উলউইচে ব্রিটিশ সেনাকে খুন করার ঘটনায় ইসলামি মৌলবাদীরাই জড়িত বলে জানিয়ে দিল ব্রিটিশ পুলিশ। ওই ঘটনায় নাইজেরীয়-বংশোদ্ভূত এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে উলউইচে রয়্যাল আর্টিলারি রেজিমেন্টের ব্যারাকের বাইরে লি রিগবি নামে এক সেনাকে হঠাৎ গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মারে দুই কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। তার পরেই গাড়ি থেকে নেমে সেনার উপরে অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় তারা। শেষ পর্যন্ত রাস্তার উপরেই ওই সেনার মাথা কেটে নেয় যুবকরা।
দিনদুপুরে লন্ডনের রাস্তায় যখন এই ঘটনা ঘটছে, তখন রাস্তায় বহু লোক। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়েন সকলে। সেনার মাথা কেটে দেওয়ার পরে রাস্তায় রক্তাক্ত ছুরি হাতে নাচতে শুরু করে দেয় দুই যুবক! এই পরিস্থিতিতে রুখে দাঁড়ান এক মহিলা। আততায়ীদের সামনে দাঁড়িয়ে ইনগ্রিড-লোয়ায়ু-কেনেট নামে কাব স্কাউট সংগঠনের সদস্য ওই মহিলা তাদের বুঝিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। |
ইনগ্রিড এক যুবকের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে বলেন, “আর কাউকে মেরো না। ছুরিগুলো আমাকে দিয়ে দাও।” জবাবে যুবক বলে, “আমরা লন্ডনে আজই লড়াই শুরু করতে চাই। ব্রিটিশ সেনা আমাদের দেশে যে সব কাজকর্ম করছে, এটা তারই বদলা।” পরে জানা গিয়েছে ওই যুবক নাইজেরীয় বংশোদ্ভূত মাইকেল আদেবোলাজো। ইনগ্রিড পাল্টা জবাব দেন, “আজ তোমাদের লড়াইটা অনেকের সঙ্গে। কাজেই তোমরা হারবেই।” এগিয়ে আসেন আরও দুই মহিলাও। নিহত সেনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন তাঁরা। তবে তখন আর তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন ছিল না। অনেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দি করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেই ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে টুইটার-সহ একাধিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে এসে পড়ে লন্ডন পুলিশ। তাদের গুলিতে জখম হয় দুই আততায়ী। আপাতত তারা কড়া নিরাপত্তায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইনগ্রিড যে ভাবে আততায়ীদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেছেন, তার প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও।
গোটা ঘটনার সাক্ষী ছিলেন র্যাপ গায়ক বোয়া ডি। প্রথমে উলউইচে একটি সাধারণ দুর্ঘটনার খবরই টুইটারে দিয়েছিলেন তিনি। তার পরেই আঁতকে উঠে জানান, “হা ঈশ্বর, ওরা লোকটার গলা কেটে দিচ্ছে!” আততায়ীদের বিজয়নৃত্য, পুলিশের গুলি সবই টুইটারে জানিয়েছিলেন তিনি।
ঘটনার কথা শুনেই সফর কাটছাঁট করে প্যারিস থেকে ফিরে আসেন ডেভিড ক্যামেরন। মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠকও ডাকা হয়। ক্যামেরনের কথায়, “আজ আমাদের সকলের হয়েই কথা বলেছেন ইনগ্রিড-লোয়ায়ু-কেনেট। সন্ত্রাসের কাছে ব্রিটেন মাথা নত করবে না।”
লন্ডন পুলিশ জানিয়েছে, এই দুই যুবকের উপরে নজর রাখছিলেন গোয়েন্দারা। মৌলবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এমন অনেকের উপরেই এ ভাবে নজর রাখা হয়। গত কালের হামলা আটকানো যেত কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ সূত্রে খবর, মাইকেল আদেবোলাজো নাইজেরীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই জঙ্গি ভাবধারার প্রতি বিশ্বাস জন্মায় তার। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে সে। ব্রিটেনে নিষিদ্ধ একাধিক মৌলবাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছিল মাইকেল। এক বার সোমালিয়ায় জঙ্গি সংগঠন আল সাহবাবে যোগ দিতে যাওয়ার পথে তাকে আটকায় ব্রিটিশ পুলিশ। আজ লিঙ্কনশায়ারে তার বাড়িতে হানা দিয়েছে পুলিশ।
গোয়েন্দাদের মতে, মাইকেল ও তার সঙ্গীর সঙ্গে নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামের কোনও যোগ নেই। তবে সরাসরি যোগ না থাকলেও ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমী দেশে বসেই আল-কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনের আদর্শে বিশ্বাস করে অনেকে। এই ধরনের হামলা যে হতে পারে, তা তাঁরা আঁচ করেছিলেন। তবে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য তাঁদের হাতে ছিল না।
সবে সেনাবাহিনীতে কাজ শুরু করেছিলেন ২৫ বছরের রিগবি। সম্প্রতি গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। সহকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বল, প্রাণশক্তিতে ভরপুর বলে পরিচিত ছিলেন তিনি। দু’বছরের একটি ছেলে রয়েছে তাঁর। আজ ঘটনাস্থলে ফুল দিয়ে রিগবিকে শ্রদ্ধা জানান অনেকে। মৌলবাদের কাছে হেরে না যাওয়ার বার্তা দিয়েই। |