তারাবাজি
মন কোনও ঘটনা যে জীবনে ঘটবে, ভাবতেও পারিনি। সে দিন নিজের জি-মেল অ্যাকাউন্টে দেখলাম কিম্ভুতকিমাকার একটা মেল আইডি থেকে কে যেন মেল পাঠিয়েছেন। জনৈক ব্যক্তি নিজেকে ‘চাঁদ’ বলে পরিচয় দিয়ে যা লিখেছেন, তাকে রসিকতাই ভাবা উচিত ছিল, কিন্তু ভাবতে পারলাম না। কারণ, এই একই মেল টলি তারকাদেরও সেই ব্যক্তি সিসি অর্থাৎ কার্বন কপি করেছেন।

চিঠির বিষয়
এক ‘চাঁদের পাহাড়’ নিয়ে টলিউড তুলকালাম। বাস্তবের চাঁদের পাহাড়কে নিজের মনের মতো সাজাবেন টলি তারকারা থিম পার্টির জন্য। চাঁদ চাইছেন টলি তারকারা, তাঁকে আইডিয়া মেল করুন। সঙ্গে পাঁচ জন সেলিব্রিটির নাম, যাঁদের তিনি পার্টিতে নেমন্তন্ন করবেন। যাঁর আইডিয়া সব চেয়ে বেশি পছন্দ হবে, তিনি তাঁর এক সঙ্গীকে নিয়ে চাঁদে গিয়ে ২ রাত্রি, ৩ দিন থাকবেন নিখরচায়! সাইট সিইং-য়ে যেতে পারবেন মঙ্গল গ্রহ! নীচে একটা ফুটনোটে লেখা, আনন্দplus খবরটা কভার করলে ভাল হয়। তাই মনে একরাশ বিস্ময় নিয়ে লেগে পড়লাম নিজের কাজে।

নীল মুখোপাধ্যায়
নীলের কথায়, “উড়ন্ত, দুরন্ত পার্টি হবে, যেখানে সবাই ভেসে বেড়াবে।” থিম হিসেবে বেছে নিলেন, ‘চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে’। আরও বললেন, “শ্রুতিনাটক হবে শম্ভু মিত্রের ‘চাঁদ বণিকের পালা’ অবলম্বনে। তবে এখানে টু্যইস্ট থাকবে।” নীল ইম্প্রোভাইজ করবেন, চাঁদ সদাগরের টালমাটাল অবস্থার সঙ্গে বর্তমান চিট ফান্ড জর্জরিত বাংলার পরিস্থিতির। শ্রুতিনাটক হবে ঠিক আধ ঘণ্টার। এর চেয়ে বেশি হলে, বোরিং হয়ে যাবে। “আসল চমক থাকবে আমার শিল্পীদের মধ্যে। চাঁদসদাগরের ভূমিকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। মনসার ভূমিকায় ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। চাঁদ সদাগরের স্ত্রী, পাওলি। বেহুলা- লখিন্দর হবেন রাইমা, পরমব্রত। এঁরাই সেই পাঁচ জন, যাঁরা নিমন্ত্রিতও হবেন পার্টিতে। এঁদের বেছে নেওয়ার পেছনে কারণ, প্রত্যেকে খুব সফল এবং বড় স্টার,” বললেন নীল। একই সঙ্গে তাঁর আশা, এই সুবাদে চাঁদে বাণিজ্যের রাস্তাও যদি খোলে সেটাও মন্দ হয় না। তিনি আরও বললেন, “আরেকটি আকর্ষণ হল, চাঁদে কান-য়ের পর দ্বিতীয় রি-ইউনিয়নও হয়ে যাবে। প্রসেনজিৎ- ঋতুপর্ণা জুটি আবার একসঙ্গে। হইহই ব্যাপার হবে, কী বলেন?” তা হলে বেড়াতে যাবেন কাকে নিয়ে? অকপট উত্তর নীলের,“আমার স্ত্রীকে নিয়ে, না হলে আর পৃথিবীতে পা দিতে হবে না!”

