উচ্চতর ডিগ্রি পাওয়ার সুবাদে পুরনো নিয়ম অনুসারে শিক্ষককে বাড়তি ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার নির্দেশ ছিল কলকাতা হাইকোর্টের। মুর্শিদাবাদ জেলার স্কুল পরিদর্শক সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করায় উচ্চ আদালত তাঁর পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। জরিমানার টাকা পরিদর্শকের বেতন থেকে কেটে নিয়ে দিতে হবে আবেদনকারী শিক্ষককে। সেই সঙ্গে আদালতের নির্দেশ, ওই পরিদর্শকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে
উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা সচিবকে।
এই মামলার আইনজীবীরা জানান, আগের নিয়মে কোনও শিক্ষক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেই দু’টি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট পেতেন। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১২ সালে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, ২০০৫ সালের পরে যাঁরা ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন, তাঁদের ওই বিশেষ দু’টি ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে না। ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়। হাইকোর্ট সেই মামলার রায়ে সরকারের নতুন বিজ্ঞপ্তি খারিজ করে বিশেষ ইনক্রিমেন্টের ব্যাপারে আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখার নির্দেশ দেয়। স্কুলশিক্ষা দফতরকে ওই নির্দেশ পালন করতে বলেন বিচারপতি।
হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও কয়েকটি জেলার স্কুল পরিদর্শকেরা ২০০৫ সালের পরে ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া শিক্ষকদের দু’টি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দিতে অস্বীকার করেন। অথচ আগেই এই নিয়ে বহু মামলা হয়েছে। আদালত প্রতিটিতেই জানিয়েছে, শিক্ষক বাড়তি ডিগ্রি পেলে ছাত্রছাত্রীদেরই লাভ এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে সমাজই তার সুফল ভোগ করে। তাই শিক্ষকের প্রাপ্য দিতেই হবে। মেহবুব ঈশা নামে মুর্শিদাবাদের এক শিক্ষক ২০০৮ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি পান। তা
সত্ত্বেও তাঁকে বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দেয়নি শিক্ষা দফতর। তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ঈশার আইনজীবী
এক্রামুল বারি জানান, বিশেষ ইনক্রিমেন্ট চেয়ে তাঁর মক্কেল বারবার আবেদন করেন জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে। সঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপিও পাঠান। কিন্তু স্কুল পরিদর্শক জানিয়ে দেন, আবেদনকারী ২০০৫-এর পরে ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন বলে তাঁকে বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দেওয়া সম্ভব নয়।
বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত শুক্রবার দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে রায়ে বলেন, শিক্ষক যে-দিন ডক্টরেট ডিগ্রি পাবেন, তখন থেকেই দু’টি বিশেষ ইনক্রিমেন্টের অধিকারী হবেন। তাই ওই শিক্ষককে বিশেষ ইনক্রিমেন্ট দিতেই হবে। বাড়তি ডিগ্রির জন্য বিশেষ ইনক্রিমেন্টের ব্যাপারে হাইকোর্ট আগেই পরিষ্কার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ অগ্রাহ্য করায় সংশ্লিষ্ট স্কুল পরিদর্শকের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হল। |