ঘরে ফিরলে মাওবাদীদের এ বার বাড়তি দাম
রা দেওয়ার জন্য পুরস্কার রয়েছে। রয়েছে পুনর্বাসন প্যাকেজ। কিন্তু তাতে তেমন কাজ হচ্ছে না। অগত্যা আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের ইনামের বহর বাড়ানোর পথে হাঁটতে হচ্ছে সরকারকে।
দেশজুড়ে দৌরাত্ম্য কিছুটা কমলেও মাওবাদীদের মূলস্রোতে ফেরানোর কাজ সে ভাবে গতি পায়নি। জঙ্গলের ডেরা ছেড়ে বেরিয়ে প্রশাসনের কাছে ধরা দিতে মাওবাদীদের মধ্যে বিশেষ উৎসাহ চোখে পড়ছে না। তাই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসনের জন্য ঘোষিত ‘প্যাকেজ’টি আমূল বদলে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এককালীন অনুদান ও মাসিক ভাতা তো বটেই, সমর্পিত অস্ত্রপিছু অর্থের বহরও বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, মাওবাদী পুনর্বাসন প্রকল্পে রাজ্যের আর্থিক দায়ও লাঘব করছে দিল্লি। কী রকম?
কেন্দ্রীয় সূত্রের খবর: সিকিউরিটি রিলেটেড এক্সপেন্ডিচার (এসআরই) প্রকল্পের তহবিল থেকেই আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পিছনে যাবতীয় খরচের সংস্থান হবে। এ বাবদ রাজ্যগুলোকে সিকি পয়সাও খরচ করতে হবে না বলে মন্ত্রকের দাবি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নকশাল ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জয়প্রকাশ গত ৪ এপ্রিল নকশাল অধ্যুষিত সাতটি রাজ্যকে নতুন প্যাকেজের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। গত ১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে যত মাওবাদী ধরা দিয়েছেন বা দেবেন, তাঁদের সকলকে নতুন প্যাকেজের আওতায় আনা হবে।
তবে শুধু বর্ধিত অর্থমূল্যের লোভে কেউ যাতে সাময়িক আত্মসমর্পণের কৌশল নিতে না-পারে, রাজ্যগুলোকে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বলা হয়েছে, বেশ কয়েকটি স্তরে বিচারের পরেই আত্মসমর্পণকারীকে মূলস্রোতে ফেরানো এবং প্যাকেজ অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধে দেওয়া শুরু করা যেতে পারে। গণহত্যা বা নৃশংস অপরাধে অভিযুক্ত যাঁরা, তাঁদের আত্মসমর্পণের পরে আইনি প্রক্রিয়া যেমন চলার, চলবে। লঘু অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার কিংবা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার চেষ্টা হবে।
কী থাকছে নতুন প্যাকেজে?
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর: মাওবাদী পলিটব্যুরো, কেন্দ্রীয় কমিটি, রাজ্য কমিটি বা আঞ্চলিক কমিটির কোনও সদস্য আত্মসমর্পণ করলে প্রথমেই এককালীন আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। আগে ছিল দেড় লক্ষ। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে তিন বছরের জন্য ওই টাকা ফিক্সড ডিপজিট করা হবে। এরিয়া কমান্ডার, সাব-জোনাল কমান্ডার ও জোনাল কমিটি স্তরের নেতাদের ক্ষেত্রে এককালীন অনুদানের পরিমাণ অবশ্য দেড় লক্ষই থাকছে।
মাসিক ভাতাও বাড়ানো হচ্ছে। এত দিন ধরা দেওয়া মাওবাদীরা মাসে দু’হাজার টাকা ভাতা পেয়ে আসছিলেন। তিন বছর সংশোধন শিবিরে রেখে তাঁদের ওই ভাতা দেওয়া হচ্ছিল। বিভিন্ন হাতের কাজে প্রশিক্ষণ দিয়ে তিন বছর পরে ব্যাঙ্ক-ঋণের সংস্থান করার প্রতিশ্রুতিও ছিল। সংশোধিত প্যাকেজে এর সঙ্গে সরকারি চাকরি (হোমগার্ড, ভিলেজ পুলিশ, পুলিশ-সহ পঞ্চায়েত বা সরকারি সংস্থায়) পেতে সাহায্য করার কথা বলা হচ্ছে। এবং দু’হাজারের জায়গায় প্রথম তিন বছর মাসিক ভাতার অঙ্ক বেড়ে হচ্ছে চার হাজার। পুরনো প্যাকেজে অস্ত্র-সহ ধরা দিলে কিছু বাড়তি টাকা মিলত। ফলে অস্ত্রহীন মাওবাদীরা আত্মসমর্পণে উৎসাহবোধ করছিলেন না বলে কেন্দ্র খবর পেয়েছে। নতুন প্যাকেজে এই ঘাটতি পূরণে যেমন নজর দেওয়া হয়েছে, তেমন অস্ত্র-সহ আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রেও বাড়ানো হচ্ছে হাতিয়ারপিছু ইনামের টাকা।
কেন্দ্র চাইছে, সব মিলিয়ে এক জন আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিকে যে অর্থসাহায্য দেওয়া হবে, এবং তাঁর জন্য যে পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে, তাতে যেন তিন বছর ধারাবাহিক সংশোধনের পরে তাঁরা আর জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার কথা না ভাবেন। নতুন প্রকল্পে আর্থিক দায়ভার থেকে মুক্তি পাওয়ায় রাজ্য সরকারও খুশি।
“প্যাকেজের পুরো আর্থিক দায় কেন্দ্র নিয়ে নেওয়ায় আমাদের সুবিধে হয়েছে। তবে যাঁরা ইতিমধ্যে আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁদেরও মাসিক ভাতা বাড়াতে দিল্লিকে অনুরোধ জানানো হবে।” বলেন রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা।

সমর্পণের ইনাম
কোন ক্ষেত্রে যা ছিল যা হল
এককালীন ১.৫ লক্ষ ২.৫ লক্ষ
মাসিক ভাতা ২ হাজার ৪ হাজার
এলএমজি বা স্নাইপার রাইফেল ২৫ হাজার ৩৫ হাজার
পিস্তল, রিভলভার ৩ হাজার ১০ হাজার
একে-৪৭, ৫৬ ১৫ হাজার ২৫ হাজার
*সব অঙ্ক টাকায়


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.