সম্পাদকীয় ১...
মধ্যপথে
লিকাতা হাইকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি যখন কার্যভার গ্রহণ করিয়াছিলেন, তখন তাঁহার কথায় ও কাজে এই আশা জাগ্রত হইয়াছিল যে, বিচারের গতি ত্বরান্বিত হইবে। তিনি আদালতে অতিরিক্ত ছুটির প্রচলনে একাধিক বার বিরাগ জানাইয়াছেন। আইনজীবীরা বিভিন্ন উপলক্ষে রীতি মাফিক কর্মবিরতি চাহিলে তিনি আপত্তি করিয়াছেন, ক্ষেত্রবিশেষে সেই আপত্তিতে কাজও হইয়াছে। সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়াছিল, কলিকাতা হাইকোর্ট সময় নষ্ট না করিয়া দ্রুত কাজ করিবার এক নূতন ধারা চালু করিতেছে, সমগ্র দেশের নিকট যাহা দৃষ্টান্তস্বরূপ হইয়া উঠিবে। বুধবার সেই প্রত্যাশায় এক বড় আঘাত পড়িল। সারদা সংক্রান্ত মামলা হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ হইতে অন্য একটি বেঞ্চে স্থানান্তরিত হইয়াছে। পূর্ববর্তী বেঞ্চের অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রধান বিচারপতি এবং তিনি জানাইয়াছেন, তিনি অনুপস্থিত থাকিবেন বলিয়াই এই বেঞ্চ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তে মামলার প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত হইবার আশঙ্কা প্রবল। ইতিমধ্যে পূর্ববর্তী বেঞ্চে বিচারপ্রক্রিয়া চলিয়াছে। সেই দিনগুলি কার্যত মহাকালের গর্ভে চলিয়া গেল। ইহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতির নিশ্চয়ই সঙ্গত কারণ রহিয়াছে। কিন্তু তাঁহার প্রতি তথা আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকিয়াই প্রশ্ন করা যায়, এই অনুপস্থিতির সম্ভাবনা পূর্বাহ্ণে বিচার করিয়া সেই অনুসারে মামলার দায়িত্ব বণ্টনই কি যুক্তিযুক্ত হইত না? তাহাতে এই কয় দিনে অন্য মামলার কাজ অগ্রসর হইতে পারিত, এই মামলাটিও অন্য কোনও বেঞ্চে চলিতে পারিত।
ভারতে সুবিচারের সমস্যা অনেক। আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য হইতে শুরু করিয়া প্রশাসনের অনাচার, বিশেষত দলীয় রাজনীতির কুপ্রভাব গভীর এবং ব্যাপক। কিন্তু তাহার বাহিরেও একটি অতি বৃহত্‌ প্রশ্ন থাকিয়া যায়। বিলম্বিত বিচারের প্রশ্ন। বিচারের দেরি হইলে তাহা অবিচারের শামিল এই কথাটি যদি তাহার আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা হয় তবে মানিতেই হইবে ভারতে অবিচারই নিয়ম, (অ-বিলম্বিত) বিচার নিতান্ত বিরল। সুপ্রিম কোর্ট এবং বিভিন্ন হাইকোর্টের বিচারপতিরা এই বিষয়ে বারংবার উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছেন, কী ভাবে বিচারপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা যায়, তাহার উপায় খুঁজিয়াছেন, সেই বিষয়ে পরামর্শ এবং নির্দেশ দিয়াছেন। দ্রুত বিচারের জন্য আদালতের সামর্থ্য এবং সর্বস্তরে লোকবল বাড়ানো নিশ্চয়ই জরুরি। কিন্তু তাহার পাশাপাশি যে আয়োজনটি আছে, তাহার পূর্ণ সদ্ব্যবহারও অত্যাবশ্যক। অতি সম্প্রতি সর্বোচ্চ আদালত বলিয়াছে, দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে মামলার শুনানি যথাসম্ভব নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চালানো বিধেয়। দ্রুততার মূল্য অপরিসীম।
সেই পরিপ্রেক্ষিতেই কলিকাতা হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তটি বিশেষ ভাবে নৈরাশ্যজনক। বিপুলসংখ্যক মামলা এই আদালতে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। নানা কারণেই বহু মামলা দিনের পর দিন পিছাইয়া যায়। তাহাতে সময় নষ্ট হয়, মূল্যবান সরকারি অর্থও। এই মামলাটি এক বেঞ্চ হইতে অন্য বেঞ্চে স্থানান্তরের ফলেও সরকারি কোষাগার হইতে জনসাধারণের অর্থই ব্যয় হইল, যে ব্যয়ের কোনও ফল মিলিল না। মাননীয় বিচারপতিদের নিকট প্রশ্ন: নিষ্ফল ব্যয়কে অপচয় বলিলে কোনও ভুল হইবে কি? বস্তুত, এই ঘটনাটি এক বৃহত্‌ প্রশ্ন নূতন করিয়া উত্থাপন করে। আদালতের সমগ্র কার্যপদ্ধতির সংস্কার সাধনের প্রয়োজন কি না, বিচারপতিরা তাহা বিবেচনা করিয়া দেখিলে বিচারব্যবস্থার মঙ্গল হয়। বিবিধ উপলক্ষে আদালতে ছুটির বহর কমানো দরকার কি না, বস্তুত বকেয়া মামলার পর্বতটির কথা বিবেচনা করিয়া বছরের প্রতিটি দিন আদালত চালু রাখা যায় কি না তাহা ভাবিয়া দেখা জরুরি। যথেষ্ট যুক্তি না থাকিলে মামলার দিন পিছাইয়া দেওয়া বন্ধ করা যায় কি না, তাহাও বিবেচ্য। এই ধরনের বহু প্রশ্নের উত্তর আন্তরিক ভাবে খোঁজা দরকার। তবে এই প্রশ্নগুলি বৃহত্তর প্রশ্ন। তাহার আগে বোধহয় এই ন্যূনতম নিশ্চয়তাটুকু পাওয়া জরুরি যে, যে কোনও মামলা যথাসম্ভব বাধাহীন ভাবে শেষ করা আদালতের একটি গুরুতর কাজ। সম্পূর্ণ অনিবার্য কারণ ছাড়া একটি মামলা এক বেঞ্চ হইতে মধ্যপথে অন্য বেঞ্চে স্থানান্তরিত হইবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.