২০০৯-২০১০ আর্থিক বছরে পাঠানো ইন্দিরা আবাস যোজনার প্রায় ৩০ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি মালদহ জেলা। জেলা পরিষদ থেকে বিভিন্ন ব্লকে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে। অথচ তা বিডিও অফিসের আওতায় পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিপিএলভুক্ত পরিবারের জন্য ইন্দিরা আবাস যোজনার বিপুল পরিমাণ টাকা সময় মতো খরচ না-করে ফেলে রাখার বিষয়টি নজরে আসতে জেলা প্রশাসনের কর্তারা নড়েচড়ে বসেন। জেলাশাসক জেলার ১৫টি ব্লকের বিডিও-কে ডেকে ওই টাকা দ্রুত খরচ করার নির্দেশ দেন।
জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেছেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনার টাকা অনেক দিন ধরে বিভিন্ন ব্লকে পড়ে আছে। বিডিওদের দ্রুত ওই টাকা খরচ করতে বলেছি।” এ দিকে তিন বছর ধরে প্রকল্পের টাকা ফেলে রাখার জন্য বিডিওদের দুষেছেন মালদহ জেলা পরিষদের কংগ্রেস সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী। তিনি বলেন, “গ্রামে প্রচুর গরিব মানুষ আছে। তাঁদের ঘর নেই। অথচ ঘর তৈরির টাকা পড়ে আছে। ব্লক প্রশাসনে গাফিলতির জন্য ওই ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি সভায় বিডিওদের বলেছি দ্রুত গরিবদের ঘর তৈরির টাকা দেওয়া হোক। বিডিও-রা শুনছেন না। ওঁরা একটু তৎপর হলে এ ভাবে টাকা পড়ে থাকত না।”
কালিয়াচক ১, হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ও ২ ব্লকে ইন্দিরা আবাস যোজনা খাতে বেশি টাকা পড়ে আছে। কালিয়াচক-১ ব্লক ওই প্রকল্পের ১২ কোটি টাকা খরচ করতে পারেনি। হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকে ৬ কোটি টাকা, হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকে প্রায় ৬ কোটি টাকা পড়ে আছে।
যদিও জেলা পরিষদের তোলা এ নালিশ ব্লক প্রশাসন অস্বীকার করে। তাঁদের অনেকেরই অভিযোগ, বাড়ি তৈরি না করে অন্য কাজে টাকা খরচ করার মতো প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ায় ওই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কালিয়াচক-১ বিডিও দীপ্তার্ক বসু বলেন, “২০০৯-২০১০ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় প্রায় ১৯ কোটি টাকা পেয়েছিলাম। তার মধ্যে ১২ কোটি টাকা এখনও পড়ে আছে।”
কেন ওই টাকা এত দিনেও খরচ করা হয়নি? তিনি জানান, ওই সময় যে সমস্ত উপভোক্তাদের প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হয় দ্বিতীয় কিস্তির টাকার জন্য আবেদন করলে অভিযোগ আসে বাড়ি না করে টাকা খরচ করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত করে দেখা যায় দেড়শোর বেশি উপভোক্তা বাড়ি তৈরি না করে পুরনো বাড়ি দেখিয়ে দ্বিতীয় দফার টাকার জন্য আবেদন করেছে। দীপ্তার্কবাবু বলেন, “এর পরে উপভোক্তাদের দ্বিতীয় দফার টাকা আর বিলি করা হয়নি। পাশপাশি পাঁচশো জনের বেশি উপভোক্তার বাড়ি ফের ব্লক এবং পঞ্চায়েত সমিতি থেকে পৃথক ভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আশা করছি ১৫-২০ দিনের মধ্যে তদন্তের কাজ শেষ হবে। এর পরে প্রকৃত উপভোক্তাদের টাকা দেওয়া হবে।”
হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নম্বর ব্লকের বিডিও কৌশিক পাল বলেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনার উপভোক্তার তালিকায় প্রচুর উল্টোপাল্টা নাম ঢুকে আছে। ওই তালিকা ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। খতিয়ে না দেখে প্রকল্পের টাকা না বিলি করা হয় তবে একই ব্যক্তি দু’বার টাকা পেয়ে যেতে পারে। ওই কারণে দেরি হচ্ছে।” হরিশ্চন্দ্রপুর-১ ব্লকের বিডিও সুদর্শন চৌধুরী বলেন, “ছয়মাস হল ব্লকের দায়িত্বে এসেছি। গত তিনবছর আগে বরাদ্দ ছয় কোটি টাকা কেমন করে খরচ করা যায় দেখা হচ্ছে।” কিন্তু ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের ওই অভিযোগ অস্বীকার করেন গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানরা। তাঁরা জানান, যে সমস্ত মানের তালিকা নিয়ে কোনও সংশয় নেই সেই ক্ষেত্রেও টাকা দেওয়া হচ্ছে না। ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতের কংগ্রেস প্রধান বিমান বসাক বলেন, “দেড় বছর আগে আড়াই হাজার নামের তালিকা পাঠিয়ে বসে আছি। টাকা দিতে ঘোরানো হচ্ছে।’’ |