টর্নেডো কী?
এক ধরনের ঝড়, যা উল্লম্ব মেঘপুঞ্জের ঘূর্ণি থেকে সৃষ্টি হয়।
টর্নেডোতে ক্ষয়ক্ষতি এত বেশি হয় কেন?
উল্লম্ব মেঘের ঘূর্ণি ফানেলের আকৃতিতে একেবারে মাটির কাছাকাছি চলে আসে। ওই ফানেলের মধ্যে যা কিছু পড়ে, সব উড়িয়ে নিয়ে যায় ঝড়। সেই ঝড় একটা ট্রেনের কামরাকেও লাইন থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে আছড়ে ফেলতে পারে। একটা বহুতল বাড়িকে ভেঙেচুরে স্রেফ লোহার কাঠামোয় পরিণত করে দিতে পারে অতি শক্তিশালী টর্নেডো।
টর্নেডো বছরের কোন সময়ে হয়?
শীতের শেষ থেকে বর্ষার শুরু এই সময়টাতেই টর্নেডো হানা দেয় বেশি।
কী ভাবে টর্নেডো তৈরি হয়?
টর্নেডো তৈরি হয় অনেকটা কালবৈশাখীর নিয়ম মেনে। সমুদ্র থেকে গরম জলীয় বাষ্প ভরা বাতাস সমতলে ঢুকে ক্রমশ উপরের দিকে উঠতে থাকে। এক সময়ে তা ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে। আর তার থেকেই তৈরি হয় উল্লম্ব মেঘ। উল্লম্ব মেঘ উচ্চতায় বাড়তে থাকে এবং এক সময় সেই মেঘ ভেঙে গিয়ে তৈরি হয় কালবৈশাখী। টর্নেডো তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াটাও প্রায় একই রকম। তবে এ ক্ষেত্রে বায়ুপ্রবাহের জটিলতায় দীর্ঘকায় উল্লম্ব মেঘের ভিতরে ঘূর্ণি তৈরি হয়। সেই ঘূর্ণি একটি সরু ফানেলের আকারে (মনে হয় যেন হাতির শুঁড়) নেমে আসে মাটির কাছাকাছি। আর মাটি ছুঁয়েই সেই দৈত্যাকৃতি ঘূর্ণায়মান ফানেল তার কেন্দ্রের দিকে সব কিছু টেনে নেয়। তার ফলে ওই ঘূর্ণায়মান ফানেল যে এলাকা দিয়ে যায় সেখানেই ধ্বংসলীলার স্বাক্ষর রেখে যায়।(কোন মেঘপুঞ্জ শেষ পর্যন্ত টর্নেডোতে রূপান্তরিত হবে, এখনও তা অজানা আবহবিজ্ঞানীদের।)
পৃথিবীর কোথায় কোথায় টর্নেডো বেশি হয়?
পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং আমেরিকায় মেক্সিকান খাঁড়ি সংলগ্ন এলাকা। ওকলাহামা এই এলাকার মধ্যেই পড়ে।
|
কেন এই সব এলাকায় বেশি টর্নেডো তৈরি হয়?
টর্নেডোর উল্লম্ব মেঘ তৈরি করে তিনটি জিনিস সমুদ্রের জলীয় বাষ্পপূর্ণ গরম বাতাস। বরফে ঢাকা পাহাড় থেকে
আসা শুকনো, ঠান্ডা বাতাস। আর দুই বায়ুপ্রবাহ একে অপরের সংস্পর্শে আসার জন্য মালভূমি এলাকা।
পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস ঢোকে পরিমণ্ডলে। শুকনো, ঠান্ডা বাতাস আসে হিমালয় থেকে। আর ছোটনাগপুরের মালভূমিতে সাধারণত ওই দুই বায়ুপ্রবাহের মিলন হয়।
আমেরিকার ক্ষেত্রে জলীয় বাষ্পপূর্ণ গরম বাতাস ঢোকে মেক্সিকান খাঁড়ি থেকে। রকি মাউন্টেন থেকে আসে শুকনো, ঠান্ডা বাতাস। আর দুই বায়ুপ্রবাহের মিলন হয় রকি মাউন্টেন সংলগ্ন মালভূমিতে।(যদিও টর্নেডো তৈরির জন্য আর কী কী লাগে, তা এখনও আবহবিজ্ঞানীদের কাছে অধরা)
টর্নেডো কতক্ষণ স্থায়ী হয়?
কয়েক সেকেন্ড থেকে শুরু করে এক ঘণ্টা পর্যন্ত। তবে অধিকাংশই স্থায়ী হয় মিনিট দশেক।
টর্নেডোর শক্তির পরিমাপ হয় কী ভাবে?
কোন টর্নেডো কতটা ক্ষতি করল, সেই নিরিখেই তার শক্তি পরিমাপ করা হয়। ১৯৭১ সালে টি থিওডর ফুজিতা একটি স্কেল (এফ স্কেল) তৈরি করেন। কোনও টর্নেডোর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা এফ স্কেলে এক থেকে পাঁচের মধ্যে ধরা হয়। এফ-ফাইভ হল সব থেকে শক্তিশালী টর্নেডো। সোমবার ওকলাহোমার টর্নেডোটি ছিল এফ-ফোর শক্তির।
টর্নেডো কাছে চলে এলে কী ধরনের শব্দ হয়?
ট্রেন কাছে চলে এলে যে রকম শব্দ হয়, অনেকটা সেই রকম। আবার অনেক সময় জলপ্রপাতের শব্দও মনে হয়।
সব থেকে শক্তিশালী টর্নেডো কবে, কোথায় হয়েছিল?
১৯৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল। বাংলাদেশে। মানিকগঞ্জ জেলায় মারা গিয়েছিলেন ১৩০০ মানুষ।
টর্নেডোর পূর্বাভাস সম্ভব কি?
মেঘপুঞ্জ কী ভাবে তৈরি হচ্ছে, ডপলার রেডারে তা বোঝা যায়। তার ভিত্তিতে সতর্ক বার্তা জারি করা হয়।
সাবধানতা অবলম্বনে কী করা উচিত?
বাড়িতে মাটির নীচে তৈরি ঘরে আশ্রয় নেওয়াই সব চেয়ে নিরাপদ। গাড়িতে থাকা একেবারেই উচিত নয়। |