নিছক খেলা নয়, ফুটবলের মক্কায়
এ এক সেতু-নির্মাণ

কোনও ফিল্মি ‘সিন’ নয়। নিছক খেলাও নয়। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে এ হল সেতু-নির্মাণ। অভিষেক বচ্চনের প্রস্তাবটা পেয়ে বাঙালির বুম্বাদা তা-ই লুফে নিয়েছেন।
মুম্বই-তারকাদের ‘অল স্টারস ফুটবল ক্লাব’ (এএসএফসি)। কিছু দিন আগে দিল্লিতে কোহলি-ধোনি-যুবিদের সঙ্গে ম্যাচ খেলেছিল তারা। এ বার তাদের পছন্দ, কলকাতা। প্রসেনজিৎ শোনামাত্র বলে উঠেছেন, “ঠিক জানতাম, তোমাদের কলকাতায় আসতেই হবে! ফুটবল খেলছ আর কলকাতায় আসবে না, তা কী হয়!” অভিষেক এক গাল হেসে বলেছেন, “এ দেশের ফুটবলের মক্কা কলকাতা। ওখানে খেলতে পারব বলে আমরাও খুব খুশি।” সম্প্রতি জুহুতে অভিষেকের বাংলো ‘জনক’-এ প্রসেনজিতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাঁর। তার পরই ফেসবুকে এএসএফসি-র পাতায় ঘোষণা, ‘আমরা ফিরে আসছি। এ বার কলকাতায়, ২৯ জুন। নজর রাখুন, আসন্ন ম্যাচের আরও খবর ক্রমশ প্রকাশ্য’।
ভক্তদের ‘লাইক’ পড়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চলছে আর এক তোড়জোড়। সল্টলেক স্টেডিয়ামে মুম্বইয়ের তারকা দলের সঙ্গে ৯০ মিনিট টক্কর দিতে তৈরি হয়েছে টলিউডের ‘সেলিব্রিটি ফুটবল ক্লাব’ (সিএফসি)। ঝটপট প্রস্তুত ক্লাবের লোগো, জার্সির নকশা। নীল-সাদা জার্সির বুকে ইয়াব্বড় হাঁ করে বাংলার বাঘ। আইএফএ রেফারি দেবে। দলের মেন্টর-কাম-খেলোয়াড় হতে এক কথায় রাজি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কথা চলছে ‘মিঠুনদা’র সঙ্গে। জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একটা ‘থিম সং’ও নামাচ্ছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় কান চলচ্চিত্র উৎসবে উড়ে যাওয়ার আগে ইভেন্ট ম্যানেজারদের সঙ্গে বুম্বাদাকে এ সবও দেখে যেতে হয়েছে। দেখতে দেখতে, তাঁর দু’চোখে বারবার ভেসে উঠেছে ৩৪ বছর আগের এক দুপুর।

১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। ইডেন গার্ডেন্সের
প্রীতি-ম্যাচে উত্তমকুমার ও দিলীপকুমার।—ফাইল চিত্র
ইডেন গার্ডেন্স। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। ’৭৮-এর বন্যার পরে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বন্যা ত্রাণ তহবিলের সাহায্যার্থে সে-বার বাইশ গজের টক্করে নেমেছিল উত্তমকুমার ও দিলীপকুমার-বাহিনী। প্রবীণ শিবাজি গণেশন ছিলেন। মধ্যগগনের অমিতাভ, জিতেন্দ্র, বিনোদ খন্না, বিনোদ মেহরা, তরুণ মিঠুন, প্রেম চোপড়া, সুজিতকুমারদের হিসেব নিচ্ছেন সৌমিত্র, শুভেন্দু, অনুপকুমার, রঞ্জিত মল্লিক, দীপংকর দে। সবুজ গালচেয় ঝলসাচ্ছেন রেখা, পরভিন ববি, বিন্দিয়া গোস্বামীরা।
টলিউডের আর এক নবাগতও সে-দিন ব্যাটিং পেয়েছিলেন। তখন সদ্য ‘দুই পৃথিবী’তে উত্তম কুমারের তরুণ বয়সের চরিত্রটি তিনি করেছেন। বাবা বিশ্বজিৎই ছেলেকে অমিতাভের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। এত বছর বাদে মুম্বই-বাংলা তারকাদের ফুটবল যুদ্ধের আগে প্রসেনজিতের কাঁপা-কাঁপা স্বর, “একটু নস্টালজিক আমি হতেই পারি, এত বছর বাদে ফের মুম্বইয়ের সঙ্গে খেলা...আমি ক্যাপ্টেন, আর অমিতাভের ছেলে ওদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।” প্রসেনজিতের কাছে পুরনো ক্রিকেট ম্যাচটার কথা শুনে অভিষেকও বাবার অ্যালবামে ওই ম্যাচের ছবি দেখার কথা বলেছেন।
কলকাতার প্রতি বচ্চন পরিবারের দুর্বলতার কথা নতুন করে বলার নেই। বিগ বি পুত্রকে প্রায়ই বলে থাকেন, মন খারাপ হলেই এক বার কলকাতা ঘুরে আসা ভাল। অভিষেক নিজেও সরাসরি বলছেন, “কলকাতার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা তো পারিবারিক। বাবা তো ওই শহরে থাকতেন!” এই কলকাতা-প্রেমে বাড়তি মাত্রা জুড়ছে অভিষেক বা রণবীর কপূরদের ফুটবল প্রেম। সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের পরে এ বার ফুটবল ম্যাচ!
তবে সবটাই আবেগ নয়। শুধু বাংলা-মুম্বইয়ের ব্যাপারও নয়! এটাকে দেশের বিনোদন শিল্পের মধ্যে সেতু-বন্ধন হিসেবেও দেখছেন টলিউডের কাপ্তেন। পূর্ব ভারতে বণিকসভা ফিকি-র সম্মেলনের আহ্বায়ক হিসেবে তো টালিগঞ্জের সঙ্গে ও-পার বাংলা বা বিভিন্ন আঞ্চলিক ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে একজোট করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন তিনি।

