স্থানীয় মানুষের প্রতিবাদের জেরে সাময়িক ভাবে গাছ কাটা থেকে পিছু হঠল পূর্ত দফতর।
রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য তারাতলা থেকে জোকা পর্যন্ত জেমস লঙ সরণির উপর মোট ৫৮৯টি গাছ কাটা হবে। যার মধ্যে প্রায় ১৬০টি গাছ কাটাও হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ২৩ তারিখ আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আর তার পরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ শুরু করেন বিরোধিতা। শনিবার সকালে পূর্ত দফতর নিযুক্ত ঠিকাদারি সংস্থার কর্মীরা গাছ কাটতে গেলে তাঁরা বাধা দেন। কিন্তু প্রথমে গাছ কাটা বন্ধ করতে চাননি কর্মীরা। ক্রমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। খবর যায় পূর্ত দফতরেও। প্রশাসন সূত্রে খবর, এর পরেই গাছ কাটা থামিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নেন পূর্ত দফতরের কর্তারা। আজ, সেই বৈঠক হবে বলে পূর্ত দফতর সূত্রে খবর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আনন্দবাজারের প্রতিবেদনের পরই বেহালার একটি ক্লাব স্থানীয় সমু পার্কে অন্যান্য ক্লাবের সঙ্গে বৈঠক করে। তৈরি হয় ‘জেমস লঙ সরণি গাছ বাঁচাও ক্লাব সমন্বয় কমিটি’। এলাকার গাছ কাটার প্রতিবাদের পাশাপাশি সবুজ বাঁচানোর উদ্দেশ্য নিয়েও এই কমিটি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা বাসব রায়। তিনি বলেন, ‘খবরটি চোখে পড়ার পরই এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা সবুজ বাঁচানোর জন্য একজোট হতে স্থানীয় ক্লাবগুলিতে গিয়ে অনুরোধ করেন । আর সেই জোটের ফলেই শনিবার সাধারণ মানুষ গাছ কাটার প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন।”
বাসিন্দাদের বক্তব্য, কয়েক ফুট রাস্তা চওড়া করতে যে ভাবে গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ত-দফতর, তা অযৌক্তিক। তা ছাড়া পূর্ত-দফতর থেকে বলা হচ্ছে এই গাছগুলি কাটা হলেও, বাখরাহাট এলাকায় ২৯৪৫টি গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে। এই শর্তেই বন-বিভাগ পূর্ত দফতরকে এত বিশাল সংখ্যক গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সেখানেও রয়েছে সমস্যা। যে সব জায়গায় গাছ কাটা হচ্ছে, সেখান থেকে বাখরাহাটের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এত দূরে গাছ লাগিয়ে এই এলাকার কী লাভ হবে, সে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা আরও বলছেন, বড়-বড় গাছ থেকে পরিবেশের যে উপকার হত, নতুন লাগানো চারাগাছ থেকে তা পাওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া ‘পরিপূরক’ চারাগাছগুলি যে লাগানো হবেই বা সেগুলি বাঁচাতে সঠিক পরিচর্যা করা হবে---তা নিয়েও সন্দেহে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
পরিবেশপ্রেমী সুভাষ দত্ত বলেন, “যখনই কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয়, বলা হয় গাছ কাটার জন্য ‘পরিপূরক’ গাছ লাগিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও দিনই সেই ‘পরিপূরক’ গাছ লাগানো হয় না। ফলে যেখানেই এ ধরনের গাছ কাটা হবে, সেখানে সাধারণ মানুষকে নিজের স্বার্থে বিশেষ করে কলকাতাবাসীকে নিজের সঙ্গে গাছকে জড়িয়ে আন্দোলন করতে হবে।” জেমস লঙ সরণিতে রাস্তা সম্প্রসারণের নামে যে পরিমাণ বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, তা উন্নয়নের জন্য বলা হলেও, তা আসলে উন্নয়নের পরিপন্থী বলে সুভাষ বাবুর মত।
শনিবার ওই এলাকায় পূর্ব বেহালা কেন্দ্রের পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে মাইকে করে গাছ কাটার প্রতিবাদের পাশাপাশি সবুজ বাঁচানোর আবেদন করা হয়। গাছ কাটতে বাধা দেওয়াই নয়, এলাকার সবুজ বাঁচাতে যে কমিটি তৈরি হয়েছে, তার পক্ষ থেকে ৯ জুন এলাকায় এক পদযাত্রাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। |