হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে, এ এক অন্য জগৎ! চব্বিশ ঘণ্টা আগে ফুটবলারদের বকেয়া বেতন মেটানো নিয়ে যেখানে তুমুল ডামাডোল হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সাত-সকালে সেই মোহনবাগান তাঁবুতে দেখা গেল ‘ওম শান্তি ওম’! বিদ্রোহের কোনও আঁচ নেই। বরং ফুটবলারদের বহিরঙ্গে যেন ঐক্যবদ্ধতার গন্ধ লেপ্টে। ফুরফুরে মেজাজ আর হাসি-ঠাট্টায় ভরা।
বহিরঙ্গে যাই থাকুক, অন্দরমহলে কি বকেয়া টাকা না পাওয়ার বহিঃপ্রকাশ হয়নি? হয়েছে। এবং তার প্রভাব এতটাই তীব্র যে, সাত-সকালে সব কাজ ফেলে দুই কর্তা সহ-সচিব সৃঞ্জয় বসু ও অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত বাগান তাঁবুতে হাজির সমাধান সূত্রের খোঁজে। করিমচাচার ক্লাস শেষ হতেই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন দু’জনে। তার পর দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ম্যারাথন বৈঠক।
কী আলোচনা হল সেখানে? বুধবার বিকেলে ওডাফারা সাফ জানিয়ে দেন, বকেয়া চার মাসের টাকা না পেলে তাঁরা মাঠে নামবেন না। তড়িঘড়ি সেই রাতেই প্রেসিডেন্ট টুটু বসুর হস্তক্ষেপে এক মাসের টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয় ফুটবলারদের। যা দিয়ে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচের আগে কোনও রকমে ফুটবলারদের ঠেকিয়ে রাখা গেলেও, ক্ষোভের আগুন পুরোপুরি নেভানো যায়নি। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তারা আশ্বাস দেন, ২৩ মে-র ডার্বি ম্যাচের আগেই বকেয়া সব টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে। |
অর্থ সচিব বললেন, “আমাদের দুই সহকারী স্পনসরের থেকে এখনও টাকা পাইনি। তবু ফুটবলারদের কিছু টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে বাকিটাও মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
কর্তাদের আশ্বাস পেলেও, বাগানের ডামাডোলের আঁচ কি শুক্রবারের প্রয়াগ ইউনাইটেড ম্যাচে পড়বে না? খুব নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। তার উপর চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে মোহনবাগানকে টিকে থাকতে হলে, র্যান্টি মার্টিন্সদের আজ হারাতেই হবে। এর মধ্যে আবার রহিম নবি ও স্নেহাশিস চক্রবর্তীর চোট। বাগান কোচের যুক্তি, “আমরা এখন এ রকম পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি। গত তিন-চার মাস ধরে তো সব ম্যাচই আমাদের কাছে মরণ-বাঁচন ম্যাচ।” ওডাফা কিন্তু বলে গেলেন, “আমরা মানসিক ভাবে খুব ক্লান্ত।”
মোহনবাগানের মতো র্যান্টিদের টিমও স্বস্তিতে নেই। চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পরের মরসুমের দল গঠন নিয়ে টানাপোড়েনে ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তারা। কার্লোস হার্নান্ডেজের চোট। মরসুম শেষ হওয়ার আগেই বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরে গেলেন। করিম অবশ্য বিপক্ষকে দুর্বল ভাবতে নারাজ, “কার্লোস না থাকলেও, প্রয়াগ শক্তিশালী দল। তিন পয়েন্ট পাওয়াটা খুব সহজ হবে না।” এ দিকে অভিনব এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন র্যান্টি-সহ ইউনাইটেড সব ফুটবলার। আই লিগ থেকে পাওয়া ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কারের সব টাকা তারা তুলে দেবেন ক্যানসার আক্রান্ত একটি ছেলের চিকিৎসার জন্য। আগরপাড়ার সেই শৌভিক দে-র হাতে তুলে দেওয়া হবে প্রায় সত্তর হাজার টাকা। মহৎ উদ্যোগ সন্দেহ নেই।
র্যান্টিদের আটকাতে ফুটবলারদের ভিটামিন ‘এম’ দিয়েছেন মোহন-কর্তারা। এখন দেখার, শুক্রবার কল্যাণীতে সেটা আদৌ কাজে আসে কি না! |