|
|
|
|
|
|
খেলা |
ভলিবলের আধুনিক পাঠ |
চন্দন রুদ্র |
এক বছর পার করল হাওড়ার ‘অ্যাডভান্স ভলিবল কোচিং সেন্টার অফ বেঙ্গল’-এর প্রশিক্ষণ শিবির।
গত বছর ৯ মে হাওড়া জেলা ভলিবল অ্যাসোসিয়েশনের মাঠে এই শিবির শুরু হয়। বর্তমানে এখানে ৪৫ জন ছেলেমেয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সপ্তাহে চার দিন শিবির চলে। হাওড়া, হুগলি, কলকাতা ছাড়া দুর্গাপুর, শান্তিপুর, বসিরহাট, তারকেশ্বর, ধামুয়া থেকেও অনেকে প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন। হাবড়ার দেবজ্যোতি পালের বাবা সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করেন। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ দেবজ্যোতি বললেন, “আরও অনেক দূর এগোতে চাই। তাই প্রশিক্ষণ শিবিরে আসা।” নিয়মিত তারকেশ্বর থেকে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন পল্লবী সাঁতরা। সাধারণ ঘরের এই মেয়েটির লক্ষ্য দেশের হয়ে খেলা। ধামুয়ার সাগর মুখোপাধ্যায় উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছেন। বাবার মিষ্টির দোকান। ওঁর কথায়: “এখানে এসে ভাল খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।” হাওড়ার বৈষ্ণবপাড়া লেনের বাসিন্দা নবম শ্রেণির ছাত্রী অনসূয়া হাজরা বলল: “আগে স্ম্যাশিং ভাল হত না। মুভমেন্ট স্লো ছিল। অনেকটাই ভাল করছি।” গৃহশিক্ষকতা করেন বসিরহাটের সৌমেন মজুমদার। বাড়ি থেকে ট্রেনে শিয়ালদহে আসতে দু’ঘণ্টা লাগে। সেখান থেকে হাওড়া ময়দান প্রায় ৪৫ মিনিট। বললেন, “এখানে এসে আমার ফিজিক্যাল ফিটনেস অনেক বেড়েছে। অফ দ্য বল, অন দ্য বল দু’ক্ষেত্রেই
উন্নতি হয়েছে।”
এই শিবিরে ফিজিও, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর, স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন। বাংলার প্রাক্তন ভলিবল খেলোয়াড় অমরনাথ চোংদার এবং আরও কয়েক জনের উদ্যোগে এই প্রশিক্ষণ শিবির চালু হয়েছে। অমরনাথবাবু বললেন, “শুধু কোচিং নয়, সঙ্গে ফিজিও, ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর এবং স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই শিবিরে এক সঙ্গে সব সুবিধাই পাওয়া যাচ্ছে।”
|
|
কোচ হিসাবে অমরনাথবাবুর সঙ্গে রয়েছেন প্রাক্তন ভলিবল খেলোয়াড় চঞ্চল বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় দলের দুই প্রাক্তন খেলোয়াড় ‘অর্জুন’ সুরেশ মিশ্র ও আর কে পুরোহিত। স্পোর্টস মেডিসিনে সাহায্য করছেন চিকিৎসক মানসকুমার দাস। ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টরের দায়িত্ব নিয়েছেন অঞ্জন মিত্র, দীপক বেরা। ফিজিও হিসেবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন লন্ডন অলিম্পিকে ভারতীয় তিরন্দাজি দলের ফিজিও জয়দীপ দাশচৌধুরী।
স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ মানসবাবুর কথায়: “আধুনিক ক্রীড়াবিজ্ঞানে অনুশীলনের আগে শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। আমরাও সে ব্যবস্থা করেছি। বোনম্যারো ডেনসিটি টেস্ট, লাং ফাংশন টেস্ট, থ্যালাসেমিয়া, রক্তচাপ, সুগার ইত্যাদি বেশ কিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে। সবাইকে ডায়েট চার্ট বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। চোট পেলে
বিনা খরচে এক্স-রে এবং নার্সিংহোমে ভর্তির ব্যবস্থাও আছে।”
কোচিং সেন্টারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে দল গড়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। অমরনাথবাবু বললেন, “ওদের অনেক কিছু ধারণাই ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে উন্নতি করছে।” বরাহনগরের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা রায়চৌধুরী বললেন, “আগে ভাল করে বল লিফ্ট করতে পারতাম না। ডিফেন্স ছিল একেবারেই নড়বড়ে। এখন আর সেটা হয় না।” রাজ্য ভলিবল সংস্থার সচিব রথীন রায়চৌধুরী এই কোচিং সেন্টারের সভাপতি। রথীনবাবু বললেন, “রাজ্য সংস্থা ৩৪টি কোচিং ক্যাম্প পরিচালনা করে। এটি খুব আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এই ধরনের পদক্ষেপ খুবই ভাল।” হাওড়া জেলা ভলিবল সংস্থার সচিব চঞ্চল ঘোষ বললেন, “বাংলায় এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আরও প্রয়োজন।” ইতিমধ্যে সরঞ্জাম কেনার জন্য রাজ্য সংস্থা থেকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান মিলেছে। অমরনাথবাবুর কথায়: “স্পনসর দরকার। আর্থিক সহায়তা পেলে আরও নানা কাজ করা সম্ভব।”
|
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
|
|
|
|
|