ঘর থেকে এক ছুটে বউ গিয়ে ঝাঁপ দিলেন কুয়োয়। পিছনে পিছনে ঝাঁপ মারলেন স্বামীও। ভাগ্য ভাল, বউয়ের ঘাড়ের উপরে পড়েননি!
ফুট ছয়েক চওড়া আর পঁয়ত্রিশ ফুট গভীর কুয়োয় এখন মেরেকেটে কোমর জল। সেখানে দাঁড়িয়েই স্বামী-স্ত্রীর তুমুল ঝগড়া। মঙ্গলবার সাতসকালে এই কাণ্ডে হতভম্ব হয়ে যান পুরুলিয়া শহরের নডিহা এলাকার বাসিন্দারা। তাজ্জব হতে অবশ্য আরও কিছু বাকি ছিল। কুয়োর পাড়ে গিয়ে পড়শিরা দেখলেন, একটু আগে পাড়া কাঁপিয়ে যেমন ঝগড়া করছিলেন, কুয়োর কোমর জলে দাঁড়িয়েও তা জারি রেখেছেন ওই দম্পতি।
পড়শিরা কেউ দৌড়োলেন দমকলে ফোন করতে, কেউ থানায়। তাঁদের উদ্বেগ পৌঁছয়নি গণেশ দত্ত ও তাঁর স্ত্রী বর্ষার কাছে। লোকের দোকানে দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির পরে একটু মদ না খেলে যে তাঁর ঘুম আসে না, গণেশ সে কথাই বউকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। আর বর্ষা হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন, “ফের যদি মদ খাও তো আমি উপরে উঠবই না। এই কুয়োর মধ্যেই মরব।” মাঝে মধ্যে বেহুঁশ হয়ে পড়ছিলেন বর্ষা। স্ত্রীর চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে এনেছেন গণেশই। ফের শুরু হয়েছে ঝগড়া। |
ততক্ষণে দমকল কর্মীরা দড়ি নিয়ে হাজির। খানিক পরেই আসেন পুলিশ কর্মীরা। কোমরে দড়ি বেঁধে এক দমকল কর্মী তরতরিয়ে কুয়োয় নেমে যান। হাতে দু’গাছা দড়ি, গণেশ ও তার বউকে তুলে আনার জন্য। ওপরে তোলার জন্য দমকল কর্মী বর্ষার কোমরে দড়ি বাঁধতে গেলে বেঁকে বসেন তিনি। গোঁ ধরেন, ওপরে উঠবেন না। মদ্যপ স্বামীর ঘর আর কিছুতেই তিনি করবেন না। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার ‘ট্রেনিং’ অবশ্য দমকলকর্মীর নেওয়া ছিল না। হাল ছেড়ে তিনি দড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসেন। পড়শিরা তত ক্ষণে গণেশের মা আর বর্ষার ছোট্ট মেয়েকে সামাল দিতে নাজেহাল।
পুরুলিয়া দমকল কেন্দ্রের ওসি সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বুঝিয়ে কাজ না হওয়ায় ওঁদের জোর করে তুলে আনতে এ বার দু’জন কর্মীকে নীচে নামাই। তাঁরাই কোনওরকমে গণেশ ও বর্ষাকে তুলে আনেন।” দমকলকর্মীরা জানান, কুয়োর নীচে জল ও পাঁক থাকায় এ যাত্রা হাত-পা ভাঙেনি স্বামী-স্ত্রী’র। তবে দু’জনেরই হাত-পা কিছুটা কেটে-ছড়ে গিয়েছে। পুলিশ তাঁদের গাড়িতে তুলে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সেখান থেকে সোজা পুরুলিয়া সদর থানায় বড়বাবুর চেম্বারে। ওসি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনকেই বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কাকে বোঝাবেন? গণেশ বসেছিলেন ব্যাজার মুখে। আর বর্ষা চেয়ে ছিলেন মেঝের দিকে। হঠাৎ গণেশ বলেন, “আমার মদ খাওয়া নিয়েই যখন এত অশান্তি, ও জিনিস আর ছোঁবই না।”
হাসি ঝলকে ওঠে বর্ষার মুখে। বলেন, “বিয়ের পরে দু’বছর ধরে এমন কত কথাই শুনেছি। এ বার দেখা যাক।” |