স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে শ্রীসন্ত জড়িত! খবরটা সকালে টেলিভিশনে বলামাত্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল গোটা কেরল। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ছিল“এ হতে পারে না। আমাদের ছেলেকে ষড়যন্ত্র করে কলঙ্কিত করা হচ্ছে।’’ যে ছবিটা দিনের শেষে অবশ্য অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে।
সকালে শ্রীসন্তের বাবা শান্তাকুমারন নায়ার, মা এবং জামাইবাবু টিভি বুমের সামনে তাঁদের ছেলে ‘নির্দোষ’ দাবি করে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আর হরভজন সিংহের দিকে আঙুল তোলায় প্রাথমিক অবিশ্বাসের সুরটা আরও চড়া হয়েছিল। এর উপরে শশী তারুর এবং কেরল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব টি সি ম্যাথুজও বিবৃতি দেন, “শ্রীসন্ত গ্রেফতার হলেও যতক্ষণ না ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে, ততক্ষণ ও আমাদের চোখে নির্দোষই।” এতে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়তে থাকে এসএমএসগুলো‘শ্রীসন্তকে ফাঁসানো হয়েছে’... ‘দুর্ভাগ্যজনক, আমাদের শ্রী ষড়যন্ত্রের শিকার।’ এখানকার স্থানীয় নিউজ চ্যানেলগুলোয় সারা দিন একটাই চর্চা শ্রীসন্ত। পাড়ায়-পাড়ায়, রাস্তার মোড়ে জটলা করে দিনভর শুধু এই নিয়েই আলোচনা করেছেন কেরলবাসী। সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজ ছিল শ্রীসন্তের নিজের শহর কোচিতে। |
কিন্তু দিন যত গড়িয়েছে এবং কেরলের অন্যতম জাতীয় নায়কের ভূমিকা স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে যত বেশি বেরিয়ে এসেছে, ততই অবিশ্বাসের চড়া সুরটা মিইয়ে গিয়ে তার জায়গায় জমাট বেঁধেছে ‘হতেও পারে’ গোছের হতাশা। এমনকী ভারত অধিনায়ক ও হরভজনের বিরুদ্ধে তোলা তাঁদের অভিযোগ নিয়ে শ্রীসন্তের বাবা-মা গোটা দেশের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন।
আর এই পট-পরিবর্তনের পিছনে মুখ্য চরিত্রের নাম জিজু। তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া বুকিদের মধ্যে থাকা জিজু শুধু শ্রীসন্তের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠই নন। দু’জনের মধ্যে পারিবারিক সম্পর্কও রয়েছে। জন্মসূত্রে মালয়লী হলেও জিজু বড় হয়েছেন গুজরাতে। নিজেও ক্রিকেটার। শোনা যাচ্ছে জিজুকে জাতীয় দলে খেলানোটা নাকি শ্রীসন্ত একটা সময় চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলেন। মূলত শ্রীসন্তের চেষ্টাতেই কেরলের অনূর্ধ্ব-২৫ দল পর্যন্ত খেলেন অলরাউন্ডার জিজু। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও শ্রীসন্ত দূরসম্পর্কের এই আত্মীয়কে রঞ্জি দলে ঢোকাতে পারেননি। জিজু ফিরে যান গুজরাতে। কোচিতে বলা শুরু হয়েছে, জিজুকে টাকা পাইয়ে দিতেই স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়েছেন শ্রীসন্ত। যে তত্ত্বের পিছনে যুক্তি হল, স্পট ফিক্সিংয়ে কেরলের টেস্ট ক্রিকেটার যে টাকা নিয়েছেন, তার অঙ্কটা। কেরলবাসী একটা ব্যাপারে প্রায় একমত যে, মাত্র চল্লিশ লাখ টাকার জন্য নিজের টেস্ট কেরিয়ার বাজি রাখতে পারেন না শ্রীসন্ত। লোভে পড়ে এই কাজ তিনি করেননি। বরং জিজুর জন্যই টাকাটা এ ভাবে তুলে দিতে রাজি হয়েছিলেন! |
|
শ্রীসন্ত এখন চরম লজ্জাজনক কার্টুনের বিষয়। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের ‘হট টপিক’ হয়ে উঠেছে হরভজনের হাতে শ্রীসন্তের চড় খাওয়ার এই কার্টুন। যেখানে ভাজ্জি বলছেন, “আমি তো কবেই থাপ্পড় মেরে দিয়েছিলাম।” |
শ্রীনিবাসন (বোর্ড প্রেসিডেন্ট) |
...আমি স্তম্ভিত! ভারতীয় বোর্ডের কাছে ধাক্কাটা আরও বড়, কারণ এমন কিছু ঘটতে পারে, সেটা আমরা কল্পনাও করিনি। সবচেয়ে দুঃখ হচ্ছে দেখে যে, যারা স্পট ফিক্সিং করেছে তারা প্রত্যেকে রঞ্জি ট্রফি প্লেয়ার। এক জন তো দেশের হয়ে টেস্ট ম্যাচও খেলেছে। তবে ভারতীয় বোর্ড ক্রিকেটে দুর্নীতি বিন্দুমাত্র বরদাস্ত করে না। পুলিশের কাছ থেকে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্তদের সাসপেন্ড করেছে বোর্ড। এটাও মানি না যে, আইপিএল বন্ধ করে দেওয়া উচিত। দু’একটা পচা ডিমের জন্য ডিমের গোটা ঝুড়িটাকেই কলঙ্কিত বলা যায় না। |
ললিত মোদী (অপসারিত আইপিএল কমিশনার) |
...আইসিসি জেগে জেগে ঘুমোচ্ছে। বিসিসিআই এবং আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জেগে জেগে ঘুমোচ্ছে। ক্রিকেট প্রশাসকেরা জেগে জেগে ঘুমোচ্ছেন। আমার সবচেয়ে আশ্চর্য লাগছে দেখে যে, এ বারের আইপিএল প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু না আইসিসি, না এসিইউ, না ভারতীয় বোর্ড, না আইপিএল কমিটি কারও কাছে এই টুর্নামেন্টের স্পট ফিক্সিং নিয়ে কোনও খোঁজখবরই ছিল না। আসলে বিশ্ব ক্রিকেটের শক্তিকেন্দ্রের বদল ঘটে গিয়েছে। সব কিছু এখন চালিত হচ্ছে চেন্নাই থেকে। তবে সরকারেরও উচিত এ দেশে বেটিংকে আইনসিদ্ধ করে দেওয়া। |
আইসিসির বিবৃতি |
বিসিসিআই এবং দিল্লি পুলিশকে এই ঘটনার তদন্তে সব রকম সহায়তা করবে আইসিসি। দুর্নীতির অভিযোগে বিসিসিআই তিন ক্রিকেটারকে নির্বাসনের যে শাস্তি দিয়েছে তাতেই পরিষ্কার আইসিসি এবং তাঁর সদস্যরা দুর্নীতি নিয়ে কতটা কঠোর। |
|