ত্রিফলা বাতিস্তম্ভের পরে হটমিক্স ব্যবহারে অনিয়মের অভিযোগ উঠল কলকাতা পুরসভায়।
তিন বছর ধরে তাদের দু’টি প্লান্টে প্রায় সাত লক্ষ মেট্রিক টন হটমিক্স (পিচ-রাস্তা তৈরির মশলা) তৈরি হয়েছে। কিন্তু কবে, কোথায় তা ব্যবহার হয়েছে, তার হদিস পাচ্ছে না কলকাতার পুর-প্রশাসন। ওই পরিমাণ হটমিক্স তৈরির খরচ প্রায় ২৫৫ কোটি টাকা। ওই বিপুল পরিমাণ হটমিক্স আদৌ ব্যবহার হয়েছে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে পুরসভার পদস্থ আধিকারিকদের মধ্যে।
পুরসভারই অর্থ দফতর এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আর অর্থ দফতরের রিপোর্টের ভিত্তিতে হটমিক্সের দায়িত্বে থাকা ডিজি (মেকানিক্যাল)-কে প্রায় সাত লক্ষ মেট্রিক টন হটমিক্স ব্যবহারের ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ (ইউসি) দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ।
পুরসভার এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, “ওই বিপুল পরিমাণ হটমিক্স আদৌ ব্যবহার হয়েছে কি না, তা নিয়ে অডিট করার নির্দেশ দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত কোনও এক ‘অজ্ঞাত কারণে’ সেই নির্দেশ হজম করতে হয় পুর-প্রশাসনকে।” যদিও পুরসভার অনেকেরই মন্তব্য, হটমিক্সের অনিয়ম ত্রিফলার চেয়েও বড় মাপের। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “অডিটের কোনও ব্যাপার নেই। তা করতেও বলা হয়নি।” তিনি জানিয়েছেন, হটমিক্সের ব্যবহার নিয়ম মাফিক হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করা হয়। এখনও তা হচ্ছে। |
পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের রাস্তা নির্মাণ ও সারাইয়ের কাজে যে হটমিক্স ব্যবহার করা হয়, তা পুরসভার গোরাগাছা ও পামারবাজারের প্লান্টে তৈরি হয়। বাজার থেকে বিটুমিন, পাথরকুচি, বালি কিনে ওই দুই প্লান্টে হটমিক্স তৈরি করা হয়। পুরসভার নথি অনুযায়ী, ২০১০ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০১৩-র মার্চ পর্যন্ত পুরসভার দু’টি প্লান্টে ৭ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৭৭ মেট্রিক টন হটমিক্স তৈরি হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৩৬০০ টাকা। পুরসভার নথি থেকে জানা গিয়েছে, ওই পরিমাণ হটমিক্স তৈরি করতে প্রতি বছর গড়ে ৮৫ কোটি টাকা করে খরচ হয়েছে পুরসভার। কিন্তু ওই হটমিক্স কোন কোন তারিখে, কোন কাজের জন্য, কাদের দেওয়া হয়েছে তার কোনও হিসেব পুরসভায় নেই। এমনকী, ওই হটমিক্সে কত পরিমাণ রাস্তা হয়েছে, তা-ও অজানা।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের ডিজি (মেকানিক্যাল) বলেন, “ওই হিসেব আমাদের কাছে আসার কথা নয়। আমরা শুধুমাত্র মাল সরবরাহ করি। তা দিয়ে কত রাস্তা তৈরি হল, তা বলতে পারব না।”
পুরসভার রাস্তা বিভাগের এক পদস্থ ইঞ্জিনিয়ার জানান, এক মেট্রিক টন হটমিক্সে ১৩-১৪ বর্গমিটার রাস্তা তৈরি করা যায়, যার উচ্চতা হতে পারে চার-পাঁচ ইঞ্চি। ওই ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, এই বিপুল পরিমাণ হটমিক্সে শহরের প্রায় সব রাস্তা ঝকঝকে করা যেত। অধিকাংশ রাস্তার হাল ফেরানো যেত। কিন্তু তা যে হয়নি, শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ঘুরলেই তার প্রমাণ মিলবে হাতেনাতে।
পুরসভার এক মেয়র পারিষদের কথায়, “হটমিক্স নিয়ে গরমিল অনেক কাল ধরেই চলছে। বাম আমলই হোক কিংবা বর্তমান পুরবোর্ড এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেনি কেউ-ই।”
তৃণমূল পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে বার তিনেক ওই দফতর হাতবদল হয়েছে। মাসখানেক আগে ১০৭ নম্বরের কাউন্সিলর সুশান্ত ঘোষ মেয়র পারিষদ (রাস্তা)-এর দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “ওই হটমিক্সে গত তিন বছরে কত পরিমাণ রাস্তা তৈরি হয়েছে, তা আমিও জানতে চেয়েছি।” |