চলতি মাস থেকেই লোকশিল্পীদের জন্য পেনশন চালু করার কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তা-ই নয়, সরকারি নানা কাজের প্রচারেও লোকশিল্পীদের সামিল করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা অবশ্য মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি পুরুলিয়ার বরাবাজার থানার লটপদা গ্রামের এক বৃদ্ধকে। তিনি ঝুমুর গানের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী সলাবত মাহাতো। গত এক বছর ধরে প্রাপ্য পেনশনের এক টাকাও পাচ্ছেন না ‘লালন পুরস্কার’প্রাপ্ত এই বিশিষ্ট লোকশিল্পী। মুখ্যমন্ত্রীর নতুন ঘোষণার কথা শুনে ৭৫ বছরের বৃদ্ধ বললেন, “আমিও তো পেনশন পেতাম, সেটা তো বন্ধ হয়ে গেল! যে সব শিল্পী পেনশন পাচ্ছেন না, সরকারের তাঁদের কথাও ভাবা উচিত।” |
সলাবত মাহাতো রাজ্য সরকারের চারুকলা কেন্দ্র ২০১০ সাল থেকে মাসিক ১৫০০ টাকা করে শিল্পী-ভাতা পেতেন। কিন্তু গত এক বছর ধরে এক টাকাও পাননি। জট কাটাতে অসুস্থ শরীরে ছেলের সঙ্গে বেশ কয়েক বার কলকাতার অফিসে গিয়ে জমা করেছেন অভিযোগ। এমনকী বলরামপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি। ‘বাউল ফকির কথা’ গ্রন্থে সলাবত মাহাতোর কথা লিখেছেন বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতি গবেষক সুধীর চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “সলাবত মাহাতো মূলত ঝুমুরশিল্পী হলেও জীবিকার টানে তাঁকে বাউল গানও গাইতে হয়েছে। তিনি বহু ঝুমুর গান লিখেছেন। আমি নিজে ওঁর সঙ্গে দেখাও করেছি।” এমন শিল্পীর পেনশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে বিস্মিত সুধীরবাবু।
শিল্পীর ছোট ছেলে তাপস মাহাতো (নিজেও ঝুমুর শিল্পী) বলেন, “এই বয়সে বাবা আর বাইরে গিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারেন না। পেনশনটা আছে ভেবে বাবা একটু নিশ্চিন্ত বোধ করেছিলেন।” প্রতি ছয় মাস অন্তর হাতে পেতেন প্রায় নয় হাজার টাকা। এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ চেক আসত। কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে আর কোনও চেক আসেনি। সলাবতবাবুর স্ত্রী শঙ্করীদেবী বলছেন, “পেনশন আটকে যাওয়াতে উনি খুব মনমরা হয়ে আছেন। মাঝে মাঝেই নিজের মনে বিড়বিড় করে বলেন, ‘এইটুকু পেনশন, তাতেও এত উপেক্ষা’।”
কী কারণে বন্ধ পেনশন?
এ বিষয়ে পরিষ্কার করে বলতে পারেননি কেউই। পুরুলিয়া জেলার সহকারী তথ্য ও সংস্কৃতি অধিকর্তা সিদ্ধার্থ বসু বলেন, “সলাবতবাবুর পেনশন কেন আটকে আছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।” অন্য দিকে, রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “তাঁর মতো একজন দুঃস্থ শিল্পীর পেনশন কেন আটকে আছে জানতে, ওই অফিসে চিঠি দিয়েছি।” |