেন। তাঁর ক্লায়েন্টদের মধ্যে ছিলেন হৃতিক রোশন, শিল্পা শেটি, বিন্দু দারা সিংহ আর বিবেক ওবেরয়। তাঁর মতে, ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং পিআর দু’টো আলাদা পেশা। আমাদের দেশে ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট যাঁরা করেন, তাঁরা শুধুমাত্র সেলিব্রিটির ডেট হ্যান্ডেল করেন। টাকাপয়সা নেগোসিয়েশনে থাকেন। কখনও এয়ারপোর্ট গিয়ে সেলিব্রিটিকে আনা-নেওয়া করেন। ক্লায়েন্ট সার্ভিসিংয়ের লোকেরা এই কাজগুলো করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এঁরা হলেন কলেজ ফ্রেশার। “ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট ছেড়ে দিন, মিডিয়া বা বিতর্ক হ্যান্ডেল করার কোনও অভিজ্ঞতাই নেই এঁদের। তাই সেলিব্রিটিরা অনেক সময় স্বতন্ত্র পিআর-দের বেশি পছন্দ করেন। সুযোগ পেলে আমি আজও বিন্দুর পিআর করার চ্যালেঞ্জটা নিতে চাইব!” ডেল জানান।
প্রাপ্তবয়স্ক সেলিব্রিটিদের কথা আলাদা। প্রতিভাবান কচিকাঁচাদের কম সমস্যা নয়। চাইল্ড প্রডিজিরা হামেশাই নিজেদের সাফল্য ধরে রাখতে পারে না। যেমনটা হয়েছিল ‘হোম অ্যালোন’ খ্যাত ম্যাকালে কালকিনের। মারিজুয়ানায় আসক্তি থেকে হাজতবাস কি না ঘটেছে ম্যাকালের জীবনে!
মনোবিদেরা অনেক ক্ষেত্রেই মনে করছেন যে আজকের দিনে বাচ্চাদের প্রতিভাকে ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটাই একটা বড় সমস্যা। ভুরি ভুরি রিয়ালিটি শো চার দিকে। কত ধরনের ট্যালেন্ট হান্ট। কিন্তু কয়েকটা শো করা ছাড়া কাউকেই সে ভাবে বিশাল সাফল্য পেতে দেখা যায়নি।
|
|
|
|
|
এখন প্রতি পরিবারে একটি বা
দু’টি সন্তান।
তাই অভিভাবকদের
মায়া বেশি। যদি এরা
গুণবান
হয়,
তাহলে বাবা-মায়েরা
এদের
চোখে হারান
অমল দত্ত |
আমি কোনও দিন
কৌশিকীকে
বলিনি
যে বড় হয়ে
গায়িকা হতে হবে।
সব সময়
ওকে
বলেছি ভাল
মানুষ
হওয়ার
চেষ্টা করো পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী |
অপপ্রচার করা হয়েছে যে
আমার গলাটা নাকি
মদ খেয়ে
খারাপ
হয়ে গিয়েছে। আরে মদ
খেয়ে
কি
কারও গলা নষ্ট
হয় নাকি?
লিভার নষ্ট হয়
গৌতম ঘোষ |
|
‘ডান্স বাংলা ডান্স জুনিয়র’ থেকে খুদে স্টার হয়ে উঠেছে দীপান্বিতা ‘পান্তাভাতে’ কুণ্ডু। আজও লোকের মুখে মুখে ফেরে কী ভাবে মিঠুন চক্রবর্তীকে ও ডাকত ‘গরমভাতে চক্রবর্তী’ আর ‘কাঁচালঙ্কার ঝাল’ বলে। দীপান্বিতা তিন বছর বয়সে প্রথম রিয়ালিটি শো করতে যায়। এখন ছ’বছর বয়েস। জনপ্রিয়তা বেড়েছে। খুদে সেলিব্রিটি ভাব এসেছে কি ওর মধ্যে? “ও অত সব বোঝে না। মিঠুন চক্রবর্তী যে এত বড় তারকা, সেটা ওর বোঝার বাইরে। ওর ধারণা, একজন আঙ্কেলের সঙ্গেই ও শো করছে,” বলেন দীপান্বিতার মা, পারমিতা কু্ণ্ডু।
তবে আজকাল শো করতে গিয়ে একটা টেডি না পেলে দীপান্বিতার মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়। “আমার কাছে অনেক টেডি আছে। স্কুলে আর কারও কাছে এত টেডি নেই,” বলেই ফেলে পুঁচকে দীপান্বিতা।
শো বাবদ পারিশ্রমিক কত পাচ্ছে সেটা দীপান্বিতা জানে না। তবে টেডি না পেলে মাকে তা নিয়ে প্রশ্ন করে। তখন একটু অসুবিধায় পড়তে হয় পারমিতাকে। “কোথাও গেলে বোধহয় একটু গুরুত্ব চায় ও। কারও বাড়িতে গিয়ে গিফট না পেলে, ও না বুঝেই হয়তো বলে ফেলে, ‘চলো, এখানে ভাল লাগছে না’। তখন আমি ওকে বোঝাই যে এ ভাবে বলে না, কারণ তাতে সেই বাড়ির লোকেরা দুঃখ পাবে। তখন আবার বলে, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে’।”