মুম্বইয়ে অভিষেকের বাংলো ‘জনক’-এ প্রসেনজিৎ।—নিজস্ব চিত্র
ভারতীয় সিনেমার ১০০ বছরে কলকাতায় তারকাদের ফুটবল যুদ্ধের মধ্যেও আসলে সেই মেলবন্ধনের কাজটা জারি রাখতে চান প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, “বাংলাদেশের শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওড়িশার চিত্রতারকাদেরও মাঠে আনার চেষ্টা হচ্ছে।” মাঠে টিভি-ফিল্ম-বিনোদন জগতের তরুণ তুর্কিদের দেখতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো অগ্রজদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। সাদরে স্বাগত টলিউড-বলিউডের নারী-বাহিনী। ফুটবলার থেকে অতিথি-তালিকা শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে। ম্যাচের সংগৃহীত অর্থ শিল্পী-কলাকুশলীদের সংগঠন, প্রাক্তন ফুটবলারদের সহায়তা থেকে শুরু করে এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের চিকিৎসায় খরচ করা হবে। মুম্বই তারকারা যেমন তাঁদের এই শখের ফুটবল ‘মানবতার জন্য খেলা’কে নানা সমাজসেবামূলক উদ্যোগে কাজে লাগান।
তবু একে আর পাঁচটা ‘চ্যারিটি ম্যাচ’-এর মতো শুধুই মজা ভাবাটা ভুল হবে, বলছেন টলি-তারকারাই। কারা ভাল খেলেন বাছাই করে রীতিমতো প্র্যাকটিস করে মাঠে নামার কথা ভাবছেন তাঁরা। আসলে জেতার জন্য সকলেই ভেতরে ভেতরে মরিয়া থাকেন। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না। ফেসবুকে নিজেদের পেশাদার দল বলে দাবি করে এএসএফসি-র অভিষেক, রণবীর, ডিনো মোরিয়াদের ছবির কঠিন শরীরী ভাষাও সেটাই বলে দিচ্ছে।
প্রসেনজিতের টিমও ঠিক করে ফেলেছে, দেব-পরম-আবির-সৃজিতরা তো খেলবেনই। মুম্বইয়ের বাঙালি-ব্রিগেডের প্রীতম-শান-সুজিত সরকার-সুজয় ঘোষদের অধিকারও তারা ছাড়বে না। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে এক প্রস্থ ঠান্ডা লড়াইও শুরু হয়ে গিয়েছে।
মিঠুন-প্রসঙ্গ উঠতে প্রতিপক্ষের ক্যাপ্টেনকে অভিষেকের প্রশ্ন, ‘‘মিঠুনদা আপ কে লিয়ে খেলেঙ্গে?’’ বুম্বাদা-র জবাব, “মিঠুনদা বাংলার সবার কাছে অভিভাবকপ্রতিম!” ব্যস!
কিক-অফের এক মাসেরও বেশি বাকি। যুদ্ধং দেহি হাওয়া কিন্তু বইতে শুরু করেছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.