|
|
|
|
|
ব্যোমশঙ্কর
বাংলা বিনোদনের জগতে অনেকটা দায়ভারই আজ তাঁর।
এই মুহূর্তে ব্যস্ততম সেই মানুষটি দেবশঙ্কর হালদার।
নাটক, সিনেমা, শ্রুতিনাটক
নিয়ে
ভরা-ভরতি জীবন। মুখোমুখি জমাটি আড্ডায় সুদীপ্তা চক্রবর্তী |
|
|
বড় পর্দায় টুকটাক ব্যাটিং করে যাচ্ছেন তিনি, তা প্রায় অনেক দিন হল। কিন্তু বরাবরই ‘ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ’ চরিত্রের অফার পেয়ে এসেছেন। হঠাৎ ‘পরিবর্তন’। একটার পর একটা ছবিতে অসামান্য অভিনয়, চিত্রনাট্যকার-প্রযোজক-পরিচালকদের অগাধ ভরসার জায়গা হয়ে ওঠা, হলমুখী দর্শকদের প্রিয় অভিনেতা হয়ে যাওয়া আর আরও ভাল কাজের খিদেতে ডায়েরির পাতা আরও আরও ভর্তি— এই হল দেবশঙ্করের পরিবর্তিত জীবন-কাহিনির ওয়ান-লাইনার।
এখানে অবশ্য ডায়েরি বিদ্রোহ ঘোষণা করতে পারে। বলতে পারে, “পাতা আমার বরাবরই ভর্তি ছিল বাপু। হ্যাঁ, এত মহরত, ফিল্ম রিলিজ, প্রিমিয়ার পার্টির নেমন্তন্ন আসত না হয়তো, কিন্তু আমার নিশ্বাস ফেলার সময় নেই তা আজ বহু বছর হয়ে গেল।”
রোজ সকালের আনন্দবাজারটা খুলে নাটকের বিজ্ঞাপনের পাতা দেখা যাঁদের অভ্যেস, তাঁরা জানেন এ কথা সর্বৈব সত্য। সপ্তাহে পাঁচ থেকে সাত দিন ‘আজকের নাটক’-এর বিজ্ঞাপনে মুখ্য ভূমিকায়/ অভিনয়ে একটাই নাম থাকে। দেবশঙ্কর হালদার।
নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে, একজন অভিনেতার ন’টা নাটক নিয়ে এই শহরে যাঁকে নিয়ে থিয়েটার ফেস্টিভ্যাল হয়, তাঁর নাম দেবশঙ্কর হালদার।
শীলা-মুন্নিদের রাজত্বে এপ্রিল মাসের গনগনে দুপুরেও যাঁর অভিনয় দেখতে একাডেমি মঞ্চের কাউন্টারের বাইরে ল-ম-ম-ম-বা লাইন পড়ে, তাঁর নাম দেবশঙ্কর হালদার।
আর এই সব উন্মাদনাকে ‘ধুউউউর’ বলে উড়িয়ে দিয়ে যিনি অবলীলায় গালে টোল ফেলে সেই বিখ্যাত ‘হেহে’ হাসিটা হেসে উড়িয়ে দিতে পারেন, তিনি আমার দেবশঙ্করদা।
অনেক দিন পর চুটিয়ে আড্ডা হল দেবশঙ্করদার সঙ্গে। কেন জানি না, আর সবার মতো আমি কোনও দিনই ‘দেবুদা’ বলে ডাকিনি ওকে। কেমন যেন মনে হয় নামটার মজাটাই চলে যায়, ওজনটাই কমে যায়।একটা প্রশ্ন মাথায় এসে গেল। ফট্ করে জিজ্ঞেস করে বসলাম।
|
অভিনেতা দেবশঙ্করের ওজন কি একটু বাড়ল অবশেষে? পরপর এত সিনেমায় অভিনয়ের ডাক, তাও মুখ্য চরিত্রে...
