লগ্নি সংস্থায় ঠকে আস্থা ডাকঘরে
সারদা এবং অন্যান্য লগ্নি সংস্থাগুলির উপর থেকে ভরসা উঠে যাওয়ার পরে সীমান্ত এলাকায় বাসিন্দারা ফিরছেন ডাকঘরে।
সীমান্তের হোগলবেড়িয়া, তেহট্ট কিংবা করিমপুরের বিভিন্ন ডাকঘরগুলিতে তাই পুরনো ভিড়ের ছবি। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমানতকারীরা স্পষ্টই কবুল করছেন, সারদা-কাণ্ড তাঁদের ‘চোখ’ খুলে দিয়েছে।
রঘুনাথপুর রামনগর শাখা ডাকঘরের পোষ্টমাস্টার দীনবন্ধু দত্ত বলেন, ‘‘গত এপ্রিলে এই ডাকঘরে মাত্র ১৬ জন নতুন সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। মে মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত নতুন সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৯৮টি। ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৯ টি নতুন রেকারিং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। তারপর এই ক’মাসে আর কোন নতুন রেকারিং অ্যকাউন্টই খোলা হয়নি। মে মাসে নতুন রেকারিং অ্যকাউন্ট খোলা হয়েছে ১৮টি। সীমান্তঘেঁষা এরকম একটি শাখা ডাকঘরে এটা কিন্তু বিরাট ব্যাপার।” তিনি জানান, টানা ২৩ বছরে এমনটা দেখেননি তিনি। দীনবন্ধুবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা আসছেন নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে তাঁরা কমবেশি সকলেই বেশি সুদের লোভে বেশ কিছু সংস্থায় টাকা রেখে বড় রকমের চোট খেয়েছেন। এখন তাঁরা বলছেন বেশি সুদ না হোক অন্তত টাকাটা যেন সুরক্ষিত থাকে।’’

করিমপুরে পোস্ট অফিসের সামনে আমানতকারীরা।—নিজস্ব চিত্র।
হোগলবেড়িয়া শাখা ডাকঘরে ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন সেভিংস অ্যকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৪ টি। মার্চ ও এপ্রিল মিলিয়ে মোট ১২ টি ২৩ মে পর্যন্ত ২৫ টি নতুন সেভিংস অ্যকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানকার পোষ্টমাস্টার নির্মল সরকার বলছেন, ‘‘নতুন অ্যকাউন্টের সংখ্যা গত মাসের শেষ থেকে হঠাৎ বাড়তে শুরু করেছে। আসলে বেশি লাভের লোভে সীমান্ত এলাকার বহু মানুষ নানা সংস্থায় টাকা রেখে শেষ পর্যন্ত আসল সুদ কিছুই ফেরত পাননি। তাই হয়ত আর কেউ ঝুঁকি নিচ্ছে না।’’ যমশেরপুর উপ ডাকঘরে মার্চ ও এপ্রিলে নতুন সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল ১৩৯ টি। ২৩ মে পর্যন্ত নতুন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১১২ টি। এই কদিনে এটা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন ডাককর্মীরা। এই উপ ডাকঘরেই এপ্রিলে নতুন রেকারিং অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪ টি। ২৩ মে পর্যন্ত নতুন রেকারিং হয়েছে ৬২ টি। নতুন সেভিংস কিংবা রেকারিং অ্যকাউন্টের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলেই জানিয়েছেন সীমান্তের শিকারপুর উপ ডাকঘরের পোষ্টমাস্টার দীপক সাহাও।
নদিয়া জেলার নর্থ ডিভিসনের সুপারিনটেনডেন্ট জয়ন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রান্তিক ডাকঘরগুলোতে সম্প্রতি নতুন অ্যকাউন্টের সংখ্যা বাড়ছে বলে আমরাও জানতে পেরেছি। এটা নিঃসন্দেহে ভাল ব্যাপার।’’ এটা কি সাম্প্রতিক ঘটনার প্রভাব? জয়ন্তবাবু বলছেন, ‘‘সেটা হতেও পারে। তবে আরও কিছু দিন গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।’’
বৃহস্পতিবার দুপুরে ছায়া মণ্ডল, সোহাগী মণ্ডল, আমবেয়া বিবি ও যমুনা মণ্ডলরা ডাকঘরের সামনে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ওদের কেউ নতুন অ্যকাউন্ট খুলেছেন দিনকয়েক আগে। এসেছেন টাকা জমা দিতে, কেউ আবার ভোটের ছবির জেরক্স ও দু’কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে এসেছেন। নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে ওদের কেউ কেউ লগ্নি সংস্থায় পাঁচ হাজার টাকা রেখেছিলেন। পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হবে বলে কেউ রেখেছিলেন ২৫ হাজার। সব টাকাই জলে গিয়েছে। এখন ওরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘খুব হয়েছে আর নয়। পুরনো ডাকঘরই ঢের ভাল সুদ বেশি না হোক টাকাটা অন্তত সুরক্ষিত থাকবে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.