কোয়েল মল্লিক
কোয়েল মনে করেন এর চেয়ে এক্সাইটিং কিছু হতে পারে না। “আমার থিম হবে ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ফিল্ম আমরা সবাই দেখেছি। আমরা যারা ওই পার্টিতে যাব, তাদেরও অবস্থা অনেকটা ওই রকমই হবে মনে হয়। স্বর্গের সব দেব-দেবীর সঙ্গে দেখা করার বন্দোবস্ত থাকবে। মর্তের যে কোনও থিম পার্টির সঙ্গে এই পার্টির প্রধান ফারাক হবে,আয়োজনে।” কোয়েল চাইছেন খুব সিম্পল কিন্তু আভিজাত্যপূর্ণ পার্টি হবে। সচরাচর পার্টি খুব জমকালো, রঙচঙে হয়। পোশাকের ক্ষেত্রেও কোয়েলের পরিষ্কার কথা, “আমাদের স্টাইল সম্পর্কে চাঁদকে জানাতে হবে তো, তাই ইন্ডিয়ান, ওয়েস্টার্ন মিক্স করা পোশাক ভাল লাগবে।” কোয়েলের খুব ইচ্ছা, চিত্রগুপ্তের সঙ্গে দেখা করার। “উনিই তো আমাদের জীবনের সব হিসাব-নিকাশ করেন। তাই নিজের জীবনের কিছু কিছু অংশ মুছে আবার লিখিয়ে নেব।” নতুন করে কী লেখাবেন? “আমি যেন সারাটা জীবন স্বর্গীয় অনুভুতিতে থাকতে পারি, তারই ব্যবস্থা করব।” তা হলে এমন সুযোগ আর কে কে পেতে চলেছেন? কোয়েল বললেন, “দেব, জিৎ, শুভশ্রী, পায়েল আর শ্রাবন্তী। বেড়ানোর সঙ্গী আমার ভাল বন্ধু, আমার বেটার-হাফ রানে। দারুণ মজা করব দু’জনে মিলে।” থিম গান কোনটা হতে পারে এমন একটি ইভেন্টে? ‘মেঘে মেঘে আজ কেন তারারা ঢাকা...’
উষসী চক্রবর্তী
উষসীর মতে, চাঁদের প্রতি বাঙালির রোম্যান্টিসিজম চিরকালীন। পূর্ণিমার চাঁদ, জ্যোৎস্না নিয়ে কত কবিতা, কত গান রয়েছে। তাই চন্দ্রদোষে আক্রান্ত হতে বা চন্দ্রাহত হতে কোনও আপত্তি নেই উষসীর। ঠিক করেছেন, থিম হবে শরদিন্দু, বিভূতিভূষণ নাইট। ইদানীং কালে এই দুই লেখকের সাহিত্য নিয়ে টলি পাড়ায় ধুন্ধুমার কাণ্ড। এতটাই কনটেম্পোরারি ওঁদের লেখনী, যা আমাদের মাতিয়ে রেখেছে। তবে তা নিয়ে যে এত ঝগড়া, কম্পিটিশন, হাইপ হবে তা ভাবিনি। সাজসজ্জা কেমন হবে? “চাঁদের পাহাড়ে নানা স্টল থাকবে, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘অপরাজিত’, ‘ঝিন্দের বন্দি’। পোশাকও হবে সেই তখনকার মতো।” উষসী ঠিক করেছেন, রেকি করে নেবেন, সব চেয়ে ভাল পুজোমণ্ডপ কে তৈরি করেন, তাকেই দায়িত্ব দেবেন। তা হলে সেই পাঁচ জন ব্যক্তি কারা হবেন, যাঁরা এই দারুণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবেন? “আবির (চট্টোপাধ্যায়), অপু (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) আমার পরিচিত, ব্যোমকেশ আর অজিত। সুজয়, অনিন্দ্য- যাঁরা ঋতুপর্ণ ঘোষের ব্যোমকেশ আর অজিত করছেন। আর দেব, ‘চাঁদের পাহাড়’-এর শঙ্কর, যাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবেও খুব পছন্দ করি, দারুণ অ্যাপিলিং। শুনলাম দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যোমকেশ করছেন, আবার অঞ্জন দত্তও নতুন ব্যোমকেশ টিম করছেন। যদি কাস্টিং জানতাম তা হলে হয়তো, ওঁদের মধ্যে থেকেও কাউকে আমন্ত্রণ জানাতাম।” তা হলে কি বেড়াতে যাবেন দেবের সঙ্গেই? “এই জায়গাটা এখনও ফাঁকা আছে। যে বা যারা যেতে চাইবেন, আমাকে মেল করে জানান। আর যদি কাউকে মনের মতো না পাই, তবে চাঁদের সঙ্গেই যাব।”
মৈনাকের পছন্দের চাঁদের গান ‘ও চাঁদ সামলে রেখো...’

