বছর দুই আগের কথা। সিডনির মফস্সল শহর ক্রয়ডনে দিনের আলোয় নৃশংস ভাবে খুন হন ভারতীয় ছাত্রী তোশা ঠক্কর। অভিযুক্ত তাঁরই প্রতিবেশী, বছর উনিশের এক অস্ট্রেলীয় যুবক। ধর্ষণের অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। শুক্রবার সেই মামলার রায় শোনাল নিউ সাউথ ওয়েলস সুপ্রিম কোর্ট। ৪৫ বছরের কারাদণ্ড পেয়েছে ওই অস্ট্রেলীয়। প্যারোলের আবেদন জানাতেও তাকে অন্তত ৩০ বছর কাটাতে হবে জেলে।
তোশা ঠক্কর |
অস্ট্রেলীয় পুলিশ জানিয়েছে, অপরাধীর নাম ড্যানিয়েল স্ট্যানি-রেজিনাল্ড। ক্রয়ডনের যে বাড়িতে থাকতেন তোশা, সে বাড়িরই অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ছিল ড্যানিয়েল। খুনের বেশ ক’দিন ধরেই ‘ভবিষ্যৎ শিকার’কে নজরে রাখছিল সে। অপেক্ষা ছিল সুযোগের। সেটাও এসে গেল ২০১১ সালের ৯ মার্চ। তোশার ‘রুমমেট’ ঘর থেকে বেরিয়েছেন সবে মাত্র। তার পর বাথরুমে ঢোকেন তোশা। সেখান থেকে বেরোনোর সময়ই তাঁর উপর চড়াও হয় ড্যানিয়েল। প্রথমে তাঁকে ধর্ষণ করে ও নানা রকম শারীরিক নির্যাতন চালায়। তার পরে মোটা তার দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তোশাকে। সব শেষে বছর চব্বিশের ওই ছাত্রীর দেহ স্যুটকেসবন্দি করে চেপে বসে ট্যাক্সিতে। এর পর সিডনির মেডোব্যাঙ্ক-এর একটি খালে তোশার দেহ ভাসিয়ে দেয়।
দু’দিন পর স্থানীয় তেলের লাইন মেরামতির কর্মীরা দেহ খুঁজে পান। পুলিশ জানিয়েছে, অ্যাকাউন্ট্যান্সির ছাত্রী তোশার রহস্যজনক-মৃত্যু নিয়ে যখন তাঁর বয়ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ, তখনও ঠান্ডা মাথায় তাঁর সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে গিয়েছে ড্যানিয়েল। পুলিশের ধারণা, তোশাকে পরিকল্পনা করেই খুন করেছিল ড্যানিয়েল। এবং সেই অপরাধের পরও ড্যানিয়েলের মনে কোনও অপরাধবোধ তৈরি হয়নি।
আদালতও এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে। পুলিশি তদন্তে পরিষ্কার, হত্যার কিছু দিন আগে থেকেই নানা ওয়েবসাইটে ‘সিরিয়াল কিলারদের’ বিষয়ে পড়াশোনা করছিল ড্যানিয়েল। দেখতে শুরু করেছিল ভারতীয় মহিলাদের নিয়ে তৈরি হওয়া পর্নও। পুলিশের ধারণা, হত্যার প্রশিক্ষণ-প্রস্তুতি-শিক্ষা সব কিছুই ছিল তার। আর সেই শিক্ষাক্রমে প্রথম ‘পরীক্ষা’ ছিল তোশা-হত্যা। পরীক্ষায় ‘উত্তীর্ণ’ হয়ে ৪৫ বছরের কারাবাসের ‘পুরষ্কার’ পেয়েছে ড্যানিয়েল। তাতেও অবশ্য সে একই রকম ভাবলেশহীন। |