স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন। তবু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওই নির্বাচনের গুরুত্ব বাম, তৃণমূল দু’পক্ষের কাছেই ছিল। দুই তরফেই এটা ছিল ‘সম্মান’ রক্ষার লড়াই। পাশাপাশি, দু’পক্ষেরই ধারণা, এই নির্বাচনে জিততে পারলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে অন্যপক্ষের থেকে তারা কিছুটা এগিয়ে থাকতে পারবে।
উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর ঠাকুর হরিদাস বালিকা বিদ্যালয়ে গত ১৯ মে ওই নির্বাচনে অবশ্য তৃণমূলকে হারিয়ে দেয় বামেরা। ৬টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে পাঁচটি। তৃণমূল পেয়েছে একটি আসন। স্বাভাবিক ভাবেই এই ফলে বেশ স্বস্তিতেই বাম নেতৃত্ব। আর এই স্বস্তির কারণ হিসাবে সিপিএমের ব্যাখ্যা, ওই স্কুলের তেরোশো ভোটারের মধ্যে সাড়ে ন’শো ভোটার ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে বলে তাদের দৃঢ় ধারণা। বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সিপিএমের গোবিন্দ মণ্ডল বলেন, “ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই স্কুলের জয় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এর ফলে আমাদের দলের কর্মীরা নতুন উদ্যমে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উৎসাহ পাবেন।”
ছয়ঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই স্কুল। বনগাঁ উত্তর বিধানসভা এলাকার মধ্যে যে সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে তার মধ্যে দু’টি বামেদের দখলে। আর এই দু’টিরই একটি হল ছয়ঘরিয়া। নিজেদের দখলে থাকা পঞ্চয়েত এলাকার স্কুলে জেতাকে কেন আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে বামেরা?
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিধানসভা নির্বাচনের পরে ওই এলাকার রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে গিয়েছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ স্থলবন্দর পেট্রাপোল এই এলাকাতেই। বিধানসভা নির্বাচনের পরে বন্দর এলাকায় সিটু ছেড়ে বহু কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। শুধু সিটুর সদস্যরাই নন, বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তার উপর কিছুদিন আগে পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের পরিতোষ অধিকারীর বিরুদ্ধে ১০০ দিনের প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। যা নিয়ে জোরদার প্রচারে নামে তৃণমূল। এই অবস্থায় স্কুলের নির্বাচনে জিততে মরীয়া ছিল সিপিএম। হাল ছাড়ার পাত্র ছিল না তৃণমূলও। দলীয় কোন্দলে জেরবার তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের আশা ছিল, এই স্কুল নির্বাচনে জিতলে দলের কোন্দল কিছুটা স্তিমিত হবে। কর্মীরা চাঙ্গা হবেন। যা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাদের সাহায্য করবে। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় তৃণমূল নেতৃত্বের সেই আশা বিফলে গেল বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।
দলের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস অবশ্য তা মনে করেন না। তাঁর কথায়, “স্কুল নির্বাচনে আমরা হেরে গিয়েছি, এটা ঠিক। কিন্তু তার কোনও প্রভাবই পঞ্চায়েত নির্বাচনে পড়বে না।” পাশাপাশি সিপিএমের জেতার পক্ষে তাঁর যুক্তি, “ওই স্কুলে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষমতায় রয়েছে সিপিএম। তারা ভুয়ো ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। তার ফলেই ওদের এই জয়।” পাশাপাশি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, স্কুল নির্বাচনে এই হারের দায় এড়াতে পারে না দলের বনগাঁ শহর নেতৃত্বও। কারণ নির্বাচনী কাজকর্মে তারাও জড়িত ছিল।
তবে রাজনৈতিক মহলের দাবি, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের এই এলাকার রাজনীতির অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয় সীমান্তের অবৈধ কারবারীদের দ্বারা। তাই নির্বাচনের ফলে যে প্রভাব পড়বে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। |