আবার একটি দফতর। এ বার আদিবাসী উন্নয়নের জন্য। ইতিপূর্বে অনগ্রসর শ্রেণির উন্নয়নের জন্য একটি দফতর ছিলই। তাহার ভারপ্রাপ্ত একজন মন্ত্রীও ছিলেন। আদিবাসী উন্নয়নের কাজটিও তিনিই দেখাশুনা করিতেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিশ্চয় মনে হইয়াছে, অল্পে সুখ নাই। অন্যথা কেন তিনি আদিবাসী উন্নয়নের জন্য স্বতন্ত্র দফতর গড়িয়া নিজের হাতেই তাহা রাখিয়া দিবেন? এতদ্দ্বারা যে আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রীর প্রতি অনাস্থাও জ্ঞাপন করা হইল, পর্যবেক্ষক মাত্রেই তাহা বলিবেন।
লক্ষণীয়, এই নূতন দফতর তৈয়ারি হইয়াছে ডুয়ার্সের আদিবাসী বিকাশ পরিষদের প্রতিনিধিদলের সহিত আলোচনার ভিত্তিতে। তাহার অর্থ সম্ভবত ইহাই যে, রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে ছড়াইয়া থাকা বহুসংখ্যক আদিবাসীর (সাঁওতাল, মুণ্ডা প্রভৃতি জনজাতি) উন্নয়ন লইয়া মাথা ঘামাইবে না এই দফতর। এমনকী পার্বত্য দার্জিলিঙের গোর্খা জনজাতির উন্নয়নের প্রশ্নটিও এই দফতরের এক্তিয়ারের বাহিরে থাকিবে, কেননা সে জন্য আলাদা দফতর ইতিমধ্যেই রহিয়াছে। মুখ্যমন্ত্রীর নিজেরই কথায়, ‘পাহাড় আমি দেখছি। সংখ্যালঘু আমি দেখছি। এখন থেকে আদিবাসী উন্নয়নও আমিই দেখব’। সব কিছু কেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীকেই দেখিতে হইবে, সেই অস্বস্তিকর প্রশ্নটি না তুলিয়াও একটি বিষয় উপেক্ষা করা কঠিন। মুখ্যমন্ত্রী এই নূতন দফতরের কাজকর্মের কথা বলিতে গিয়া রাজ্যে বসবাসকারী তেরোশো পঞ্চাশটি টোটো পরিবারের কথাই কেবল বলিয়াছেন। তাহাদের মাসে আট কেজি চাল বিনামূল্যে দেওয়া, গম দেওয়া এবং মাধ্যমিক পাশ করা একটি টোটো মেয়েকে চাকুরি দিবার কথাও বলিয়াছেন। পৃথক একটি সরকারি দফতর না গড়িয়া কি এই কাজগুলি করা যাইত না?
সরকারি অচলায়তনটিতে নিত্য নূতন মহল জুড়িবার ব্যাধি এই সরকারের মজ্জাগত। কোনও অনিয়ম হইলেই একটি কমিটি গড়িয়া দেওয়া, কখনও আবার সেই কমিটিকে পরামর্শ দানের জন্য একটি উপদেষ্টা পর্ষত্ গড়িয়া দেওয়া। আর প্রশাসনিক কাজকর্ম চালাইতেও একটি দফতর ভাঙিয়া অসংখ্য দফতর গড়িতে থাকা। প্রতিটি দফতরেরই আধিকারিক, অফিস, কর্মী, গাড়ি ইত্যাদি লাগে। সেই বাবদ অনেক লোককে কাজ দেওয়া যায়, সরকারকে তাহাদের বেতন ও অন্যান্য খরচও বহন করিতে হয়। কাজের জটিলতা বাড়ে, দফতরগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। তবে দফতরের মাথায় এক জন পছন্দের রাজনীতিককে ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী করিয়া এবং তাঁহার মাথার উপর আরও এক জনকে মন্ত্রীর উপদেষ্টা করিয়া বসানো যায়। এই ভাবে অনুগ্রহ বিতরণের প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘস্থায়ী করিয়া তোলা যায়। এ ভাবেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর গড়িয়া মুখ্যমন্ত্রী আপাতত নিজের হাতে তাহা রাখিয়াছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচন আসিতেছে। আদিবাসীদের জন্যও নানা জনমোহিনী কর্মসূচি ঘোষণা করিয়া জনসমর্থন নিশ্চিত করার সুযোগ আছে। সেই সুযোগ হাতছাড়া করার প্রশ্ন নাই। |