মৈনাক ভৌমিক
মৈনাকের কাছে জানতে চাওয়া হলে বললেন, “চাঁদের পাহাড়ে গুছিয়ে একটা জঙ্গল বানাব। জোছনার আলো তো এমনিই ফেমাস, সঙ্গে থিম্যাটিক আলো ব্যবহার করতে পারি। সেখানে থাকবে বাঘ, সিংহ। আহা, ঘাবড়াবেন না। খোলা নয়, আলিপুর চিড়িয়াখানার মতো বড় বড় খাঁচা থাকবে।” এই রকম থিম পার্টিতে কাকে নেমন্তন্ন করবেন? “একজন প্রযোজক, দুই অভিনেত্রী, দুই পরিচালক। সাধারণত প্রযোজকরা এই ধরনের থিম পার্টিতে এসে যা করেন, প্রচুর মদ খাবেন। তার পর বলবেন, ‘‘কী লাভ হল পার্টি করে, ছবি কি চলবে তাতে?’’ মৈনাক আরও বলছেন, “যেহেতু পার্টি, তাই ছবি তো উঠবেই। তাই দুই নায়িকা চুটিয়ে ছবি তুলবেন। আর বাকি দুই পরিচালক, যারা একটু সোশ্যালিস্ট গোছের হবেন। গম্ভীর, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ, যাঁরা সারাক্ষণ মনে করবেন, এই সব করে টাকা নষ্ট করা হচ্ছে। থিম পার্টিতে এসে একেবারে আউট অফ প্লেস মনে করবেন।” মৈনাক বেড়াতে যাবেন আবির আর তার ছোট্ট বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে। “আমি দেড় জনকে নিয়ে যাব সঙ্গে। আমার আশা চাঁদে চন্দ্রকুমারীরা নিশ্চয়ই আছেন। যেই না মিষ্টি বাচ্চা নিয়ে আমরা যাব, অমনি বাচ্চাকে আদর করার বাহানায় তারা আমাদের কাছে আসবে। তার পর বাকিটা আমরা দু’জনে সামলে নেব।”

রুদ্রনীল ঘোষ
‘সবাই স্টার হতে চায়, মুন হতে চায় না কেন?’ প্রশ্ন নয়, এটাই থিম রুদ্রনীলের। একটা আলোচনা চক্রের আয়োজন করব। কোনও স্টারেরই মুন হওয়ার দম নেই কেন? সূর্যের আলো একমাত্র শেয়ার করেন মুন। সেই মুন প্রশ্ন করছেন, ‘যারা তোমরা নিজেদের স্টার ভাবো, তারা কী এমন আলাদা সবার থেকে?’ এহেন আলোচনা চক্রে যোগ দেবেন কারা? রুদ্রনীল বেছে নিয়েছেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, অঞ্জন দত্ত এবং মুনমুন সেনকে। “এঁদের আমন্ত্রণ জানাব কারণ, এঁদের অ্যাটিটিউড, এঁদের কাজ, ক্রমাগত নিজেকে বদলে চলা, একটা স্বতন্ত্র জায়গা তৈরি করেছে। এভার-ইয়ং এই মানুষগুলি কখনও ভিড়ে হারিয়ে যান না। আলোচনা সঞ্চালনা করবেন মুনমুন সেন, যার নামেই দুটি চাঁদ আছে,” বললেন রুদ্রনীল। “আসলে আমাদের এখনও সময় আছে স্টার থেকে মুন হওয়ার, কিন্তু ওঁরা তো অনেক দিন স্টার। তাই ওঁদের উপলব্ধি গোধূলির আগে কেমন তাই জানতে চাইব,” উত্তর তাঁর। আলোচনা শেষে কাকে নিয়ে তা হলে বেড়াতে যাবেন? “ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। এত বুদ্ধিমতী মহিলা খুব কম দেখা যায়। যিনি নিজের ক্যারিশমা এত বছর সমান ভাবে রেখে গিয়েছেন। সব ধরনের সিনেমায় সমান সাবলীল। সঙ্গে জানতে চাইব কী করে এত রকমের মানুষকে অনায়াস দক্ষতায় ম্যানেজ করেন।”
থিম সং হবে-আলোকের এই ঝর্নাধারায়...