আমি তো অভিনয়টাই করি। ওটাই পারি। ভাবো এক বার! আমি অনেক কিছু করছি, অনেক ওজন বাড়াচ্ছি, লোকে আমায় লাইন দিয়ে দেখতে আসছে— অথচ আমি অভিনয়টাই পারি না। এমন হলে কী বিচ্ছিরি ব্যাপারটা হত! আসলে অভিনয় হল অনেকটা আমের মতো। থিয়েটারটা যদি ‘ফজলি’ হয়, সিনেমাটা ‘বেগমপুরী’। দু’টোই খেতে খুব ভাল। এক অপূর্ব মিষ্টত্ব আছে। সে তুমি যে নামেই ডাকো, আম তো আমই।
না তবুও... থিয়েটার তো বরাবরই একটু উপেক্ষিত। এক শ্রেণির মানুষ ছাড়া কেউ তো খুব একটা উত্তেজনা দেখায় না সেখানে তোমার নাম দিয়ে কাগজে বড়বড় বিজ্ঞাপন, হোর্ডিং।
আমি তো কোনও দিন কাউকে বলিনি আমার নাম দিতে। বরং লজ্জাই পেয়েছি। আমার খালি মনে হয়েছে, থিয়েটার তো আসলে অনেক লোকের কারবার। কোনও ব্যক্তিবিশেষের নয়। তা হলে আমার নাম কেন!
আবার মনে হয়েছে, এ সব যখন হচ্ছেই, নামই যখন দেবে, তখন শুধু নাট্যকার বা পরিচালকের কেন? অভিনেতার নাম নয় কেন? আসল পরিশ্রম তো সে করে ওই দু’তিন ঘণ্টায়। তাই নাম দিলে কাউকে বারণও করিনি। আর ফেস্টিভ্যাল? যাঁরা ওই কেলেঙ্কারিটি করেছিলেন, তুমি তো তাঁদের চেনো। এক বার জিজ্ঞেস করে দেখো আমার প্রথম রি-অ্যাকশন কী ছিল। ব্যাপারটা শুনে আমি যারপরনাই লজ্জা পেয়েছিলাম। তার পর যখন দেখেছি ১০০/১৫০ শো হয়ে যাওয়া নাটকগুলো ফেস্টিভ্যালে দেখতে বয়স্ক মানুষেরা কাঠফাটা রোদে কাউন্টারের সামনে লাইন দিয়েছেন, তখন ওজন নয়, দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। |
|
ছবি: সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় |
বুঝলাম। কিন্তু একটা বদল তো নিশ্চয়ই হয়েছে? নিজের টার্মে ডিক্টেট করার মতো একটা জায়গায় তো এসেছ—অমুক কাজটা করব কি করব না, করলে কত টাকা নেব, বিজ্ঞাপনে নাম বা মুখ থাকবে কি না এগুলো তো বলতেই পারছ এখন?
কোনও দিন না, কোন নাটকে কত টাকা নেব, কোন ফন্টে নাম বেরোবে কোনও দিন জিজ্ঞেস করিনি। কারণ আমার কখনওই মনে হয়নি কেউ আমার প্রাপ্য থেকে কম টাকা দিচ্ছে। কারণ এটা তো আদতে আমার শ্রমের প্রাপ্য। সিনেমার ক্ষেত্রেও তাই। আমার নাটকের ব্যস্ততা, সময়ের অভাব, প্রায় রোজ বিকেলেই শো, এ সব জেনেই তো আমাকে তাঁরা নেন। তবে দেখো, এই যে একসঙ্গে এতগুলো নাটক করি, কোনওটাই কিন্তু আমার সচেতন সিদ্ধান্ত নয়। যে কোনও নতুন নাটকের অফার এলেই আগে ভাবি, এটা নিশ্চয়ই আমি করতে পারব না। তার পর কী ভাবে যেন সেগুলোতে ‘হ্যাঁ’ বলে দিই। আর তার পর প্রথম রিহার্সালের দিন মনে হয় ‘আবার? আবার আমি হ্যাঁ বললাম?’
