বিনোদন মন্ত্রীর কুর্সি সামলেও ফের
নাটক, সিনেমার মতো

কালে উঠে কোনও প্রভাতী অনুষ্ঠান থাকলে সেখানে যাওয়া। সপ্তাহে সোম-মঙ্গল-বুধ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যাওয়া। তার পর সেই ওয়ার্ডে নেতা-কাউন্সিলরদের নিয়ে রাজনৈতিক বৈঠক। সেখানে থেকে সটান নিজের দফতরে। বিকেলে বেরিয়ে সান্ধ্য ব্যস্ততা সামলে কখনও শুটিং, কখনও রিহার্সাল। লেখালিখির কাজ থাকলে গভীর রাতে কলম নিয়ে বসা।
শিক্ষামন্ত্রীর রোজনামচা।
মন্ত্রী হওয়ার পর মঞ্চ এবং পর্দার সঙ্গে যোগাযোগ কখনওই ছিন্ন হয়নি পুরোপুরি। ‘কন্যাদান’ আর ‘রুদ্ধসঙ্গীতে’র অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্রাত্য বসু। পাশাপাশি হেমলক সোসাইটি, মুক্তধারা, বালুকাবেলা ডট কম-এর মতো ছবি। শুক্রবার মুক্তি পেল ‘মহাপুরুষ ও কাপুরুষ’। মুখ্য চরিত্রে ব্রাত্য। আগামী ২২ তারিখ নামছে তাঁর নতুন নাটক ‘সিনেমার মতো’, তাতেও মুখ্য ভূমিকায় তিনি।
বলিউড-টলিউডের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীকেই বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে আসতে দেখা গিয়েছে। বিধায়ক-সাংসদও হয়েছেন অনেকে। কিন্তু আস্ত একটা মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব সামলে মঞ্চের কাজ? তাও একাধারে নাট্যকার-পরিচালক-অভিনেতার ভূমিকায়? উদাহরণ প্রায় নেই বললেই চলে।
কিন্তু অনেককেই যেটা অবাক করছে, সেটা হল, লেখা-আঁকা-গান গাওয়া এগুলো একা মানুষের কাজ। সিনেমা বা নাটকের কাজটা অনেকে মিলে করার কাজ। শারীরিক পরিশ্রমও অনেক বেশি। সেটা কী করে সামলাচ্ছেন ব্রাত্যবাবু? “হয়ে যায়। সব কিছু আগে থেকে সময় মেপে করি তো!” বলছেন তিনি। প্রশাসনিক মহলের খবর, কলকাতায় থাকলে এ পর্যন্ত এক দিনও দফতরে অনুপস্থিত থাকেননি শিক্ষামন্ত্রী।
‘সিনেমার মতো’ নাটকের একটি দৃশ্য।
অভিনেতা ব্রাত্যর বিপুল এনার্জির কথাই বারবার বলছেন ‘মহাপুরুষ ও কাপুরুষ’-এর পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ও। গল্পের প্রয়োজনেই ২২ দিনের শু্যটিং শিডিউলে ১৭ দিন সন্ধেয় শু্যটিং ছিল। “ব্রাত্য আমাকে একটাই অনুরোধ করেছিলেন, ওঁকে যেন একটু পরের দিকে কল টাইম দেওয়া হয়।” এবং “কোনও দিন সময় ‘মিস’ করেননি। একটা দিন শুধু মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ বৈঠকের জন্য দেরি হয়েছিল। আগে থেকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিলেন।” কিন্তু শু্যটিং তো শিডিউল ফুরোলে শেষ। নাটক পরিচালনা এবং রিহার্সাল আরও অনেক বেশি সময়সাপেক্ষ। অভিনয় নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার দায়ও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে?
সেটাও সামলে নেওয়ার মতো দক্ষতা কারও কারও থাকে বলে জানাচ্ছেন মনোবিদরা। মনোবিদ জ্যোতির্ময় সমাজদারের কথায়, “একই সঙ্গে বহু দিক সামলানোর দক্ষতা বেশি দেখা যায় মহিলাদের মধ্যে। আবার কোনও একটা দিক অবহেলিত হয়ে যেতে পারে, এই আতঙ্কটাও বেশি তাড়া করে তাদের। পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত তা হয় না। যাঁদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব এবং পেরিয়েটাল লোব-এর মধ্যে যোগাযোগ বেশি সক্রিয়, তাঁরাই মাল্টি-টাস্কার হন।”
বর্তমান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় নয়ের দশকের একেবারে শুরুতে অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘চৌধুরী ফার্মাসিউটিক্যালস’ নামে একটি দূরদর্শন ধারাবাহিকে অভিনয় করতেন। কিন্তু তখন তিনি মন্ত্রী ছিলেন না। বাম আমলের দমকলমন্ত্রী প্রতিম চট্টোপাধ্যায় একটি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। বর্তমান সরকারের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রও একটি ছবি করছেন। কিন্তু সে সবই শখের অভিনয়। সুব্রতবাবু বলছেন, “ন্যাড়া বেলতলায় এক বারই যায়। আমি বাড়িতেও বলেছিলাম, রাজীব গাঁধীকেও জানিয়েছিলাম, ‘‘এই প্রথম, এই শেষ!’’ কেন? “রাজনীতিই বলুন আর অভিনয়ই বলুন, দু’টোই ফুল-টাইম কাজ। একটার সঙ্গে আর একটা করা যায় না!’’
