মজুরি বৃদ্ধি-সহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ দেখালেন পূর্বস্থলী ও নবদ্বীপের যন্ত্রচালিত তাঁতকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, মালিকদের বারবার জানানো হলেও দাবিপূরণ করা হচ্ছে না। এ দিন কালনার সহকারী শ্রম কমিশনারের উপস্থিতিতে তাঁত কর্মী ও মালিকদের বৈঠক হয়। তবে কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। ফের বৈঠক করে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে বলে জানিয়েছেন সহকারি শ্রম কমিশনার দেবাশিস গুপ্ত।
পূর্বস্থলী ও নবদ্বীপ এলাকায় যন্ত্রচালিত তাঁত কারখানা রয়েছে শতাধিক। মালিকের সংখ্যা ৬৩। এই সমস্ত কারখানায় প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাঁতশ্রমিকেরা অভিযোগ করেন, তাঁদের দৈনিক গড় আয় ৮০ টাকা, যা যথেষ্ট কম। তার উপরে এ বছর আবার মজুরি বাড়েনি। তাঁদের আরও অভিযোগ, কাজ করতে হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। বদ্ধ ঘরে চলা কারখানাগুলিতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বেশ খারাপ।
শ্রমিকেরা জানান, গত ২০ এপ্রিল এই সব সমস্যার কথা মালিকপক্ষকে জানান তাঁরা। কিন্তু কোনও উত্তর মেলেনি। ৭ মে ‘নবদ্বীপ-পূর্বস্থলী থানা পাওয়ারলুম শ্রমিক ইউনিয়ন’-এর সদস্যেরা বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসেন। ৯ মে আবার চিঠি পাঠানো হয় মালিকপক্ষকে। ১১ মে মালিকপক্ষ কারখানায় নোটিস দিয়ে জানান, চলতি বছরে ব্যবসার হাল খারাপ। অন্য রাজ্য কম দামের পণ্য বাজারে আসায় বিক্রি কমেছে। তাই এই মুহূর্তে শ্রমিকদের দাবি মানা সম্ভব হচ্ছে না। এর পরেই শ্রমিকেরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হন। তাঁরা রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির, ভূমি ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, সহকারী শ্রম কমিশনার-সহ নানা আধিকারিকের কাছে সমস্যা লিখিত ভাবে জানান।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের ভান্ডারটিকুরি এলাকার একটি কারখানার শ্রমিক কানাইলাল বণিক বলেন, “আমাদের কাজে নানা ঝুঁকি রয়েছে। অথচ দুর্ঘটনাজনিত বিমা-সহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত।” আর এক শ্রমিক নবদ্বীপের বলাই পালের দাবি, “একশো দিনের কাজে গেলে মজুরির নিশ্চয়তা রয়েছে। অথচ আমাদের ক্ষেত্রে তা নেই। তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। সুরাহা না হলে ধর্মঘটের পথেও যেতে পারি আমরা।”
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ পূর্বস্থলী ও নবদ্বীপ থেকে প্রায় পাঁচশো শ্রমিক অম্বিকা-কালনা স্টেশনে পৌঁছন। মিছিল করে মহকুমাশাসকের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বেলা ১১টা থেকে বৈঠক শুরু হয়। সেখানে শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ছাড়াও ছিলেন সহকারী শ্রম কমিশনার। ছিলেন পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা স্বপন সাহাও।
বৈঠকে শ্রমিকদের তরফে পাঁচ দফা দাবি পেশ করা হয়। তার মধ্যে ছিল কুড়ি শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি, ৮.৩৩ শতাংশ হারে বোনাস ইত্যাদি। বৈঠক শেষে অবশ্য কোনও ফল মেলেনি। মালিকপক্ষের যে দু’জন প্রতিনিধি ছিলেন তাঁরা দাবিপূরণের ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি। তৃণমূল নেতা স্বপনবাবু শ্রমিকদের ধর্মঘট না করতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “শীঘ্রই আর একটি বৈঠক হবে। সেখানে সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করা হবে।” সহকারি শ্রম কমিশনার দেবাশিসবাবুরও বক্তব্য, “আশা করছি, সে দিনই সমস্যা মিটে যাবে।” তাঁতশ্রমিক সংগঠনের সভাপতি নিতাই দাস জানান, প্রশাসনের তরফে দাবি মেটানোর ব্যাপারে ইতিবাচক আশ্বাস পেয়েছেন তাঁরা। |