সত্যি বাবা! এতগুলো নাটক, সিনেমা, একসঙ্গে এতগুলো চরিত্রে অভিনয় করতে অসুবিধে হয় না?
না তো। অভিনয় তো জীবনেরই অঙ্গ। আমরা সবাই তো আসলে একসঙ্গে অনেকগুলো চরিত্র। বাড়িতে আমি আমার গিন্নির কর্তা বা আমার ছেলের স্নেহময় পিতা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সামনের রকে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে আমি রকের আড্ডাবাজ। পাড়ার মুদিখানায় যদি টাকা বাকি থাকে, তা হলে দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমি পাওনাদারের সামনে।
আবার মোড়ের মাথায় স্কুলের মাস্টারমশায়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে তখুনি আমি ছাত্র। এগুলো থেকে রসদ সংগ্রহ করতে করতে জীবন বয়ে যায় নিজের মতো। শুধু দেখতে হবে আমি তাকে ঠিকঠাক বইতে দিচ্ছি কি না।
বাড়িতে আসতে প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেছিলাম কিছু খাবে কি না। উত্তর এসেছিল ‘না’ । বাংলা থিয়েটারে অবিসংবাদিত ‘স্টার’ আর বাংলা সিনেমার অধুনা ‘ব্লু-আইড অ্যাক্টর’। তাই ভদ্রতা করে পানীয়ও অফার করলাম। রাত হয়ে যাচ্ছে, তাই যদি...ও বাব্বা! উত্তরে একটা শব্দ এল ‘ধুউউর’।
‘একটা গরম স্যুপ গোছের কিছু পাওয়া যাবে? যদি বাড়িতে থাকে। না থাকলে আনাতে হবে না। গরম চা বা কফিও চলবে।’ আমি বললাম, ‘স্যুপ আছে। বানিয়ে দিচ্ছি। চা দুধ দিয়ে না দুধ ছাড়া?’
‘বাড়িতে থাকলে দিয়ে, না থাকলে ছাড়া। এখন দুধ আনাতে হবে না।’— এই হচ্ছেন দেবশঙ্কর হালদার।
কোনও কিছুতেই যেন কোনও আপত্তি নেই। সবেতেই ‘হ্যাঁ’। আমার নান্দীকারের বন্ধুবান্ধবেরা ঠিকই বলে। দেবুদাটা কেমন যেন ব্যোমভোলা গোছের। একটা সন্ন্যাসী সন্ন্যাসী হাবভাব। আবার কথায় ফিরলাম।
আচ্ছা তুমি যে অভিনয় নিয়ে এই ভাবে ভাবো, তোমার কি মনে হয় সিনেমা বা অন্য আরও যে সব মাধ্যমে তুমি কাজ করো, সেখানে এত খুঁটিনাটি কেউ ভাবে? কারও হাতে এত সময় আছে?
দেখো, মাধ্যম অনেক বেড়েছে। তাতে অনেক তাড়াতাড়ি কিছু সুবিধে হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো আদতে সুবিধা নয়। যে যত তাড়াতাড়ি সেটা বুঝতে পারে, তার তত মঙ্গল। প্রত্যেকটা মাধ্যমের ‘পুল’, চাহিদাকে বুঝতে হবে। গুলিয়ে ফেললে হবে না। শিশির ভাদুড়ি এক জায়গায় বলেছেন, “‘আঁধারে আলো’ বলে একটা ছবি করেছিলাম। আমার ভাল লাগেনি।” এখানে দেখো, উনি কিন্তু অনেক পরে বলেছেন কথাটা। মানে উনি অনেক পরে বুঝতে পেরেছিলেন ওই কাজটা করে ওঁর ভাল লাগেনি।
তুমিও তো আদতে থিয়েটারের অভিনেতা। অন্য মাধ্যমে অ্যাডজাস্ট করতে...
