ব্যক্তিগত গাড়িতে লালবাতি লাগিয়ে বিতর্কের মুখে বাঁকুড়ার ছাতনার তৃণমূল বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল। তাঁর দাবি, পদাধিকার বলে তিনি লালবাতি লাগাতেই পারেন। জেলা ও রাজ্য প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, তিনি আদৌ গাড়িতে লালবাতি লাগানোর অধিকারী নন।
বৃহস্পতিবার তালড্যাংরায় উদ্যানপালন দফতরের একটি কর্মশালায় এসেছিলেন শুভাশিসবাবু। তিনি যে গাড়িটিতে এসেছিলেন, সেটিতে লালবাতি লাগানো ছিল। গাড়িতে শুভাশিসবাবুর স্ত্রী ও মেয়েও ছিলেন। শুভাশিসবাবু অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গাড়ি থেকে নামলেও তাঁর স্ত্রী-মেয়ে নামেননি। শুভাশিসবাবুর দাবি, তিনি ‘কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ বা সিএডিসি-র চেয়ারম্যান। সেই সুবাদেই তিনি লালবাতি পেয়েছেন। অথচ এই গাড়িটি যে সরকারি নয়, তা শুভাশিসবাবু নিজেই স্বীকার করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “আমি লালবাতি পাওয়ার যোগ্য বলেই লাগিয়েছি। আর এই গাড়িটি আমার। তেল খরচ আমিই বহন করি। ব্যক্তিগত গাড়িতে লালবাতি লাগিয়ে সপরিবারে ঘোরার পিছনে তাঁর বক্তব্য, দফতর থেকে এখনও গাড়ি পাইনি। তাই সরকারি অনুষ্ঠানে সপরিবার আমন্ত্রণ পেয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতেই লালবাতি লাগিয়ে এসেছি।” |
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এক নির্দেশে জানিয়েছে, এ বার থেকে বেআইনি ভাবে লাল বাতি ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও পরিচয় ভাঁড়ানোর মামলা করতে পারবে পুলিশ। ওই রায়ে বলা হয়েছিল, শুধুমাত্র সরকারি কাজে বা কাজের প্রয়োজনে গাড়িতে লাল বাতি ব্যবহার করা যাবে। ব্যক্তিগত কাজে কোনও ভাবেই নয়। অন্য সময়ে বাতিটিকে কাপড় বা অন্য কিছুতে ঢেকে রাখতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিবার-পরিজন কোনও মতেই গাড়িতে লালবাতি জ্বালিয়ে ঘুরতে পারবেন না বলেও পরিষ্কার জানিয়েছে হাইকোর্ট।
এই প্রেক্ষিতেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ব্যক্তিগত গাড়িতে কী ভাবে শুভাশিসবাবু লালবাতি লাগাতে পারেন। নিয়ে প্রশাসনিক মহলেও আপত্তি আছে। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তা এ দিন বলেন, “শুভাশিসবাবু লালবাতি ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁর দফতরকে সে কথা জানানোও হয়েছে। অথচ তিনি তা ব্যবহার করেই চলেছেন।” সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের কটাক্ষ, “লাল রং এত অপছন্দ, তা হলে তৃণমূল নেতাদের লালবাতি এত পছন্দ কেন?” তাঁর দাবি, শুধু বিধায়কেরাই নন, তৃণমূলের ব্লক নেতাদেরও প্রায়ই লালবাতির গাড়ি চড়ে ঘুরতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “শুভাশিস শিক্ষিত ছেলে। উনি নিয়মবিরুদ্ধ কোনও কাজ জেনেশুনে করবেন না। ওঁর অধিকার আছে বলেই গাড়িতে লালবাতি লাগিয়েছেন।”
এ ক্ষেত্রে পুলিশ কী করছে, কেন ব্যবস্থা নেয়নি, তা অবশ্য জানা যায়নি। জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। |