আমার মনে হয় সত্যি সত্যি এ রকম হলে সবার আগে শ্রীকান্ত মোহতা ‘চাঁদের পাহাড়’ সিনেমাটার আবার রি-শ্যুট করিয়ে নেবেন, খরচের তোয়াক্কা করবেন না।

শ্রীলা মজুমদার
“আমি তো সেলিব্রেট করব ভারতীয় সিনেমার ১০০ বছর। তাই প্রথমেই সুজান রোশনের সঙ্গে পরামর্শ করে নেব, কী ভাবে বিভিন্ন পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ফিল্মের পোস্টার দিয়ে চাঁদের পাহাড়কে সাজানো যায়। উনি তো খুব ভাল ইন্টিরিয়র ডিজাইন করেন।” শ্রীলা মনে করেন, আমাদের সিনেমার দীর্ঘ ইতিহাসে কত যে ভাল ভাল ফিল্ম আছে, যেগুলি অযত্নে নষ্ট হচ্ছে! তাই তাঁর ইচ্ছে চাঁদে এই সব দুষ্প্রাপ্য ফিল্ম আর্কাইভ করার বন্দোবস্ত করবেন তিনি। এই উদ্যোগে শামিল করবেন কাদের? “সুপ্রিয়া দেবী, যিনি উত্তমকুমারের ফিল্ম আর্কাইভ করতে সাহায্য করবেন।” এই পার্টির মাঝে শ্রীলা চাঁদের সঙ্গে সেরে ফেলবেন একপ্রস্থ আলোচনা। যাতে সুইৎজারল্যান্ডের বদলে, চাঁদে গিয়েই শ্যুট করা যায়। বাণিজ্যিক বিষয়টিও নিশ্চয়ইচাঁদ বুঝবেন, আশা রাখছেন শ্রীলা।
“আমার ইচ্ছা মর্ত্য-চাঁদ যৌথ ভাবে যদি কাজ করা যায়। মানে যে সব দিকপাল পরিচালকরা ইহজগতে নেই, তাঁদের পরিচালনায় এখনকার অভিনেতারা। আবার উল্টোটাও যদি হয়, দারুণ হবে। এই এক্সক্লুসিভ খবর সবার সামনে তুলে ধরার জন্য আনন্দ-য়ের বন্ধু সাংবাদিককে নিয়ে যেতে চান চাঁদে। তাঁর নাম তিনি না-ই বা বললেন। স্পেশাল পারমিশন করিয়ে চাঁদে অবশ্যই নিয়ে যেতে চান শ্রীলা। বেড়াতে যাবেন কাকে নিয়ে? “মাইকেল ডগলাস, আমার অল টাইম ফেভারিট।” পছন্দের থিম গান- বাঁশবাগানের মাথার ওপর......
এই অবধি পুরোটাই ছিল কাল্পনিক। এ বার জানেন তো সত্যি সত্যি খুব ইচ্ছে করছে, এমন একটা মেল পেতে। দেখা যাক আনন্দplus-য়ে এই খবর ছাপার পর, সত্যিই এমন কোনও মেল পাই কি না!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.