ওই যে বললাম আমের গল্পটা। আমটা এনজয় করে খেতে পারলেই হল। এই প্রসঙ্গে এক চেক নৃত্যশিল্পীর একটি মজার গল্প আছে। উনি স্টেজ পারফরমার। আর তাঁর নাচটা ক্যামেরায় শু্যট করা হচ্ছে। যথারীতি বারবার ‘কাট’ করে ক্যামেরার পজিশন পাল্টানো হচ্ছে। আর ওঁর নাচের ছন্দ নষ্ট হচ্ছে। উনি বেশ খানিকক্ষণ হজম করলেন ব্যাপারটা। তার পর রেগেমেগে বললেন, ‘‘হয় আমি নাচি, না হয় আপনারা নাচুন। দু’টো একসঙ্গে চলতে পারে না।” হা হা হা হা! এটা মজা করে বললাম। তবে আলাদা মাধ্যমের চাহিদা আলাদা হয়। এটা ঠিক। |
|
আড্ডায় দেবশঙ্কর ও সুদীপ্তা। ছবি: কৌশিক সরকার |
তার মানে থিয়েটারে ‘শ্রম’ আর সিনেমায় ‘স্টার ইমেজ’— এই সরল সমীকরণকে তুমিও মানো?
এই রে, এই সব নিয়ে আবার আমি খুব একটা ভাবি না। তবে আমার কেন জানি না মনে হয় অভিনেতা হল ফাঁকা ক্যানভাসের মতো। তার কোনও ইমেজ থাকতে নেই। আমি যদি একটা ইমেজ নিয়ে ‘অমুক’ হয়ে থেকে যাই, তা হলে সব চরিত্রেই আমাকে ওই ‘অমুক’ বলেই মনে হবে। ব্যাপারটা কিন্তু পাল্টাচ্ছে। চারদিকে তাকিয়ে দেখো— অভিনয়ের খেলা কিন্তু এ বার ইমেজের খেলাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
উৎপল জেঠু (দত্ত) তো বলতেন, অভিনেতার চুল-দাড়ি-গোঁফও রাখা উচিত নয়।
গোঁফ-দাড়ি তো সত্যিই রাখতে পারি না। আসলে অভিনয়ের সময় ভেতরটা যে পাল্টে যায়, সেটা তো আমি নিজে বুঝি। কিন্তু দর্শককেও তো বোঝাতে হবে। তার জন্যই বাইরে বদল। ওটা যে আর আমি নয়, সেটা আমিও বুঝতে পারি, দর্শকও বুঝতে পারেন। আবার আদতে যে ওটা আমিই, সেটা আমিও জানি, দর্শকও জানেন। পূর্ণেন্দু পত্রীর ভাষায় বললে, ‘আসলে আমরা সবাই জানি সবটা মিথ্যে। কিন্তু এই যে মিথ্যেকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এক সুখানুভূতি হয়, এরই অপর নাম অভিনয়।’ জানো, এই সুখানুভূতিটাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। মঞ্চে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লে প্রথমে একটু হাঁটুটা কাঁপে। কিন্তু তার পর সে যে কী আনন্দ! আর রোজ এই ভয় পাওয়াটা ভাল লক্ষণ। ‘রুদ্ধসঙ্গীত’য়ে জর্জ বিশ্বাস বলেন না, ‘যে কোনও সৎ পারফর্মারেরই এই ধরনের লজ্জাবোধ এবং নার্ভাসনেস থাকাটা উচিত।’
তখন থেকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটছে। আমি যত বার সিনেমার প্রসঙ্গে আসতে চেষ্টা করছি, এই ব্যোমভোলা বাবাজি ততই নাটক নাম জপ করছেন। কোনও ভাবেই নাটকের বাইরে আনতে পারছি না আড্ডাটাকে। অভিনেতা দেবশঙ্কর আর মানুষ দেবশঙ্কর কাউকেই কি মঞ্চের বাইরে আনা সম্ভব নয়? প্রশ্নটা করেই ফেললাম।
এ বার একটা সত্যি কথা বলো তো...এই যে পরপর ‘মুক্তধারা’, ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ বা ‘ন হন্যতে’-র মতো ছবিতে খুব উল্লেখযোগ্য চরিত্রে বড় পর্দার দর্শকের কাছে আসা। ‘অলীক সুখ’ বা ‘হঠাৎ বাবুর কিস্সা’র মতো ছবিতে একেবারে প্রধান চরিত্রে। থিয়েটার পাড়ায় শোনা যাচ্ছে— দেবশঙ্কর এখন ঋতুপর্ণার হিরো...নাটকের সংখ্যা কমল বলে!
