|
|
|
|
ছন্নছাড়া জোট, ভাঙা হাটে আজ বর্ষপূর্তি ইউপিএর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সব শরিক নেতা ছাড়া গত বছর ইউপিএ-র রিপোর্ট কার্ড হাতে মঞ্চে ছিলেন সরকারের সমর্থক দলের নেতা মুলায়ম সিংহও। এমনকী নৈশভোজে সনিয়া-মনমোহন-রাহুলের পাশে কোন শরিক নেতা-নেত্রী বসছেন, তা নিয়েও জল্পনা ছিল উচ্চগ্রামে। অথচ লোকসভা ভোটে যাওয়ার আগে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের চতুর্থ তথা শেষ বর্ষপূর্তি উৎসবে কাল ভাঙা হাটের ছবিটাই যেন ভবিতব্য হয়ে উঠতে চলেছে! গত এক বছরে তৃণমূল, ডিএমকে-সহ চারটি শরিক দল জোট ছেড়ে চলে গিয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের তরফে নিমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও আগামী কাল ইউপিএ-র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান থেকে দূরত্ব রাখতে চাইছে দুই সমর্থক দল সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টিও। পরিস্থিতি এমনই যে বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান নিয়ে বিশেষ উৎসাহ নেই সরকারের অন্দরেও।
খোদ কংগ্রেস নেতৃত্বই স্বীকার করছেন, একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার ফলেই এমন ভাঙা হাটের দশা। এমনকী কর্নাটকে দলের নির্বাচনী সাফল্যও কার্যত গ্রাস করে নিয়েছে মন্ত্রিসভার দুই কংগ্রেস সদস্যের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ওঠা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ। মূলত সেই কারণেই সম্ভাব্য কোনও শরিক দল তো দূর, মায়াবতী-মুলায়মের মতো সমর্থক দলের নেতারাও দূরত্ব রাখতে চাইছেন। কারণ, একে তো কংগ্রেসের সঙ্গে এঁদের প্রাক্-নির্বাচনী সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। তার ওপর এঁরা মনে করছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে গা ঘষাঘষি করলে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোটারদের মনে তৈরি হওয়া প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার ফল ভুগতে হবে তাঁদেরও।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ইউপিএ-শরিক এনসিপি-র নেতা তথা কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প ও রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ মন্ত্রী প্রফুল্ল পটেল আজ বলেন, “এমন নয় যে গত ৯ বছরে ইউপিএ সরকারের আমলে কোনও কাজই হয়নি। বরং সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য একশো দিনের কাজ, ভতুর্কি নগদে হস্তান্তর-সহ এমন কিছু প্রকল্প রূপায়িত হয়েছে যা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এমনকী বিশ্বজনীন মন্দার পরিবেশ সত্ত্বেও সেই আঁচ থেকে অনেকটাই দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সফল হয়েছে সরকার।” সমস্যাটা তবে কোথায় হচ্ছে? প্রফুল্লর ব্যাখ্যা, “মুশকিল হল, পরের পর দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসায় সরকারের বিরুদ্ধে একটা নেতিবাচক ধারনা তৈরি হয়েছে। যা সরকারের ভাল কাজগুলিকেও ঢেকে দিচ্ছে। ফলে লোকসভা ভোটের আগে আগামী এক বছরে সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করাই হল সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।” প্রশ্ন হল, সেই ভাবমূর্তি উদ্ধারের জন্য কাল বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে কী বার্তা দেবেন সনিয়া-মনমোহন?
অন্যান্য বারের মতো কালও সরকারের রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করবেন ইউপিএ সভানেত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী। সরকার তথা কংগ্রেসের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সেই রিপোর্টে ইউপিএ সরকারের গত ন’বছরের খতিয়ান তুলে ধরা হবে। বিরোধীরা কটাক্ষ করে বলছেন যে, গত এক বছরে সরকার কোনও কাজই করেনি। তাই ন’বছরের খতিয়ান তুলে আনতে হচ্ছে। এর জবাবে কংগ্রেস মুখপাত্র রাজ বব্বর আজ বলেন, “বিজেপি মিথ্যা প্রচার করছে। খুচরো ব্যবসায় এবং বিমান পরিষেবা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির নীতি রূপায়ণ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে ভর্তুকির নগদ হস্তান্তর প্রকল্পের রূপায়ণও শুরু করা হয়েছে। তা ছাড়া, গত এক বছরের মধ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা বিধানে আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে গ্রামীণ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে এক গুচ্ছ প্রকল্প রূপায়ণ করেছে সরকার।”
যদিও কংগ্রেস নেতারাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, গত বছরের বড় একটা সময় নীতিপঙ্গুত্ব গ্রাস করে রেখেছিল সরকারকে। মূলত শরিকি বাধাতেই সরকার সংস্কারের কর্মসূচিগুলি সময়ে রূপায়ণ করতে পারেনি। আর সেই শরিকদের নিয়ে সমস্যার সুযোগ নিয়ে সংসদ অচল করে রাখে বিজেপি-ও। সনিয়া-মনমোহন তাই কাল বিজেপি-র বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হবেন বলে জানাচ্ছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এই প্রসঙ্গে তাঁরা খাদ্য নিরাপত্তা বিল ও জমি বিলের প্রসঙ্গও তুলে ধরবেন।
দশ জনপথ সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি যখন নরেন্দ্র মোদীকে তাঁদের কাণ্ডারী হিসাবে এগিয়ে দিচ্ছে, তখন সরকারের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সনিয়ারা এ-ও জানাবেন যে ইউপিএ-র গত ৯ বছরের শাসনের সব থেকে বড় সাফল্য হল, দেশের ধর্মনিরপেক্ষ বাতাবরণ ধরে রাখা। খাদ্য নিরাপত্তা প্রকল্প রূপায়ণ বা দুর্নীতি দমনে প্রত্যয় দেখানোর মতো প্রশাসনিক বার্তার পাশাপাশি সেটাই হবে সনিয়া-মনমোহনের মূল রাজনৈতিক বার্তা। |
|
|
|
|
|