দীপান্বিতার মা সতর্ক থাকার চেষ্টা করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর মতে আমাদের দেশের ‘সার্টিফিকেট ওরিয়েন্টেড’ শিক্ষা ব্যবস্থাতে মনুষ্যত্বের শিক্ষা নেই। বলছেন, “ঈশ্বরের কৃপা নিয়ে কিছু বাচ্চা আসে। তবে কী ভাবে আত্মসমালোচনার মধ্যে দিয়ে সেই প্রতিভাকে ধরে রাখতে হবে, সেটা ডেভেলপ করা হয় না। আমি আমার মেয়েকে কোনও দিন বলিনি যে, গায়িকা হতে হবে। গান শিখেছে ভালবেসে। এটা প্রমাণিত সত্য যে, ছোটবেলা থেকে সঙ্গীতচর্চা করলে অন্তরের সত্ত্বাটা ডেভেলপ করা সহজ হয়ে যায়। স্কুলে সঙ্গীত শেখাটা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া উচিত। শিল্পী হওয়ার জন্য নয়। ভাল মানুষ হওয়ার জন্য সেটা জরুরি।”
অভিভাবকদের সচেতনতার বিষয়ে সরব হয়েছেন ডায়মন্ড কোচ অমল দত্ত। বলছেন, “আমাদের দেশে এখন প্রতি পরিবারে একটি বা দু’টি সন্তান। তাই অভিভাবকদের মায়া বেশি। তার ওপর যদি এরা গুণবান হয়, তাহলে তো বাবা-মায়েরা এদের চোখে হারান। কত ছেলে-মেয়ে খেলতে আসে। কিছু দূর গিয়ে বাবা-মায়েরা ঠিক করতে পারেন না বাচ্চাদের দিয়ে কী করাতে চান। আজকে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন দেশের জন্য একটা স্পোর্টস পলিসি তৈরি করা।”
মনস্তত্ত্ববিদরা বলছেন যে, বিপথগামী প্রতিভার ক্ষেত্রে দু’ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। যখন বাচ্চা হঠাৎ করে গুটিয়ে যায়। আর, যখন বাচ্চাটি হঠাৎ করে রেগে যায়। চেঁচিয়ে কথা বলে। এই দু’টি ক্ষেত্রেই কিন্তু অভিভাবকদের সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হওয়া দরকার। “কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেটা হয় না। বাবা-মায়েরা দু’ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন। কেউ ‘ওভার প্রোটেকটিভ’ হয়ে যান। এমনকী এটাও বলতে ছাড়েন না যে ঈর্ষা থেকেই অন্যরা অভিযোগ করছেন। আর এক দল অভিভাবক থাকেন, যাঁরা সারাক্ষণ বাচ্চাদের খুঁত ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দু’টোর কোনওটাই ভাল নয়। আর সব থেকে বড় ব্যাপার হল কখনও বাচ্চার সামনে তার খুঁত নিয়ে আলোচনা করবেন না,” বলছেন সীমা।
মুম্বইয়ের হোটেল রুম ঘেঁটে শ্রীসন্তের একটা ডায়েরি পাওয়া গিয়েছে। তাতে নাকি লেখা ছিল কিছু লাইন—‘আই উইল নেভার গেট ইনটু আরগিউমেন্টস’, ‘আই শ্যুড নট বি অ্যাগ্রেসিভ’। এমনও শোনা যায় যে ডায়েরির পাতায় নাকি দু’বার লিখেছিলেন ‘গড, সেভ মি।’ শ্রীসন্ত-র বাড়ির লোকজনরা হয়তো এ সব জানতেন না। জানলে নিশ্চয়ই সাবধান হতেন। তবে ভবিষ্যতে যাতে শ্রীসন্ত বা চান্ডিলা-র মতো প্রতিভা বিপথে চলে না যায়, সেটা আটকানোর দায়িত্ব কিন্তু এড়ানো উচিত নয়। অভিভাবকেরা শুনছেন কি?
|
অভিভাবকদের প্রেসক্রিপশন |
কী দেখে বুঝবেন |
কী করবেন |
হঠাৎ বাইরের জগৎ থেকে গুটিয়ে গেলে |
সময় দিন, কোয়ালিটি টাইম কাটান |
বদমেজাজি হয়ে গেলে |
বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন। উঁচু গলায় বকবেন না
|
স্কুল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে অভিযোগ এলে |
তর্ক না করে কথাগুলো শুনুন। এড়িয়ে যাবেন না |
প্রতিনিয়ত বাড়িতে বা বাইরে অশান্তি করলে |
মনস্তত্ত্ববিদের কাছে নিয়ে যেতে দেরি করবেন না |
বাচ্চা যদি পুরনো সম্পর্ক টিকিয়ে না রাখতে পারে |
বাচ্চার সঙ্গে বসে তার অসুবিধাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন |
তথ্য: সীমা হিঙ্গোরানি |
|
|
|
|
|
|
|