আগামী এক মাসের মধ্যে তিনটে নতুন নাটক নামছে আমার। ঈশিতার (মুখোপাধ্যায়) পরিচালনায় ‘কাল্লুমামা’, দেবেশ (চট্টোপাধ্যায়)-এর পরিচালনায় ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’ আর নান্দীকারের প্রযোজনায় ‘নাচনি’। তা ছাড়াও নিয়মিত শো চলছে নান্দীকারের ‘আমার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ’, ‘মাধবী’, ‘অন্ত আদি অন্ত’, বাইরের দলের ‘ফুড়ুৎ’, ‘কাছের মানুষ’, ‘দহনান্ত’, ‘বিলে’, ‘আগুনের বর্ণমালা’, ‘আওরঙ্গজেব’— আরও বেশ কয়েকটার। এর পর যদি কেউ বলে, কী আর করব বলো?
কন্ট্রোভার্সি আনতে পারছি না কিছুতেই। সিনেমার গল্পে কন্ট্রোভার্সি হবে বলে মনে হচ্ছে না। ঋতুপর্ণার সঙ্গে জলকেলির দৃশ্যকে যিনি ‘অভিনেতার কাজ’ বলে উড়িয়ে দেন, তাঁকে সিনেমা নিয়ে প্রশ্ন করে লাভ নেই। |
|
‘মুক্তধারা’র এক দৃশ্যে |
তোমার তো অনেক সমালোচক আছেন, যাঁরা বলেন তুমি বাড়াবাড়ি করছ। একসঙ্গে এত নাটকে অভিনয়, লোকে বলছে তুমি ফুরিয়ে যাবে... খুব শিগ্গিরি।
আমার গুরুজনেরা বলেন শুনেছি। আসলে আমি না, বুঝতে পারি না ঠিক কতটুকু প্রিজার্ভ করে রাখলে আমি একদিন ফুলের মতো ফুটে উঠব। তার থেকে নিয়মিত অভ্যাসের মধ্যে থাকলে কোনও দিন ভাল হবে। কোনও দিন খারাপ, কোনও দিন মিলবে, কোনও দিন মিলবে না। আর এ ভাবেই বেহিসেবির মতো নাড়াচাড়া করে যাব থিয়েটারটা নিয়ে। বেহিসেবি মানে কিন্তু অ্যানার্কি নয়। সবাইকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানিয়েই বলি, থেমে থাকতে পারব না। ফেল করব, পাশ করব, ভয় পাব... আর থিয়েটার করেই যাব।
আর সিনেমা?
