রক্ত সঙ্কটে ভুগছে একদা রাজ্যে রক্ত সংগ্রহে প্রথম স্থানাধিকারী ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক। ২০০১ থেকে টানা ছ’বার রক্ত সংগ্রহে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছিল এই হাসপাতাল। তবে ২০০৬ সালের পর থেকে প্রথম না হলেও ওই ব্লাড ব্যঙ্কে রক্তের আকাল কখনও দেখা দেয়নি। এমনকী, গত বছরও ঘাটাল ব্লাড ব্যাঙ্ক জেলা ও জেলার বাইরে অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত পাঠিয়েছিল। সেখানে এ বছর অবস্থা এতটাই খারাপ যে হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরাই রক্ত পাচ্ছেন না। এ দিকে, ঘাটাল ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই মহকুমার সমস্ত বেসরকারি নার্সিংহোম এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রক্ত সংগ্রহ করেন। মাসখানেক ধরে বাইরের কাউকেই রক্ত দিতে পারছেন না ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
ঘাটাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রচণ্ড গরমে শিবির কম হওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। যদিও এই তত্ত্ব মানতে নারাজ বিভিন্ন ক্লাব এবং সংগঠকরা। উল্টে রক্ত সংগ্রহে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের কোনও আগ্রহ নেই বলে অভিযোগ তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্লাব কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “মাস খানেক আগে থেকে রক্তদান শিবিরের দিন উল্লেখ করে আবেদন করলেই আগে ব্লাড ব্যাঙ্ক অনুমতি দিত। এখন তিন-চারটে দিন উল্লেখ করে আবেদন করেও অনেক সময় অনুমতি মিলছে না।” ঘাটালের একটি ক্লাবের সম্পাদক বলেন, “ক্লাব বা সংগঠন শিবির করলে আগে থেকে প্রচার করতে হয়। এখন দিন পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় কেউ আগ্রহ প্রকাশ করছে না। শিবির করতে ঘাটাল ব্লাড ব্যাঙ্কের অনীহা থাকায় জেলার অন্য ব্লাড ব্যাঙ্কের কাছে আবেদন করতে বাধ্য হচ্ছি।”
হাসপাতালের সুপার অনুরাধা দেব রক্ত সঙ্কটের কথা মেনে নিলেও এই ধরনের অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমাদের সুবিধার জন্যই শিবিরের জন্য তিন-চারটে তারিখ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সমস্যা মেটাতে সরকারি সমস্ত দফতরকে দিয়ে শিবির করানোর চেষ্টা করছি আমরা।”
হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগে মাসে গড়ে ১৫-১৬টা রক্তদান শিবির হলেও এখন সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়িয়েছে ৫-৭ দিনে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ বোতল রক্তের (বিভিন্ন গ্রুপের) প্রয়োজন। কিন্তু ও পজেটিভ ছাড়া বাকি গ্রুপের রক্ত সংগ্রহে বিশেষ নেই। রক্ত না পেয়ে সমস্যায় পড়ছে শহরের অন্য নার্সিংহোমগুলিও। কখনও কখনও রোগীদের অন্যত্র ‘রেফার’ করতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
ঘাটাল মহকুমা নার্সিংহোম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে অনুপ চক্রবর্তী বলেন, “রক্ত না থাকায় আমরা সমস্ত রোগীকে বাধ্য হয়ে অন্যত্র রেফার করে দিচ্ছি।” সমস্যায় পড়ছেন থ্যালাসেমিয়া রোগীরাও। তবে চাহিদার কথা মাথায় রেখে রাজনৈতিক দলগুলি শিবির করতে এগিয়ে এসেছে। তবে তাতেও পর্যাপ্ত রক্ত সংগ্রহ হচ্ছে না বলেই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। |