দক্ষিণের তারকা-রাজনীতিকরা অবশ্য রাজনৈতিক দায়দায়িত্ব সামলেই চুটিয়ে সিনেমা করতেন। সিনেমাই ছিল তাঁদের রাজনৈতিক ভাবমূর্তি তৈরির রসদ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্রবিদ্যার শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, “অন্ধ্রে এন টি রাম রাও বা তামিলনাড়ুতে এম জি রামচন্দ্রন সিনেমাকে কাজে লাগিয়েই নিজেদের জনভিত্তি তৈরি করেছেন। এনটিআর পর্দায় দেবতা সাজতেন, মানুষও ওঁকে ভগবানই মনে করত। এমজিআর-ও পর্দায় ছিলেন সব রকম সঙ্কটের পরিত্রাতা। সেই ইমেজ ধরে রেখেই উনি রাজনীতি করতেন।” এমজিআর মুখ্যমন্ত্রী হন ১৯৭৭ সালে। ১৯৭২-৭৭ নিজের দল এআইএডিএমকে তৈরি করে প্রচার চালানোর পাশাপাশি প্রায় ২০টা ছবি করেছিলেন তিনি!
ব্রাত্যকে জিজ্ঞেস করলে বলছেন, ‘‘আমার তো রাজনৈতিক অতীত সে ভাবে নেই। থিয়েটারের অতীতই আছে।” মন্ত্রী হওয়ার পরে ‘চার অধ্যায়’-এর নাট্যরূপ দিয়েছিলেন। মৌলিক নাটক এই প্রথম। মূলত সত্তরের শেষ থেকে বাংলা সিনেমার গতিপ্রকৃতি নিয়ে এই নাটকটা ডিসেম্বর-জানুয়ারি মিলিয়ে ১৭ দিনের মধ্যে লিখে ফেলেছিলেন। রোজ টানা রাত ১২টা থেকে ৪টে অবধি লেখা চলত। “আসলে কী জানেন, প্রশাসনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যা কিছু করি, সে সবই অন্যের সঙ্গে কথা বলা। নিজের সঙ্গে কথা বলতে পারছি কি না, সেটা দেখার ছিল। লিখতে ভুলে যাচ্ছি না তো, এই ভয়টা খুব করত!” কিন্তু পরের দিন দফতরের কাজ সামলাতে গিয়ে লেখার কথা মাথায় ঘুরত না? “হ্যাঁ, হঠাৎ হয়তো একটা কিছু মাথায় উঁকি দিল। নিজেকে বোঝাতাম, এখন নয়। রাতে গিয়েই তো লিখতে বসব!”
‘সিনেমার মতো’ নাটকে ব্রাত্যর চরিত্রটা এক মদ্যপ যুবকের। শিক্ষামন্ত্রীর ইমেজে দাগ পড়বে না? ব্রাত্যর জবাব, “মঞ্চে আমি শুধু অভিনেতা। দর্শকও আশা করি সেটাই মনে রাখবেন। তার পরেও যদি ইমেজের ক্ষতি হয় তো হোক!’’

রণবীর-দীপিকা জুটি নিয়ে আশাবাদী
চলতি মাসের শেষেই মুক্তি পেতে চলেছে দীপিকা পাড়ুকোন ও রণবীর কপূর অভিনীত ছবি ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি।’ ছবিটিতে প্রাক্তন প্রেমিক রণবীর কপূরের সঙ্গে একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন দীপিকা। শনিবার ছবিটির প্রচার সংক্রান্ত এক সাংবাদিক বৈঠকে রণবীরের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাওয়া হলে দীপিকা বলেন “আমরা একে অপরের পরিপূরক। পর্দায় বেশ ভালই মানায় আমাদের।” তবে দীপিকার মত, ব্যক্তিগত জীবন ও কাজের জীবন সম্পূর্ণ আলাদা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.