থাকবে। যদি আমার থিয়েটারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, থাকবে। গত ক’মাসে অনেকগুলো ছবির কথা হয়েছে। কিন্তু ওই যে... আমার থিয়েটার। সময়ই দিতে পারব না বোধহয়।
গরম স্যুপ ঠান্ডা হয়ে, আবার গরম করে, আবার ঠান্ডা হয়ে শেষমেশ মালিকের গলদেশে প্রবেশ করেছে। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে ন’টা অবধি মোট তিনটে নাটকের রিহার্সাল করে এক বাটি স্যুপ যে কাউকে এত আনন্দ দিতে পারে (সঙ্গে আবার স্যুপ মেকারকে আশীর্বাদ), সারাদিন এত পরিশ্রমের পর যে কেউ এত আড্ডা মারতে পারে এবং যাবার সময়ও এত নির্মল অক্লান্ত ‘হে হে’ হাসি হেসে ‘চলি তা হলে মামণি’ বলে মস্করা করতে পারে বিশ্বাস করতেও ভাল লাগে।
থিয়েটার বোধ হয় এটাই দেয়। ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’য়ের গিরিশ ঘোষের সংলাপ আর শিশির ভাদুড়ির চরিত্রাভিনেতার ফিলোজফি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়... “রঙ্গভূমি ভালবাসি, হৃদে সাধ রাশি রাশি, আশার নেশায় করি জীবনযাপন...”
আশার নেশা—সত্যি! ব্যোমভোলা দেবশঙ্করকে এতেই মানায়।
|
‘রূদ্ধসঙ্গীত’য়ে দেবশঙ্কর হালদার
|
|
সাত দিনের রোজনামচা |
বুধবার |
সকাল ৯টা- দুপুর ২টো: ‘নাচনি’ নাটকের মহড়া; বিকেল ৩টে-৪টে: শ্রুতিনাটকের রেকর্ডিং;
বিকেল ৫টা- রাত ৯টা: ‘কাল্লুমামা’ নাটকের মহড়া; রাত ১০টা- ১২ টা: নাটক ও বিভিন্ন চিত্রনাট্য
নিয়ে পড়াশোনা। কখনও বা সংলাপ মুখস্থ করা (এটা রোজ রাতের রুটিন বলা যায়) |
বৃহস্পতিবার |
সকাল ৯টা- দুপুর ২টো: মেক আপ সহ ‘নাচনি’ নাটকের মহড়া;
বিকেল ৩টে- রাত ৯টা: কাল্লুমামা’ নাটকের রিহার্সাল |
শুক্রবার |
সকাল ৯টা- দুপুর ২টো: একাডেমিতে ‘নাচনি’ নাটকের চূড়ান্ত রিহার্সাল;
বিকেল ৪টে- রাত ৯টা: মেক আপ এবং নাটকের প্রস্তুতি। সন্ধ্যায় ‘নাচনি’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন |
শনিবার |
সকাল ৯টা- দুপুর ২টো: মিনার্ভা থিয়েটারে ‘কাল্লুমামা’-র রিহার্সাল;
বিকেল ৪টে- রাত ৯টা: গিরিশ মঞ্চে ‘নাচনি’-র শো |
রবিবার |
সকাল ৯টা- দুপুর ২টো:‘কাল্লুমামা’-র রিহার্সাল;
বিকেল ৪টে- রাত ৯টা: ‘বিলে’ নাটকের প্রস্তুতি ও শো |
সোমবার |
সকাল ৯টা- দুপুর ১টা: ‘কাল্লুমামা’-র রিহার্সালদুপুর ২টো- বিকেল ৫টা: ‘হঠাৎ বাবুর কিসসা’;
ছবির শ্যুটিং সন্ধে ৬টা- রাত ৯টা: নাটক ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’-এর রিহার্সাল |
মঙ্গলবার |
সকাল ৯টা- দুপুর ২টো: তপন থিয়েটারে ‘কাল্লুমামা’ নাটকের মহড়া; বিকেল ৪টে- রাত ৯টা: ‘উইংকল টুইঙ্কল’ নাটকের প্রস্তুতি ও মঞ্চায়ন;
রাত ১০টা- মধ্যরাত: ‘হঠাৎ বাবুর কিসসা’ ছবির শ্যুটিং
(পর পর নতুন নাটকের মঞ্চায়ন হতে চলেছে বলে আপাতত সিনেমার শ্যুটিং,
চিত্রনাট্য শোনা
এবং প্রেস মিটে যাওয়ার কাছে কিছুটা বিরতি রয়েছে) |
|
|
|
|
|
|