নতুন সরকারের দু’বছরের মাথায় নতুন শিল্পনীতি পাওয়া গেল। যেমনটি ভাবা গিয়েছিল, ঠিক তেমনটিই হয়েছে এই শিল্পনীতি। ক্ষুদ্র শিল্পকেই যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যতের পথ হিসেবে দেখছেন, মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ক্ষুদ্র শিল্পে বাংলা সারা বিশ্বকে জয় করতে পারে। এই শিল্পের জন্য কোটি-কোটি টাকা ঢালতে হবে না। গ্রামীণ হাট, গ্রামীণ শিল্পকে উৎসাহ দেওয়াই সরকারের লক্ষ্য।’ অর্থাৎ, বাড়ির উঠোন থেকেই পশ্চিমবঙ্গের শিল্পের উড়ান হবে। ‘উঠোনে শিল্প’ বলতেই পঞ্চাশ বছরেরও বেশি পুরনো আর এক উন্নয়ন মহাযজ্ঞের কথা মনে পড়ে গেল। ১৯৫৮ সালে চিনে ‘গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড’ নীতি ঘোষণা করলেন মাও জে দং। আরও পাঁচটা জিনিসের সঙ্গে স্থির হল, প্রত্যেক বাড়ির উঠোনে ইস্পাত তৈরি করতে হবে। রাতারাতি চুল্লি তৈরি হল বাড়িতে বাড়িতে। আকরিক লোহা আর ক’জনের নাগালে থাকে! ফলে, হাতের কাছে যা পাওয়া গেল, ঘটিবাটি বাইসাইকেল চুল্লিতে নিক্ষিপ্ত হল। কয়লা থেকে কফিনের কাঠ, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হল সবই। ইস্পাত তৈরি হবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক কুচি ইস্পাতও পাওয়া যায়নি। যা উৎপন্ন হয়েছিল, তা হল নিম্ন শ্রেণির পিগ আয়রন।
এই বঙ্গে আদি নকশালপন্থী থেকে আজকের জঙ্গলে বন্দুক হাতে ঘুরে বেড়ানো অতি বাম, বিবিধ রকমের গোষ্ঠী বিবিধ সময়ে মাও-নামাবলি গায়ে জড়িয়েছিলেন। কিন্তু মাও-এর দেখানো পথে নিষ্ঠাভরে হাঁটার আসল কাজটি মমতাদেবীর আগে আর এক জনও করতে পারেননি। মাও-এর পথই যে বাংলার পথ, সে কথা মুখে অনেকেই বলেছেন, কিন্তু কাজে এই প্রথম। অতএব এই দেশে প্রকৃত মাওবাদী কে সে প্রশ্নের ঠিক উত্তরের জন্য কোনও পুরস্কার নেই।
প্রেমাংশু ভট্টাচার্য। কলকাতা ৬৪ |