জংলি ভালুকের হামলায় জখম হলেন তিন জন।
শুক্রবার বেলপাহাড়ির হাতিডোবা গ্রামের লাগোয়া জঙ্গলে ভালুকটিকে দেখে উত্তেজনা ছড়ায়। তাড়াতে গিয়ে জখম হন হাতিডোবা গ্রামের বছর একত্রিশের কমল মাণ্ডি। তাঁকে ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছে। ওই ঘটনার পর এলাকায় যেমন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, তেমনই ভালুক দেখতে ভিড়ও জমে। অতি উত্সাহ দেখাতে গিয়ে জখম হয়েছেন নামোশোল গ্রামের বছর ছাব্বিশের চুনারাম সরেন ও চাঁদাবিলা গ্রামের পঞ্চানন মুর্মু। ঝাড়গ্রামের বিভাগীয় বনাধিকারিক আশিস সামন্ত বলেন, “ভালুকটিকে ধরার চেষ্টা করছেন বনকর্মীরা। আহতদের চিকিত্সার যাবতীয় খরচ বন দফতর বহন করবে।”
১৯৭৮ সালে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বেলপাহাড়ির দলদলির জঙ্গলে ভালুকের হামলায় এক গ্রামবাসী জখম হয়েছিলেন। তারপর আর এলাকায় ভালুক দেখা যায়নি। হাতিডোবা এলাকাটি বাঁকুড়ার সীমানা লাগোয়া। ফলে, ভালুকটি কোথা থেকে এসেছে তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন এলাকাবাসী। বন দফতরের অবশ্য অনুমান, বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকেই ভালুকটি বেলপাহাড়ির জঙ্গলে ঢুকেছে। |
আহত চুনারাম সোরেন |
আহত কমল মাণ্ডি |
|
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ভোরে হাতিডোবা গ্রামের বাসিন্দা কালিপদ মুর্মু স্থানীয় ঝুরঝুরি জঙ্গল-রাস্তা দিয়ে গরুরগাড়ি করে যাওয়ার সময় প্রথম ভালুকটিকে দেখতে পান। কালিপদবাবুর কথায়, “গরুর গাড়িতে গোবর সার নিয়ে জমিতে দিতে যাচ্ছিলাম। গাড়িতে আমার স্ত্রী ও ছয় বছরের মেয়েও ছিল। আচমকা জঙ্গলের মধ্যে থেকে একটি মিশ কালো জন্তু আমার গাড়ির সামনে চলে আসে। ঠাহর হতে বুঝতে পারি, সেটা একটা ভালুক। আতঙ্কে গরুর গাড়ি ফেলে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ছুটে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাই।” কালিপদবাবু হাতিডোবা গ্রামে ফিরে ভালুকটির খবর জানান। এরপরই স্থানীয় গ্রামবাসীরা ভালুকটির খোঁজে জঙ্গলে ঢোকেন। বন দফতরের স্থানীয় বড়শোল বিট অফিসে খবর দেওয়া হয়। সকাল সাতটা নাগাদ কয়েকজন গ্রামবাসী লাঠি-বল্লম নিয়ে ঝুরঝুরি জঙ্গলে ভালুক তাড়া করতে যান। ওই দলে হাতিডোবার বাসিন্দা কমল মাণ্ডিও ছিলেন। আচমকা ভালুকটি কমলবাবুদের তাড়া করে। কমলবাবুর সঙ্গী জয়রাম টুডু বলেন, “ভালুকটি কমলকে পিছু ধাওয়া করে ধরে ফেলে। ভালুকটি কমলের হাত, কাঁধ ও উরুর মাংস খুবলে ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে। ওই সময় আমরা কোনও মতে পাথর ছুড়ে ভালুকটিকে খেদিয়ে দিই।” কমলবাবুকে উদ্ধার করে প্রথমে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁকে ঝাড়গ্রাম শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। এই
খবর ছড়াতেই আশপাশের নামোশোল, পতিরাজগুড়া, বাঁকশোল, বামুনডিহা, নিশ্চিন্তপুর, বৈষ্ণবপুর, চাঁদাবিলা-সহ ৩০-৩৫টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ভালুক দেখার জন্য হাতিডোবা জঙ্গলে চলে আসেন। সকাল এগারোটা নাগাদ ভালুকটি হাতিডোবা পাম্প হাউসের কাছে তারাফেনি নদীর লাগোয়া কাঁটাঝোপের দিকে চলে যায়। ওই সময় নামোশোল গ্রামের যুবক চুনারাম সরেনও স্থানীয়দের সঙ্গে ভালুক দেখতে গিয়ে আক্রান্ত হন। ভালুকটি চুনারামের ডান কানটি কামড়ে ছিঁড়ে নেয়। তাঁকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বিকেলে তারাফেনি নদীর কাছে আরও এক অত্যুত্সাহী চাঁদাবিলা গ্রামের বছর পঁয়ত্রিশের পঞ্চানন মুর্মু ভালুকটিকে দেখতে গিয়ে বিপত্তি ডেকে আনেন। পঞ্চাননবাবুর বাম হাঁটুতে কামড়ে দেয় ভালুকটি। তাঁকে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বিকেলে বনকর্মীদের তাড়া খেয়ে ভালুকটি হাতিডোবার শাল জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বনকর্মীরা ঘুমপাড়ানি বন্দুক, জাল, খাঁচা ও সার্চলাইট নিয়ে ভালুকটিকে ধরার জন্য হাতিডোবা জঙ্গলে ঢোকেন। তবে, রাত পর্যন্ত ভালুকটিকে পাওয়া যায়নি। তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়।
|