সম্পাদকীয় ১...
শেষ সুযোগ
কটি নির্বাচিত সরকারের প্রথম বছরকে ‘মধুচন্দ্রিমা পর্ব’ অভিহিত করিবার ধারাটি এখন প্রাচীন। শেষ বছরটি তেমন কোনও পাইকারি তকমা লাভ করে নাই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শেষ বছরে পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে সরকারের পালে হাওয়া পড়িয়া যায়, দিনগত পাপক্ষয়ই সার হইয়া দাঁড়ায়। তখন সেই সরকারের সম্পর্কে যে অভিধাটি প্রয়োগ করা হইয়া থাকে, তাহার বাংলা শ্রুতিকটু শুনাইতে পারে, তাই অনুবাদ না করিয়া ‘লেম ডাক’ উচ্চারণই শ্রেয়। কখনও কখনও ইহার ব্যতিক্রম হয়। নানা ধরনের ব্যতিক্রম। কোনও কোনও সরকার শেষ দিকে সহসা নূতন তেজ সংগ্রহ করিয়া উঠিয়া দাঁড়ায়। মনমোহন সিংহের প্রথম ইউ পি এ সরকার যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহিত পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে দাঁড়াইয়াছিল। আবার, কোনও সরকার শেষ পর্বে বাস্তবের সহিত কোনও সামঞ্জস্য না রাখিয়া অতিরিক্ত উদ্দীপনা দেখাইতে গিয়া নিজের সমস্যা বাড়াইয়াছে। অটলবিহারী বাজপেয়ী তাহা জানেন। তবে সাধারণত, সমস্ত সরকারের ক্ষেত্রেই একটি মৌলিক শর্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাহার নাম সুস্থ ও সম্ভাবনাময় অর্থনীতি। দেশের আর্থিক অবস্থা বিপন্ন হইলে বিদায়ী সরকারও বিপন্ন হইবে, ইহা অবধারিত।
মনমোহন সিংহের দ্বিতীয় দফার সরকার শেষ বছরে প্রবেশ করিবার অনেক আগেই বিপন্ন, অস্থির এবং দিগ্ভ্রান্ত। দুর্নীতির মহামিছিল এবং সেই দুর্নীতি নিবারণে ও মোকাবিলায় দৃঢ়তার সম্পূর্ণ অভাব দুইয়ে মিলিয়া এই সরকারের উপর নাগরিকদের ভরসা বলিয়া বিশেষ কিছু অবশিষ্ট থাকিবার কথা নহে, ভরসার কোনও লক্ষণও নাই। অর্থনীতি যথেষ্ট সতেজ ও সম্ভাবনাময় হইলে হয়তো এই চোরাবালি হইতে নিজেকে উদ্ধার করিবার একটি চেষ্টা শাসক দল করিতে পারিত, কিন্তু আপাতত তাহার আশা ক্ষীণ। ভারতীয় অর্থনীতি তাহার দুর্দিন কাটাইয়া ফেলিয়াছে, এমন আশাবাদী অবস্থান হইতেও বিপুল উন্নতির কোনও আলোকরেখা দেখা যাইতেছে না। মূল্যসূচক আপাতত কিঞ্চিৎ সংযত হইয়াছে বটে, কিন্তু প্রথমত তাহার স্থায়িত্ব অনিশ্চিত এবং দ্বিতীয়ত দীর্ঘ মূল্যবৃদ্ধির আগুনে দগ্ধ নাগরিকদের ইহাতে বিন্দুমাত্র সন্তুষ্ট হইবার কারণ নাই, সাম্প্রতিক জনমতসমীক্ষার সংকেতও স্পষ্টতই তাহা জানাইয়া দেয়। দ্বিতীয় ইউ পি এ শাসনের ‘নৈতিক অধিকার’ হারাইয়াছে। খাদ্য নিরাপত্তা আইন বা রাহুল গাঁধী, কোনও ইন্দ্রজালেই সেই অধিকার পুনরুদ্ধার হইবে বলিয়া মনে হয় না।
মনমোহন সিংহের সামনে এখন দুইটি পথ। এক, তিনি যাহা করিয়া আসিতেছেন, বাকি এক বছর বা কয়েক মাস তাহাই করিয়া চলা। অর্থাৎ ঘটনাপ্রবাহ তাঁহাকে যে ভাবে লইয়া চলিয়াছে, সেই ভাবেই ভাসিয়া চলা। তিনি এই পথটি লইবেন, এমন সম্ভাবনাই প্রবল। কিন্তু দ্বিতীয় একটি পথও তাঁহার সম্মুখে খোলা রহিয়াছে। ঘুরিয়া দাঁড়াইবার পথ। যে আসনটিতে তিনি অধিষ্ঠিত, তাহাকে সম্মান জানানোর পথ। সেই আসন দাবি করে যে, যাহা তাঁহার করা উচিত, তিনি তাহাই করিবেন। আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নেই হউক, দুর্নীতির মোকাবিলাতেই হউক অথবা অদক্ষ মন্ত্রীদের বিদায় জানাইবার বিষয়েই হউক, তিনি আপন অধিকার প্রয়োগ করিবেন, ইহাই সরকারপ্রধানের নিকট প্রত্যাশিত। এত দিন তিনি সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হইয়াছেন। সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে ব্যর্থতার বিবিধ ‘কারণ’ দেখাইয়াছেন। কখনও জোট রাজনীতির বাধ্যবাধকতা, কখনও দল বা হাইকমান্ডের চাপ, নানা সমস্যার কথা শোনা গিয়াছে। মনমোহন সিংহ নিশ্চয়ই জানেন, শেষ বিচারে দেশের নাগরিকরা তাঁহাকেই দায়ী করিয়াছেন। দ্বিতীয় পর্বের প্রধানমন্ত্রিত্বে তাঁহার ভাবমূর্তি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে। তাঁহার ব্যক্তিগত সততা হয়তো এখনও প্রশ্নাতীত, কিন্তু অন্যায় সহ্য করা যে অন্যায় করার তুলনায় কোনও অংশে কম অপরাধ নহে, বিশেষত এক জন সর্বাধিনায়কের পক্ষে, সেই সত্য তো বহুচর্চিত। যদি আত্মমর্যাদাবোধের প্রেরণা বা তাড়নাতেও প্রধানমন্ত্রী মেরুদণ্ড সোজা করিয়া দাঁড়াইতে পারেন, তাহা কেবল তাঁহার ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির পক্ষে ভাল হইবে না, ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষেও মঙ্গলজনক হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.